করোনার জেরে বিপদে কর্মক্ষম জনসংখ্যাও। ফাইল চিত্র
জনসংখ্যার একটি বড় অংশেরই ক্রনিক রোগের সূত্রপাত হয় বছর ত্রিশ হতে না হতেই। যত বয়স বাড়ে, পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে রোগের সংখ্যাও। পেশা বিশেষে এর কিছুটা হেরফের হলেও সার্বিক ফল এক। ৫৫ বছর বয়সের আগেই কর্মরত জনসংখ্যার বড় অংশের মধ্যেই হৃদ্্যন্ত্রের অসুখ, উচ্চ রক্তচাপ, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবিটিস-সহ একাধিক রোগ বাসা বাঁধে। রাষ্ট্রপুঞ্জের ইএসসিএপি-র (ইকনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক) তরফে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যা ও তার সঙ্গে ক্রনিক রোগের যোগ সম্পর্কিত এমনই তথ্য উঠে এসেছিল। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সেই তথ্য ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কারণ, কর্মক্ষম জনতার বড় অংশ যে ভাবে করোনায় ‘কো-মর্বিডিটি’-র শিকার হচ্ছেন, তা সামগ্রিক ভাবে উদ্বেগের বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
সার্স-কোভ-২ সংক্রমণ দেশের কর্মরত জনসংখ্যার (৩০-৬৫) মৃত্যুহারে যে গভীর প্রভাব ফেলেছে, সাম্প্রতিক সময়ের একাধিক সমীক্ষায় সেটা স্পষ্ট। বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, রাষ্ট্রপুঞ্জের ওই গবেষণা বিন্দুতে সিন্ধুদর্শন ছিল। কী হারে দেশের কর্মরত জনসংখ্যা ক্রনিক রোগে আক্রান্ত, তারই প্রতিফলন পাওয়া গিয়েছিল সেখানে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যা আরও বেশি করে বোঝা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রের অন্যতম লেখক তথা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর পপুলেশন সায়েন্সেস-এর ‘ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ়’ বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অপরাজিতা চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘বিশ্বের অন্য দেশগুলির তুলনায় আমাদের দেশে কর্মরত জনসংখ্যা বেশি। এ দিকে, ত্রিশ বছর বয়স হতে না হতেই জনসংখ্যার বড় অংশের ক্রনিক মর্বিডিটি শুরু হয়ে যায়। সেই কারণেই কোভিডে কর্মরত জনসংখ্যার মৃত্যুর হারও এ দেশে তুলনামূলক বেশি।’’
বিষয়টিকে কিছুটা আলাদা ভাবে ব্যাখ্যা করছেন কার্ডিয়োথোরাসিক চিকিৎসক কুণাল সরকার। তাঁর বক্তব্য, কোনও দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যা যদি রোগে বেশি আক্রান্ত হন এবং তাতে তাঁদের মৃত্যু হয়, তা হলে সেটা সেই দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভাল বিজ্ঞাপন নয়। তাঁর কথায়, ‘‘৪০-৫০ বছর বয়সিদের বড় অংশই উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবিটিসে আক্রান্ত। কোভিডের কারণে কর্মক্ষম জনসংখ্যার (প্রোডাক্টিভ পপুলেশন) একটি বড় অংশই বর্তমানে বিপন্ন।’’
আরও পড়ুন: বাবা দিবসে ‘স্বর্গীয় ফল’ অথবা কমলালেবু-চকোলেটের যুগলবন্দি
বিশেষজ্ঞদের মতে, কলকাতা-সহ দেশের বিভিন্ন শহরে জীবিকার কারণে মূলত কর্মক্ষম জনতাই এখন রাস্তায় বেরোচ্ছেন। সংক্রমণের ভয়ে রাস্তায় বেরোনো বয়স্ক ও শিশুর সংখ্যা একেবারেই কমে গিয়েছে। সরকারি তথ্য বলছে, শহরের প্রায় ৪৫ লক্ষ জনসংখ্যার সাড়ে ২৪ লক্ষের গড় বয়স ত্রিশের বেশি। ‘ইন্ডিয়ান ভাইরোলজি সোসাইটি’-র প্রেসিডেন্ট তথা ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমি’-র এমেরিটাস বিজ্ঞানী অনুপম বর্মার কথায়, ‘‘কর্মরত জনসংখ্যাকে কাজে বেরোতেই হচ্ছে। না বেরোনো ছাড়া তাঁদের উপায় নেই। ফলে তাঁদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা এমনিতেই বেশি।’’ বিভিন্ন দেশের বয়সভিত্তিক জনসংখ্যার উপরে কোভিডের প্রভাব নিয়ে গবেষক কুণাল সেনের সঙ্গে যৌথ ভাবে একটি গবেষণা করেছেন ইংল্যান্ডের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাক্রোইকনমিক্সের অধ্যাপক পরন্তপ বসু। তাঁর কথায়, ‘‘দূরত্ব-বিধি মানার সঙ্গে অর্থনৈতিক অসাম্যের বিষয়টি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। কারণ, নিম্নবিত্ত মানুষের দু’মিটার দূরত্ব-বিধি মানার জন্য পর্যাপ্ত জায়গার সত্যিই অভাব রয়েছে। তাই কর্মক্ষেত্রে যাতে দূরত্ব-বিধি মানা হয়, তা সমস্ত স্তরের প্রতিষ্ঠানকে সুনিশ্চিত করতে হবে।’’
কিন্তু তা যে সুনিশ্চিত থাকবেই, সে কথা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না কেউ। আর তাই কর্মক্ষম জনতাকে তুলনামূলক ভাবে নিরাপদ রাখতে সচেতনতার প্রচারেই জোর দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলছেন, যথাযথ পদ্ধতিতে মাস্ক পরা, নির্দিষ্ট সময় অন্তর হাত ধোয়া, ঘেঁষাঘেঁষি করে না ওঠা-বসার গুরুত্ব মানুষকে নিরন্তর বুঝিয়ে যেতে হবে। কারণ, তাঁদের কথায়, “করোনা আমাদের সঙ্গ সহজে ছাড়বে না। পথে না বেরিয়ে যাঁদের উপায় নেই, করোনাকে এড়িয়ে চলার কৌশল তাঁদের নিজেদেরই আয়ত্ত করতে হবে।”
আরও পড়ুন: হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছেই, কোথায় সমস্যা?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy