করোনার সংক্রমণ এড়াতেও দাঁত, মাড়ি-সহ মুখের সুস্থতা বজায় রাখা জরুরি। —সংগৃহীত চিত্র।
লকডাউনের জেরে দু’মাসের ওপর গৃহবন্দি। ফলে দাঁতের যত্ন নেওয়া হয়নি অনেকেরই। আসলে আমরা দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দিই না। আর সেই কারণেই ব্যথা বেদনার পাশাপাশি হাসতে গেলে মুখ চাপা দিতে হয়, কিংবা জোর করে মুখ চেপে হাসতে হয়। কারও দাঁত নিকোটিনের কারণে কালচে ছোপে ভরা। আবার কারও দাঁত অফ হোয়াইট। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দাঁতের অবস্থা দেখে কান্না পায়। চেহারাই বলুন অথবা দাঁত, সুন্দর করার পাশাপাশি ভেতর থেকে সুস্থ রাখা জরুরী, বললেন ডেন্টাল সার্জন শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনার সংক্রমণ এড়াতেও দাঁত, মাড়ি-সহ মুখের সুস্থতা বজায় রাখা জরুরি বলে মনে করেন শুভঙ্করবাবু।
দাঁত ভাল রাখার সহজ সরল উপায় হল, দিনে দু’বার সঠিক পদ্ধতিতে ব্রাশ করা। আর প্রতি বার খাওয়ার পরে ভাল করে কুলকুচি করে মুখ পরিষ্কার রাখা। দাঁতের ফাঁকে খাবারের টুকরো আটকে থাকলে তা অবশ্যই পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত। কোভিড ১৯ কিন্তু শুরুতে মুখের মধ্যেই বাসা বাঁধে। তাই মুখের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা জরুরি। মনে রাখবেন সিগারেট, বিড়ি, গুটখা, খৈনি-সহ যে কোনও তামাক দাঁতের পাশাপাশি ওরাল হাইজিন নষ্ট করে দেয়। আর মুখের ক্যানসারের এক অন্যতম কারণ যে তামাক, তা তো সবারই জানা।
আরও পড়ুন: করোনা তো বটেই, আরও নানা রোগ তাড়াতে তামাককে গুডবাই করুন আজই
খৈনি বা সিগারেটের নেশা না থাকলেও অনেক সময় দাঁতে ছোপ পড়তে পারে। এর কারণ সম্পর্কে জানালেন শুভঙ্করবাবু।
· বয়স বাড়লে যেমন ত্বকে বলিরেখা পড়ে, চুলে পাক ধরে, তেমনই দাঁতেও তার ছাপ পড়ে। এক জন টিন এজারের দাঁত যতটা উজ্জ্বল, ষাটোত্তীর্ণের দাঁত ততটাই দাগ ছোপে ভরা। যদি না সঠিক ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।
· তামাক, পান, সুপারি-সহ যে কোনও নেশাই দাঁতে ছোপ পড়ার একটা বড় কারণ।
· খাদ্যাভ্যাস অনেক সময় দাঁতের রং বদলে দেয়। যাঁরা নিয়মিত যথেষ্ট কফি, চা বা রেড ওয়াইন পান করেন, তাঁদের দাঁতের রং বদলে যায়।
· ডার্ক চকোলেট, বিট, গাজর বেশি খেলে দাঁতে ছোপ পড়তে পারে।
· রোজকার ডায়েটে ভিনিগার, সস, লেবুজাতীয় ফল বা প্রচুর সাইট্রাস অর্থাৎ টক জাতীয় খাবার থাকলে দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে গিয়ে রং যায় পাল্টে।
· বেশ কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে দাঁতে কালো ছোপ পড়তে পারে। ছোট থেকে টেট্রাসাক্লিন জাতীয় ওষুধ খেলে প্রথম থেকেই দাঁতের রং হলদেটে হয়ে যায়।
· চোট আঘাত লেগে দাঁতের রং বদলে যায়। ব্যথা থাকে না বলে কেউই প্রথমে গুরুত্ব করেন না। কিন্তু পরবর্তী কালে দাঁতের রং পাল্টে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোগান্তিও কম হয় না।
· অনেকের একটা বদ অভ্যাস আছে, দাঁত কিড়মিড় করা। দাঁতে দাঁতে ঘষা লেগে এনামেল ক্ষয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রংও পাল্টে যায়। তাই অকারণে দাঁত ঘষবেন না।
· দাঁত দিয়ে নখ কাটাও অত্যন্ত খারাপ অভ্যাস। এর ফলে এক দিকে দাঁত খারাপ হয়ে যেতে পারে, অন্য দিকে মুখে হাত দিলে কোভিড ১৯ এর সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন: প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে লকডাউন উঠলে ঘরের বাইরে যান
কী করলে দাঁতের রং সুন্দর থাকার সঙ্গে সঙ্গে দাঁতের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে? শুভঙ্করবাবু জানালেন—
খাবার পর সঠিক পদ্ধতি মেনে ব্রাশ মাস্ট। আর টুথ পিক বা ফ্লস ব্যবহার করতে হলে আগে এক বার অন্তত ডেন্টাল সার্জেনের পরামর্শ নেওয়া উচিত। লক্ষ্য করে দেখবেন, অল্প বয়সিরা কিন্তু এগুলি ব্যবহার করে না। যখনই টুথপিক ব্যবহারের প্রয়োজন হবে, বুঝবেন দু’টি দাঁতের মধ্যবর্তী গ্যাপ বেড়ে গিয়েছে। মূল কারণটা বুঝতে পারবেন এক জন চিকিৎসক। তাই কোনও সমস্যা থাকুক না থাকুক, বছরে অন্তত একবার ডেন্টাল সার্জেনের কাছে যান। আর একটা ব্যাপারে আমাদের খুব অনীহা আছে, তা হল স্কেলিং করা। অনেকেই ভাবেন স্কেলিং করলে বুঝি দাঁত পাতলা হয়ে যায়। কিন্তু ঝকঝকে ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল দাঁত পেতে গেলে বছরে এক বার স্কেলিং মাস্ট। টুথপেস্ট ছাড়া গুঁড়ো মাজন বা নুন তেল দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে গিয়ে সমস্যা হয়। এ ছাড়া পান, জর্দা, দোক্তা, খয়ের, সিগারেট, বিড়ি-সহ যে কোনও নেশা থেকে বিরত থাকলে দাঁত সুস্থ ও সুন্দর থাকবে। মুখ ঢেকে বা মুচকি হেসে কালচে ছোপ ধরা দাঁতের সারি লুকিয়ে রাখতে হবে না। প্রাণ খুলে সকলের সামনেই হাসতে পারবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy