Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
Kalipuja

শব্দবাজি থেকে হতে পারে টিনাইটাসের মতো মারাত্মক রোগও

মা দুর্গা তো অসুর নিধন করে সদলবলে কৈলাসে ফিরে গেলেন। এ বার শব্দ অসুরকে জব্দ করবে কে? কেন আপনি, আমি, আমরা সবাই। সকলে সমস্বরে প্রতিবাদ না করলে শব্দের দাপটে সমস্যা উত্তরোত্তর বাড়তেই থাকবে। একেই শব্দবাজিতে রক্ষে নেই, দোসর ডিজে নিয়ে শোভাযাত্রা। এর নিট ফল এক দিকে কানের সমস্যা, অন্য দিকে উদ্বেগ আর অসহিষ্ণুতা বাড়ছে হুহু করে। শব্দ বাজির কুফল নিয়ে সবিস্তার জানালেন ইএনটি সার্জেন অর্জুন দাশগুপ্ত।ঠাস ঠাস দ্রুম দ্রাম’ ... খটকা লাগার কিছুই নেই, এ সব ফুল ফোটার শব্দ নয়। কালি পটকা, চকোলেট বোম, দোদমা-সহ নানান শব্দ বাজির উপদ্রব শুরু।

 ‘ঠাস ঠাস দ্রুম দ্রাম’ ...

‘ঠাস ঠাস দ্রুম দ্রাম’ ...

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৭ ১২:৫৫
Share: Save:

‘নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান’ হলেও দিওয়ালির বাজি জ্বালানোর ব্যাপারে আমাদের খুবই মিল। তাই আলোর উৎসব শুধুই আলোর থাকে না, শব্দ বাজির তাণ্ডবে মানুষ থেকে তার পড়শী প্রাণীরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ‘ঠাস ঠাস দ্রুম দ্রাম’ ... খটকা লাগার কিছুই নেই, এ সব ফুল ফোটার শব্দ নয়। কালি পটকা, চকোলেট বোম, দোদমা-সহ নানান শব্দ বাজির উপদ্রব শুরু। আইন করে কি শব্দকে জব্দ করা যায়! নিজেদের সচেতনতা না বাড়লে বাজির শব্দ আর বিষাক্ত ধোঁয়ার হাত থেকে নিস্তার নেই।

আচমকা বিকট শব্দে পটকা ফাটলে ছোট শিশু থেকে শুরু করে বাড়ির বয়স্ক মানুষ সকলেরই কানে সাময়িক ভাবে তালা ধরে যেতে পারে। কানে তালা লাগা ছাড়াও নানান শারীরিক অসুবিধের সম্মুখীন হতে হয়। আসুন জেনে নিই কী কী সমস্যা হতে পারে।

আচমকা কানের কাছে তারস্বরে মাইক বাজলেই কান মাথা ভোঁ ভোঁ করে। আর পটকা বা চকোলেট বোমা ফাটল তো কথাই নেই। অতিরিক্ত শব্দে আমাদের নার্ভ উত্তেজিত হয়ে পড়ে। ফলে নার্ভাস সিস্টেমের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। একাধিক বার এই ঘটনা ঘটতে থাকলে আমরা ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে পড়ি। আচমকা কানের কাছে দুম করে চকোলেট বোমা বা অন্য পটকা ফাটলে কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সম্পূর্ণ বধির হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে বাচ্চাদের এবং বয়স্ক মানুষদের সমস্যা বেশি হয়। লাগাতার কানের কাছে পটকা ফাটলে বা উচ্চস্বরে লাউড স্পিকারে গান চলতে থাকলে বধিরতা প্রায় অবধারিত। মেডিকা হাসপাতালের তরফে গত বছর কালীপুজোর সময় শব্দ দূষণ নিয়ে এক সমীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায় দীপাবলীর শব্দ দূষণের ফলে ২৭% মানুষ কানের সমস্যা টিনাইটাসের শিকার হন। এ ছাড়া তীব্র শব্দের ক্ষতিকর প্রভাবে ব্লাড প্রেশার বেড়ে যাওয়া বা আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ার সমস্যা তো আছেই। ২০ বছর থেকে ৮০ বছর বয়সী ২০৪ জন মানুষের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে এই তথ্য জানা গিয়েছে। বাচ্চাদের অবস্থা তো আরও সঙ্গীন। ২৮% মানুষ শব্দ দৈত্যের অত্যাচারে স্ট্রেসে কষ্ট পাচ্ছেন। ৩৪ শতাংশের মাথা ব্যথা ও ৩০ শতাংশ ঘুম উধাও হয়ে অনিদ্রার শিকার হয়েছেন।

শব্দ দূষণে হার্টের রোগীদের সমস্যা বাড়ে। আচমকা শব্দে প্যালপিটিশন বেড়ে যায়। আমাদের মধ্য কর্ণ ও অন্তঃকর্ণের মধ্যে সূক্ষ্ম অনুভূতির যে ক্ষমতা আছে শব্দের প্রাবল্যে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আচমকা তীব্র শব্দের জোরে হবু মায়ের মিসক্যারেজের সম্ভাবনা বাড়ে। টিনাইটাস কানের এক অদ্ভুত সমস্যা। বাইরে কোনও শব্দ না থাকলেও রোগী নাগাড়ে ঝি ঝি বা পিঁ পিঁ শব্দ শোনেন। এর ফলে রোগীর স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যহত হতে পারে। কানে তালা ধরে যায়। কোনও কাজে মনঃসংযোগ করতে পারেন না। ক্রমশ শ্রবণ শক্তি নষ্ট হয়ে যায়।

শব্দ বাজির পাশাপাশি গাড়ির তীব্র হর্ন, আর ডিজের অস্বাভাবিক জোরে ড্রাম আর গান বাজনা কানের তো বটেই নার্ভের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, বাস-সহ বিভিন্ন গাড়ির চালকদের অধিকাংশই কানে কম শোনেন ও টিনাইটাসের সমস্যায় ভোগেন। এ বার আমাদের রাজ্যে শব্দবাজির মাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৯০ ডেসিবলে। কিন্তু তা আদৌ মেনে চলা হবে কিনা লন্দেহে সব পক্ষই। আমাদের কানের সহ্যসীমা ৭০ ডেসিবল। এর বেশি শব্দে ঘুম কমে যায়, মাথা ব্যথা করে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, স্মরণশক্তি ও মনোযোগ কমে যায়, ব্লাড প্রেশার বাড়ে আরও নানান শরীর ও মনের অসুবিধে সৃষ্টি হয়। সুতরাং আসুন আমরা শব্দবাজিকে গেট আউট করে দিই। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে শৈশব থেকেই শব্দবাজির কুফল নিয়ে সতর্ক হতে শেখাই।

কালীপুজো আনন্দের হোক, আতঙ্কের নয়, শুভ দীপাবলী।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy