রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খাবার পাতে নজর দিন। ছবি: শাটারস্টক।
কায়িক পরিশ্রম কমে যাওয়ায় ফলে বদহজমের সমস্যা এখন আগের চেয়ে অনেকটাই বেড়েছে। তার সঙ্গে যদি যুক্ত হয় বিয়ের মরসুম আর জাঙ্ক ফুডের ওভারডোজ়, তা হলে রক্ষে নেই! ষাটের ঊর্ধ্বে যাঁদের বয়স, তাঁদের ক্ষেত্রে হজমের সমস্যা একটু বেশিই দেখা যায়। তবে জীবনযাপনের ধরন এবং খাওয়াদাওয়ার অভ্যেসে বড়সড় পরিবর্তন আসায়, যুব প্রজন্মের মধ্যেও হজমের গোলযোগ এখন রোজের সমস্যা।
হজমের গোলমালের নেপথ্যে যে কারণগুলি মূলত দায়ী, তা আগেই চিহ্নিত করে দিলেন ডায়াটিশিয়ান কোয়েল পালচৌধুরী। তাঁর মতে, দু’টি মিলের মাঝে বিরতির মেয়াদ যদি অনেকটাই বেশি থাকে, তবে বদহজমের সম্ভাবনা বাড়তে থাকে। আর ওই বিরতির পরে ফাস্ট ফুড খেলে শরীরের আরও ক্ষতি হয়। তাই অফিসে বা ফিল্ডে যাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেন, তাঁরা যেন স্ন্যাকস সঙ্গে রাখেন। স্ন্যাকস বলতে অবশ্যই প্রোটিন স্ন্যাকস যেমন, ছোলা, আমন্ড, ছাতু। স্ন্যাকসে মিষ্টিজাতীয় দ্রব্য না থাকাই বাঞ্ছনীয়।
দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার ফলে ঠিক মতো প্রাতরাশ অনেকেই করেন না। সেটিও বদহজমের বড় কারণ। সে ক্ষেত্রে সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে ভারী ব্রেকফাস্ট করে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। ডিনারের পরেও হালকা হাঁটাচলা, ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ় করলে হজমের সুবিধে হয়। তবে এ সবই হচ্ছে সমস্যার আগের সতর্কতা। কিন্তু বদহজম হলে কী করবেন?
বদহজম হলেই গলা জ্বালা, চোঁয়া ঢেকুর, বুকে-পিঠে ব্যথা, মাথায় যন্ত্রণার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। প্রথমে ঈষদুষ্ণ জল পান করে দেখুন। কাঁচা জোয়ান চিবিয়েও জল খেয়ে নিতে পারেন। খালি পেটে কিছুক্ষণ থাকার পরেও লক্ষণ না কমলে অল্প শুকনো মুড়ি খান।
সমস্যা বাড়লে অনেকের আবার ডায়রিয়ার মতো গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে ফাইবার জাতীয় খাবার, ডাল একেবারে বন্ধ করতে হবে। কাঁচকলা সিদ্ধ, লাউয়ের শুক্তো, নুন ও জল দিয়ে মাখা ভাত খেতে হবে।
আবার যাঁরা নিয়মিত বদহজমের সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
তখন ফাইবার জাতীয় খাবারের পরিমাণ ডায়েটে বাড়িয়ে দিতে হবে। খোসা-সহ শসা, থোড়, ওটস, দানাশস্য জাতীয় খাবার খেতে হবে।
দুর্ভোগ এড়াতে আগাম সচেতনতা
বদহজম হয়ে যাওয়ার পরে যে খাবারগুলি ডায়েট থেকে বাদ দেবেন, তা হল ময়দা, দুগ্ধজাত দ্রব্য, প্যাকেট ফুড, ফাস্ট ফুড লিভার ফাংশন সুষ্ঠু রাখার জন্য কাঁচা হলুদ বেশ উপযোগী। সকালে উঠে একটুখানি কাঁচা হলুদ চিবিয়ে জল খেয়ে নিন দু’টি মিলের মধ্যে যাতে বিরতি বেশিক্ষণের না হয়, তার জন্য প্রোটিন স্ন্যাকস সঙ্গে রাখুন অনুষ্ঠানবাড়িতে গ্রেভি বাদ দিয়ে মাছ, মাংস, পনির খেতে পারেন সকালে উঠে এক গ্লাস ঈষদুষ্ণ জল খান। আর হজমক্ষমতা বাড়াতে চাইলে যে পথ্যগুলো দেওয়া হয়েছে, তা-ও ফলো করতে পারেন
বর্জনীয়: বদহজম হলে যে সব খাবার তালিকা থেকে বাদ দিতে হয়, তা হল ভাজাভুজি, প্যাকেট ফুড, ময়দা ও দুগ্ধজাত দ্রব্য।
অনুষ্ঠান বাড়ি: বদহজমের মধ্যেই যদি কোনও অনুষ্ঠান বাড়িতে যেতে হয়, তবে সেখানেও একটু বুঝেশুনে খাবেন। স্যালাড জাতীয় খাবার খেলে পেট ভরে যায়। আবার শরীরও সুস্থ থাকে। তা বলে কি মাছ-মাংস একেবারে বাদ? গ্রেভি বাদ দিয়ে মাছ-মাংস-পনির খেতে পারেন। তবে পরিমাণ সামান্যই।
অনুষ্ঠানবাড়ি থেকে ফিরে প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া বাঞ্ছনীয়। আর পরপর কয়েক দিন নিমন্ত্রণ থাকার পরে যখন বাড়িতে খাবেন, তখন ডায়েটে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমিয়ে দিন। অর্থাৎ দুটো রুটি বরাদ্দ হলে, একটা রুটি খান। পেট ঠান্ডা রাখতে ডাবের জল খেতে পারেন।
লিভার ও অন্ত্র যাতে সুষ্ঠু ভাবে কাজ করতে পারে, তার জন্য কতকগুলি ঘরোয়া পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন নিউট্রিজিনমিক্স এবং ডিজ়িজ় রিভার্সাল এক্সপার্ট কর্ণ কক্কড়। ষাটের ঊর্ধ্বে এবং তার চেয়ে কমবয়সিরাও টানা পনেরো-কুড়ি দিন এই পথ্য ব্যবহার করলে হজমের ক্ষমতা বাড়বে।
পান্তা ভাত: পান্তা ভাত বাঙালিদের অন্যতম পছন্দের খাবার। তবে এই ঘরোয়া টোটকাটি অনেকেরই জানা নেই। রান্না করা ভাতের দু’চামচ রাতে জলে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সকালে ওই জল ও ভাত খেয়ে নিন। এতে হজমের ক্ষমতা বাড়ে।
জোয়ানের জল: জোয়ান সিদ্ধ করে সেই জল খেলেও বদহজমের সমস্যা এড়ানো যায়। সকালে উঠেই এটা আগে খেয়ে নেবেন।
জিরের জল: জিরে সিদ্ধ করা জল হজম ক্ষমতা বাড়ানোয় উপযোগী। সকালে খালি পেটেও এটা খাওয়া যায়। আবার কিছু খাওয়ার পরেও তা খেতে পারেন।
এলাচ: বদহজম রুখতে এলাচ চিবিয়ে খাওয়া খুবই উপকারী।
সিদ্ধ আপেলের রস: আপেল সিদ্ধ করে সেই রস খেলেও হজমের ক্ষমতা বাড়ে।
পেঁপে পাতা: ডেঙ্গি প্রতিরোধে এই পথ্য দেওয়া হয়। তবে অনেকেই জানেন না, এই পাতা হজমক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। দু’টি পেঁপে পাতা এক গ্লাস জলে ভিজিয়ে সিদ্ধ করুন। তার পরে ওই জল আধ গ্লাস হলে খেয়ে নিন। এত ঝক্কি মানতে না চাইলে, এক গ্লাস ঈষদুষ্ণ জল খেলেও হজমে সাহায্য হয়।
বদহজম হলেই যে সব খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেবেন, তা ঠিক নয়। মিল বাদ দেওয়া বা অসময়ে ভারী খাবার খাওয়ার মতো কু-অভ্যাস বর্জন করলেও হজমের সমস্যা এড়ানো যায়। ডায়েটে অবশ্যই জলের পরিমাণ বাড়াবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy