Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
successful

সফল মানুষ? সাফল্যও ডেকে আনে বিভিন্ন সমস্যা, কী ভাবে সামলাবেন?

সাফল্যের আনন্দ উপভোগ করার পাশাপাশি তার সমস্যাগুলিও বোঝার চেষ্টা করুন ও কী ভাবে তার সমাধান করবেন, তা বুঝে নিন।

সাফল্যকে সামলাতে না জানলেই সমস্যা ঘিরে ধরে জীবনে। ছবি: শাটারস্টক।

সাফল্যকে সামলাতে না জানলেই সমস্যা ঘিরে ধরে জীবনে। ছবি: শাটারস্টক।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৯ ১৭:২০
Share: Save:

সফল মানুষ। চারপাশে কেবল প্রশংসার দৃষ্টি আর মুগ্ধ চাহনি। কোথাও কোনও ঈর্ষার চোরাস্রোত দেখতে পেলেও সাফল্যের আলো চুঁইয়ে সে সব হিংসাকে খুব একটা তোয়াক্কা করার সুযোগ দেয় না। তা বলে কি সফল মানুষ মানেই চিরসুখী? সব উদ্বেগের ঊর্ধ্বে?

একেবারেই তা নয়। বরং জীবনে এমনিই নানা সমস্যা৷ বিভিন্ন চাপ৷ তার উপর চাটুকারদের দৌলতে সাফল্য মাথায় চড়ে গেলে তো কথাই নেই৷ মানুষ তখন ভাবতে শুরু করেন, তিনি সব জানেন, সব বোঝেন৷ সব কিছুতে শেষ কথা সফল বলে তিনি-ই বলবেন৷ কিন্তু যখন তা হয় না, মরিয়া হয়ে কাজ হাসিল করার চেষ্টা শুরু করেন৷ ফলে অধঃপাতের রাস্তা খুলে যেতে পারে৷ তাতেও কাজ না হলে, কাছের মানুষ ছেড়ে চলে গেলে বা কোথাও হার স্বীকার করতে হলে ভেঙে চুরমার হয়ে যেতে পারেন৷ দেখা দিতে পারে শারীরিক–মানসিক বিপর্যয়৷

মনোচিকিৎসক শিলাদিত্য মুখোপাধায়ের মতে, ‘‘সাফল্যকে মাথায় চড়তে দেবেন না, কারণ এ কোনও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয়৷ আজ সফল আছেন, কাল নাও থাকতে পারেন৷ তখন কিন্তু আর কেউ ফিরে তাকাবে না আর আপনি বিপর্যস্ত হবেন শরীরে–মনে৷ কাজেই সাফল্যের আনন্দ উপভোগ করার পাশাপাশি তার সমস্যাগুলিও বোঝার চেষ্টা করুন ও কী ভাবে তার সমাধান করবেন, তা বুঝে নিন।’’

আরও পড়ুন: বর্ষায় চুল পড়ে খুব, গোড়া ফাটে? এই সব উপায়ে হাতের মুঠোয় সমাধান

সাফল্য যেন সম্পর্কের ক্ষতি না করে।

সাফল্যের সমস্যা

সাফল্যের জায়গাটি ধরে রাখতে যা যা করতে হয়, তাতে ভাল মতো মানসিক চাপ হতে পারে, হঠাৎ সফল হলে তো বিশেষ করে৷ সময়ের অভাবে দরকারি কাজ জমতে থাকে৷ মন বিক্ষিপ্ত হয়৷ দূরত্ব বাড়ে কাছের মানুষদের সঙ্গে৷ তখন বোঝা না গেলেও দুর্বল মুহূর্তে গ্রাস করে একাকিত্ব৷ নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে হয়৷ মনে হয় অন্য সবাইও তাই ভাবুক৷ তার প্রভাব পড়ে সম্পর্কে, কাজের জায়গাতেও৷ চাটুকারদের মনে হয় বন্ধু৷ ফলে আসল বন্ধুরা হারিয়ে যেতে শুরু করে৷ অন্যের প্রবল ঈর্ষার চাপে দিশেহারা হতে হয়৷ স্বামী/স্ত্রী বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে না পারলে সম্পর্কে ভাঙন ধরে৷ চাপ কমাতে ঘুমের ওষুধ বা অন্য কোনও নেশার হাতছানি মন ভোলাতে পারে৷ নিত্যনতুন সম্পর্ক তৈরি হতে পারে৷ তার জেরে দেখা দিতে পারে অপরাধবোধ, সংসারে অশান্তি হতে পারে৷ টান পড়তে পারে ভাবমূর্তিতেও৷ কেরিয়ারে পতনের আভাস পেলে চারপাশ ফাঁকা হয়ে যায়৷ ঘা খায় অহং৷ ডিপ্রেশন, এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতাও আসে অনেকের মধ্যে৷

আরও পড়ুন: ডেঙ্গি বিপদ আসন্ন, অসুখ রুখতে এই সব উপায় আজ থেকেই রপ্ত করুন

সফল হলেও পা থাকুক মাটিতে।

সমস্যার সমাধান

কাজের প্রতি নিষ্ঠা যেন না কমে৷ কেরিয়ারের শুরুতে যতখানি সময় এ বাবদ খরচ করতেন, এখনও প্রায় ততটাই করুন৷ আগে করতেন উপরে ওঠার তাগিদে৷ এখন করবেন নিজেকে উন্নত করার দায়ে৷ শরীর–মন ঠিক রাখতে ডিসিপ্লিন মেনে চলুন৷ সাফল্যের পথে কত দূর এগনো সম্ভব, তা বুঝে সীমারেখা টানুন৷ এর পর বিচার করুন গ্রোথ রেট৷ গত বছর এ সময় কোথায় ছিলেন আর আজ কোথায় পৌঁছেছেন৷ যদি দেখা যায় ধীর গতিতে হলেও এগোচ্ছেন, চিন্তা নেই৷ গ্রোথ রেট কমে গেলে ভাবুন কেন এমন হল৷ কারণ পেলে সমাধান করুন৷ সব সময় পারবেন না৷ তখন মেনে নিন৷ দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে যেতে পারলে সাময়িক এই ব্যর্থতার পর আবার সুদিন আসবে৷ আত্মীয়–বন্ধুদের বিপদে পাশে থাকার চেষ্টা করুন৷ তাঁরাও তা হলে আপনার বিপদে পাশে থাকবেন৷ পরিবারের সঙ্গে যেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন না হয়৷ যতটা পারেন সময় দিন৷ মাঝেমধ্যে ফ্যামিলি গেট–টুগেদার করে নিজের অবস্থান যাচাই করে নিন, যাতে সমস্যার আভাস পেলেই তা সামলে নিতে পারেন৷ মাঝেমধ্যে সামাজিক ও অফিসের পার্টিতে যান৷ নিজেও দিন৷ এ ক্ষেত্রেও কারণ ওই এক, যাতে নিজের অবস্থান যাচাই করে যথাসময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারেন৷ সাফল্যের চাপে নিজের আনন্দের জায়গাগুলিকে হারিয়ে ফেলবেন না৷ গান শোনা, বেড়ানো, বই পড়া, প্রিয় মানুষদের সঙ্গে সময় কাটানো৷ কেরিয়ারের নিম্নগতির সময় যার সাহায্যে ভাল থাকতে পারবেন৷ পা যেন মাটিতে থাকে৷ প্রতি মুহূর্তে নিজের দোষ–ত্রুটি, ভাল–মন্দ খুঁজে শুধরে নেওয়ার মনোভাব থাকলে পতনের আশঙ্কা কম৷ কে আসল বন্ধু আর কে চাটুকার সেটা বোঝাও জরুরি৷ চোখ–কান খোলা রেখে চলুন৷ সাফল্যে যেন মাথা ঘুরে না যায়৷

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।​

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE