মুখের সৌন্দর্যের জন্য তো আমরা কত কিছুই করে থাকি। ক্লেনজ়িং, টোনিং, ময়শ্চারাইজ়িং। তার পরে ফেশিয়াল তো আছেই। জরুরি গোটা শরীরের যত্ন নেওয়াও। নিয়মিত ফুল বডি স্পা করানো সম্ভব নয় এবং তা খরচসাপেক্ষ। সেই ঘাটতি পূরণ করতে পারে সওনা বাথ কিংবা স্টিম বাথ। সৌন্দর্য তো বটেই, অনেক শারীরিক সমস্যার সমাধানও করে দেবে এই উষ্ণস্নান।
কেন জরুরি সওনা বা স্টিম?
সওনা বা স্টিমের আসল কাজ হল— আমাদের ত্বকের রোমকূপের মুখ খুলে দেওয়া। এতে স্কিনের বিভিন্ন স্তরে জমে থাকা ময়লা বেরিয়ে আসে। শরীর থেকে টক্সিন বেরিয়ে গিয়ে, আমাদের কোষ সজীব এবং তরতাজা হয়ে ওঠে। আর শরীর থেকে ময়লা বেরিয়ে গেলে, ত্বক এমনিই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। অ্যাকনে, ব্ল্যাকহেডসের সমস্যারও সমাধান হয়।
সওনা বা স্টিমের তাপমাত্রা শরীরের তাপমাত্রাও খানিক বাড়িয়ে দেয়। এতে ব্লাড সার্কুলেশন ভাল হয়, যার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে।
কোলাজেন হল এক ধরনের প্রোটিন, যা আমাদের বিভিন্ন টিসুর শক্তি ও ইলাস্টিসিটি বাড়ায়। স্টিম ও সওনা বাথের উষ্ণতা শরীরে কোলাজেনের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়, যা আমাদের ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে। মৃত কোষ দূর করে। বলিরেখার সমস্যারও সমাধান করে।
স্টিম বাথ ওজন কমাতেও সাহায্য করে, যে কারণে অধিকাংশ জিমে স্টিম বাথের বন্দোবস্ত রাখা হয়। ঘামের মধ্য দিয়ে শরীর থেকে অতিরিক্ত জল বেরিয়ে গিয়ে, শরীর ঝরঝরে করে। ওয়ার্কআউট করার পরে স্টিম নিলে তা মাসল রিল্যাক্সেশনের কাজও করে।
স্ট্রেস কমানো এবং রিল্যাক্সেশনের জন্য স্টিম-সওনা খুবই উপকারী। গরম ভাপ আমাদের শরীরের রক্ত চলাচল বাড়ায়, নার্ভ উদ্দীপিত করে। স্ট্রেস-টেনশন কমানোর দাওয়াই হিসেবে অনেক সময়ে সওনা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তা ছাড়া বলা হয়, মাথাধরা কমাতে, ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে, জয়েন্ট পেনের সমস্যায়ও স্টিম-সওনা কাজে আসে।
যাঁদের সর্দি-কাশি এবং সাইনাসের সমস্যা আছে, তাঁদের জন্য স্টিম বাথ খুবই উপকারী। স্টিম নিলে শরীরের ভিতরের মিউকাস পাতলা হয়ে বেরিয়ে যায়। অনেকে সারা বছর ভাল থাকলেও শীতকাল জুড়ে চলে সর্দি-কাশির সমস্যা। তাঁরা ঠান্ডার সময়ে সপ্তাহে একদিন স্টিম নিলে উপকার পাবেন। শ্বাসকষ্টের রোগীরাও এতে উপকৃত হন।
জরুরি সতর্কতা
• স্টিম হোক বা সওনা— নেওয়ার আগে এক গ্লাস জল খাবেন, যাতে ডিহাইড্রেশন না হয়। বেরিয়েও এক গ্লাস জল খান।
•বাথ নেওয়ার আগে ও পরে অ্যালকোহল সেবন করা যাবে না। কোনও রকম ওষুধও তখনই না
খাওয়া উচিত।
•গর্ভবতী মহিলা ও যাঁরা হৃদ্্রোগে ভুগছেন, তাঁদের সওনা-স্টিম এড়িয়ে চলা উচিত।
•বাথরোব বা টাওয়েল পরেই এই বাথ নেওয়া উচিত। টাওয়েল, শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে পুরো চুল ঢেকে রাখুন।
•স্টিম-সওনা দু’ক্ষেত্রেই শরীরের তাপমাত্রা খানিক বৃদ্ধি পায়। তাই আগে-পরে শাওয়ার নেওয়া জরুরি। তবে গরম থেকে বেরিয়েই শাওয়ার নেবেন না। দু’-তিন মিনিট ঘরের তাপমাত্রায় থেকে শাওয়ার নিন। স্নান সেরে বেরিয়ে ফ্রেশ লাগবে। স্টিম বা সওনা নেওয়ার পর পরই রোদে বেরোবেন না।
•শাওয়ার নেওয়ার সময়ে বডি স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারেন। এতে শরীরের ময়লা, মৃত কোষ আরও ভাল ভাবে উঠে যাবে। ঝকঝকে ত্বক পাবেন। শাওয়ার নেওয়ার পরে গা শুকনো করে মুছে ময়শ্চারাইজ়ার লাগাতে পারেন।
•অনেকের ধারণা, সওনা বা স্টিম নিলে ত্বকের উপরে কালো ছোপ পড়ে। তবে এই ধারণা ভুল। ১০ মিনিটের বেশি গরমের মধ্যে থাকা এমনিতেই উচিত নয়। স্পর্শকাতর ত্বক অনেক সময়ে লাল হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে ঠান্ডা জলে স্নান করলে, তা ঠিক হয়ে যাবে। তবে যাঁদের গরম থেকে ত্বকে অ্যালার্জি বেরোয়, তাঁরা উষ্ণস্নান এড়িয়ে চলুন।
এখন অনেকেই বাড়িতে অত্যাধুনিক শাওয়ার সিস্টেম লাগান। সেখানে স্টিমবাথেরও ব্যবস্থা থাকে। তবে এটি খরচসাপেক্ষ। বাজারে পোর্টেবল স্টিম বাথ কিট মেলে। সেখানে থাকে একটি বড় ব্যাগ, যার মধ্যে একজন মানুষ সহজে ঢুকে যেতে পারেন এবং স্টিম মেশিনে বাইরে থেকে পাইপের মাধ্যমে স্টিম ওই ব্যাগে পৌঁছবে। স্পা, জিম বা সালঁয় যদি এই বাথ নেন, তা হলে সুরক্ষাব্যবস্থা দেখে নেবেন। কোভিডের পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ববিধি জরুরি। ছোট পরিসর হলে, একটা সময়ে একজনই তা ব্যবহার করুন। আপনার শরীর ও ত্বকের জন্য ১৫-১০ দিনে একবার স্টিম বা সওনা বাথ যথেষ্ট। একবার নিলেই বুঝতে পারবেন, কতটা রিল্যাক্সড লাগছে। তফাত বুঝবেন নিজের ত্বকেও।
মডেল: নয়নিকা সরকার
ছবি: অমিত দাস
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy