বেড়াতে গিয়ে সন্তান যেন সুস্থ থাকে, তাই আগে থেকেই সতর্ক হন। ফাইল ছবি।
সামনে গরমের ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে অনেকের। তবে বাচ্চাদের ক্রমাগত জ্বর, সর্দি-কাশি নিয়ে চিন্তিত মা-বাবা। পাহাড়, সমুদ্র নাকি জঙ্গল... কোথায় গেলে সন্তান সুস্থ থেকে চুটিয়ে উপভোগ করতে পারবে, ভাবছেন তাঁরা। ঘুরতে গেলে কী কী সাবধানতা নেবেন... রইল চিকিৎসকদের পরামর্শ।
যে-যে বিষয়ে নজর দেবেন
চিকিৎসক সুবীর মণ্ডলের কথায়, “কোনও বাচ্চা বাইরের কিছুতে হাত দেবে না বা সেই হাত মুখে দেবে না, আশা করা যায় না। তাই প্রশিক্ষণ আগে থেকেই হওয়া উচিত। খাওয়ার আগে হাত ধোয়া, খাবার দেখলে মুখে ঢুকিয়ে না ফেলা, এ সব নিয়মিত অভ্যেসের মধ্য দিয়েই বুঝবে বাচ্চারা। ভিড়ের জায়গায় মাস্ক পরা জরুরি। সে ক্ষেত্রে বাতাসে ঘুরে বেড়ানো অনেক ভাইরাস থেকেই বাঁচতে পারি আমরা। ড্রপলেট গলবে না এমন মাস্ক পরাটা জরুরি।” পাহাড়ে গেলে হাতে গ্লাভস পরাতে পারেন। এতে চট করে মুখ হাত দেবে না বাচ্চা। মশা, পোকামাকড়ের কামড়, ত্বকের কোনও অ্যালার্জি থেকে সুরক্ষা দেবে ফুলহাতা পোশাক।
গরমে আইসক্রিম, ঠান্ডা খেতে চায় বাচ্চারা। সর্দি, কাশির ভয়ে বাবা-মায়েরা তা দেন না। কিন্তু গরমের জায়গায় বেড়াতে গেলে ঠান্ডা খাবারটাও প্রয়োজন। ডা. মণ্ডলের কথায়, “ঠান্ডা পানীয় স্ট্র দিয়ে খেলে গলায় চোট কম লাগে। ঠান্ডা পানীয়ের সঙ্গে মুখের গরম মিশে শরীরে ঢুকলে ক্ষতি তেমন হয় না। তবে জলটা পরিষ্কার কি না, সেটা দেখাটা জরুরি। পেটের বহু সংক্রমণ জল থেকে হয়। বাইরে গেলে হজমের অসুবিধে, পেটে ব্যথা হয় অনেক শিশুর। মিনারেল ওয়াটার অনেকটাই বাঁচায় সে ক্ষেত্রে।” ‘হিল ডায়েরিয়া’, ‘ট্রাভেলার্স ডায়েরিয়া’র ক্ষেত্রে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার হয় না। পর্যাপ্ত জল, ঘরোয়া খাবার আর বিশ্রামই শরীরকে ছন্দে ফেরাতে পারে। কথায় কথায় অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যুক্তিসঙ্গত নয়। খুব প্রয়োজনে রিফাক্সিমিন জাতীয় ওষুধ চলতে পারে। তবে প্রস্রাব কম হলে, মুখ শুকিয়ে গেলে, জ্বর এলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বাইরে গেলে সঙ্গে রাখতে হবে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ। ভাইরাল ফিভারে দিনে চার বার প্যারাসিটামল দেওয়া যায়। দেহের উচ্চ তাপমাত্রায় শরীরের উৎসেচক ঠিকমতো কাজ করে না। সেই কারণে জ্বর কমানো জরুরি। সহজপাচ্য খাবার খেলে ভাল। ব্যথার জন্যও প্যারাসিটামল দেওয়া যায়।
শিশুর হজমে সমস্যা হলেই অ্যান্টাসিড নয়। অকারণে অ্যান্টাসিড খেলে প্রোটিন জাতীয় খাবার হজম হতে চায় না। বরং সঙ্গে রাখতে পারেন এনজ়াইম টনিক।
শ্বাসকষ্ট থাকলে খুব উচ্চতায় যাওয়া উচিত নয়। অ্যানিমিয়া, অ্যাজ়মা, সিকল সেল অ্যানিমিয়া থাকলেও খুব উঁচুতে ওঠার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কোনও শহরে বেড়াতে গেলে দূষণের কারণে অ্যালার্জি হতে পারে। বিলাস্টিন জাতীয় অ্যান্টি-হিস্টামিন ওষুধ রাখতে পারে। তবে ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী আবার বলছেন, “পাহাড়ে গেলে সর্দি, কাশির সম্ভাবনা কম থাকে। শহরে বড় হওয়া বাচ্চাদের দূষণের সঙ্গে লড়তে হয় বেশি। পাহাড়ে তারা ভাল থাকে। তবে বমির প্রবণতা থাকলে ডমপেরিডন, পেট ব্যথায় ড্রোটাভেরিন জাতীয় ওষুধ রাখা যেতে পারে। একটু নাক বন্ধ, গলা ব্যথায় কাজে আসে গরম জলের ভাপ। বেশির ভাগ হোটেলেই গরম জলের কেটলি পাওয়া যায়। তা থেকে ভাপ নিতে পারেন। তবে বাচ্চার শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলে ইনহেলার নিয়ে যেতেই হবে।”
সামুদ্রিক খাবার থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। তাই বাইরে গিয়ে পাঁচ বছরের নীচের বাচ্চাদের অচেনা খাবার কিছু না দেওয়াই ভাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy