কার্পেটের অভিজাত পরশ নিজস্ব চিত্র।
শীত মানেই তো উৎসবের মরসুম। এই উৎসবের দিনগুলি যেন মায়াময় আবেশ নিয়ে আসে। শীত মানেই ক্রিসমাস। আলতো পায়ে নতুন বছরের দিকে এগিয়ে চলা। আবার এই সময়েই হঠাৎ এক দুপুরের ঘুম ভেঙে মনে হয়, এত তাড়াতাড়ি বিকেল কী করে হয়ে গেল! আলোয় এত বিষণ্ণতা কেন? এই প্রসঙ্গেই অন্দরসজ্জা বিশারদ উর্বশী বসু জানালেন, শীতকালে দিন ছোট, ঝুপ করে সন্ধ্যা নেমে যায়। তাই ঘরের সাজ মানুষকে যেন একটা উষ্ণ, আরামদায়ক অনুভূতি দেয়, সে দিকেই নজর দিতে হবে। সারা দিনের পরে বাড়ি ফিরে যাতে মনে হয়, আহ, এই তো আমার শান্তির কোণ। আর তা করতে বিশেষ ভাবে নজর দিতে হবে অন্দরসজ্জার রঙের দিকে।
বলা চলে, বঙ্গজীবনে শীত আসে অদ্ভুত বৈপরীত্য নিয়ে। ডিসেম্বরের শেষে শুরু হয় উৎসবের মরসুম। তখন দরজায় বড়দিন, তার পিছু পিছু নতুন বছর। সেই প্রসঙ্গেই বলা, অন্দরসজ্জা এমন ভাবে করা ভাল, যাতে একই উপকরণ অদলবদল করে উৎসবের মরসুমে সাজিয়ে ফেলা যায়। ঘরে যা রয়েছে, তাতে সামান্য যোগ-বিয়োগ করলেই স্বল্প খরচে ঘর সেজে ওঠে। একটু আলোছায়া আর দেয়ালসজ্জার হেরফেরেই বদলে যায় অন্দরমহল।
বাঙালি তো কবেই জিশুর জন্মদিনকে আপন করে নিয়েছে। ফলে, সেই উৎসবে অন্দরসাজের পরিকল্পনা শুরু হয় সপ্তাহখানেক আগে থেকেই। আর সেই প্রসঙ্গেই বিশেষ জনপ্রিয় পদ্ধতি বসার ঘরের আসবাব কমিয়ে, আলোয় সাজিয়ে পরিধিটা বিস্তৃত করে তোলা। তার পরে মনের মতো একটি কোণে সাজিয়ে ফেলা ঝলমলে ক্রিসমাস ট্রি। এ প্রসঙ্গেই ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট অয়ন ঘোষ বললেন, ‘‘আগে ক্রিসমাস ট্রি শুধু রেস্তরাঁয় দেখা যেত। এখন বাঙালির ঘরে ঘরে ঢুকে পড়েছে উৎসবটি।” হিন্দুস্তান পার্কে অয়নের ডুপ্লে সুচারু অন্দরসজ্জার অনন্য উদাহরণ।
আসলে, যে কোনও অন্দরসজ্জায় স্পেস যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ রুচি ও পছন্দ।
নতুন বছরের সাজ
বড়দিনের অন্দরসজ্জাকে একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিলেই হয়ে যায় নতুন বছরের সাজ। ক্রিসমাস ট্রি সরিয়ে নিয়ে আসুন ইনডোর প্ল্যান্টস। ঘরের বিভিন্ন কোণে নিপুণ ভাবে সাজিয়ে দিন। বিভিন্ন রং ও আকারের সুগন্ধি মোমবাতি দিয়ে সাজিয়ে নিন সেন্টার টেবল। কারুকাজ করা পাত্রে জল দিয়ে ফুলের পাপড়িও ছড়িয়ে দিতে পারেন। ক্রেপ কাগজের স্ট্রিমার, ফেয়ারি লাইটস দিয়ে সাজিয়ে নিন দেওয়াল ও জানালা। বসার ঘরের সঙ্গে বারান্দা থাকলে ঝুলিয়ে দিতে পারেন স্টার লাইট। আলোর মেলায় নতুন বছর পা রাখবে আপনার জীবনে।
উৎসব ছাড়াও সাজানো যায়
উর্বশী জানালেন, শীতের অন্দরসজ্জা মানেই রঙিন হবে। বাড়িতে যত সূর্যের আলো প্রবেশ করে তত ভাল। তাই বসার ঘরে সোফার কুশনের জন্য বেছে নিন রঙিন কভার, বিশেষ করে লাল, বাদামি, উজ্জ্বল সবুজ বা কমলা রঙের কুশন কভার ঘরের আবহ পাল্টে দেবে। কারও বাড়িতে যদি কাঠের আসবাব থাকে, এ সময়ে পালিশ করিয়ে নেওয়া যায়। উজ্জ্বল কাঠের আসবাব ঘরে উষ্ণতার আমেজ আনে। এ ছাড়াও ব্যবহার করা যায়—
রাগ ও কার্পেট: গরমকালে বাঙালি বাড়িতে কার্পেট বা রাগ বেরোয় না। শীতে সে বাধা নেই। সুতরাং সুন্দর কার্পেট বা রাগ দিয়ে ঘর সাজানো যায়। বিছানা বা সোফার সামনের মেঝেতে বিছিয়ে দিন মোলায়েম কার্পেট। অয়ন জানালেন, “ছোটবেলা থেকেই শীত পড়েছে মানে নানা ধরনের কার্পেট বেরোবে। বসা বা শোয়ার ঘরে বিছিয়ে দেওয়া হবে শৌখিন সেই সব কার্পেট।”
গাছ ও ফুল: এরিকা, মানি প্লান্ট ইত্যাদি বড় পাতার ইনডোর প্ল্যান্ট, যথোপযুক্ত সূর্যালোক আপনার ঘরকে করে তুলবে প্রাণবন্ত। সেই সঙ্গে চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া ইত্যাদি শীতের ফুল দিয়ে দু’-তিন দিন অন্তর যদি ঘর সাজান, তা হলে তো কথাই নেই। মনে রাখবেন, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘শজারুর কাঁটা’ উপন্যাসে দীপা ফুল দিয়ে ঘর সাজিয়েছিল দেবাশিসের প্রেমে পড়ার পরেই। তাই, অন্দরসাজে ফুলের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
বেডকভার, কাঁথা ও পর্দা: শীত কাল আরামের সময়। শয়নকক্ষ-সহ বাড়ির অন্যান্য ঘরে একটা ‘ওয়ার্ম অ্যান্ড লাক্সারিয়াস’ অনুভূতি রাখা প্রয়োজন, জানালেন উর্বশী। ফ্রিল দেওয়া বা ভেলভেটের বেডকভার ব্যবহার করা যায়। সঙ্গে মানানসই কুইল্ট বা বালাপোশ রাখলেও শয়নকক্ষের সাজে আসে অন্য মাত্রা। এখন তো ট্রেন্ডিং কাঁথা। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে কাঁথা দিয়ে বিছানা সাজানোর নানা ছবি। সুতরাং, সুন্দর কাজ করা কাঁথাও হয়ে উঠতে পারে আপনার বিছানার সাজ। পাশাপাশি, সমস্ত ঘরেই এই সময় ব্যবহার করা যায় একটু ভারী পর্দা।
অয়ন জানালেন, ছোটবেলায় তিনি দেখেছেন শীতের সময় লেপ-কম্বলে ওয়ার পরানো হত। তবে এখন বালিশের কভার, বেডশিট, বেডকভার পুরো ম্যাচ করা সেট পাওয়া যায়, যা শয়নকক্ষের শোভা অনেকাংশে বাড়িয়ে তোলে।
আলো ও আয়নার ব্যবহার: বসার ঘর বা শোয়ার ঘরে বিভিন্ন ধরনের আয়না ব্যবহার করতে পারেন। ঘর ছিমছাম সুন্দর দেখাবে। আর নানা রকম আলো ব্যবহার করে ঘরের বিভিন্ন জায়গাকে আরও উজ্জ্বল ও সুন্দর করে তুলুন। কিছু স্পটলাইট রাখা যায়। নানা আকারের ল্যাম্পশেড বেছে নিন। তবে উর্বশী জানালেন, আলোয় যেন হালকা হলুদ আভা থাকে। ধবধবে সাদা আলোয় ঘরে ‘কোজ়ি ফিল’ তৈরি হবে না।
ছবি ও ওয়ালপেপার: অল্প খরচে বদলে নিতে পারেন ঘরের ওয়ালপেপার। আবার পুরনো বিভিন্ন পেন্টিংকে কম খরচে নতুন ফ্রেমে বাঁধিয়ে নেওয়া যায়। মাথায় রাখতে হবে, ছবিতে কাঠের ফ্রেমই শীতের অন্দরসাজের উপযুক্ত।
সুগন্ধি: শীতে উষ্ণতার আমেজের সঙ্গে প্রয়োজন সুগন্ধেরও। তাই রাখতে পারেন বিভিন্ন সুগন্ধি পপৌরি। এ ছাড়া, সুগন্ধি মোম, পছন্দের রুম ফ্রেশনার তো রইলই।
নাগরিক জীবনের অস্তিত্বটুকু জুড়ে রয়েছে ঘর, নিজের বাড়ি। তাই সেখানে ফিরতে হয় বারবার। এই ফেরাটুকুই যেন শান্তির হয়, অন্দরসজ্জার মূল সুরের সার্থকতা সেখানেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy