থেরাপিউটিক গার্ডেন আবার তৈরি হয় নানা বিষয়ের কথা মাথায় রেখে।
এখন প্রত্যেক মুহূর্তে বাড়ছে সবুজের প্রাসঙ্গিকতা। বাড়তে থাকা দূষণ, ধুলো-ধোঁয়া, ধ্বংস থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রথম সমাধানের পথ গাছ। গাছ শুধু মাত্র কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেন ফিরিয়ে দেওয়া কিংবা বাড়িতে অথবা পরিবেশে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করে না। গাছের ভূমিকা তার চেয়েও বেশি।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কাচের অফিসঘর, হাসপাতালের দমবন্ধ করা পরিবেশ, আসবাব-খাবারের গন্ধ-রান্নার ধোঁয়ায় ভর্তি ফ্ল্যাটেও তাই থাকছে এক টুকরো সবুজ। কারণ থেরাপিউটিক গার্ডেন এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যত্ন করে ডিজ়াইন করা এই সমস্ত বাগান মানুষের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে। সেটিরই পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে থেরাপিউটিক। কারণ যে অসুখে ওষুধ বা মানুষের সঙ্গও কাজ করে না, সেখানেই বাগান কাজ করে থেরাপি হিসেবে।
নানা ধরন
এই থেরাপিউটিক গার্ডেন আবার তৈরি হয় নানা বিষয়ের কথা মাথায় রেখে। প্রবীণ মানুষের জন্য ভুলে যাওয়ার রোগ থেকে মুক্তি দেওয়ার কাজ করে ডিমেনশিয়া গার্ডেন। বছর কয়েক আগেকার কিংবা সকালবেলার যে স্মৃতি ভুলে যাচ্ছেন বৃদ্ধ মানুষটি, সবুজের নরম আবহ তাকে মনে করাতে সাহায্য করে ফেলে আসা দিনের কথা।
আরও পড়ুন: আশ্রয়হীন হয়ে কাটাতে হয়েছিল একটা সময়, আজ তাঁর হাতের জাদুতে মুগ্ধ মোদী থেকে ওবামা
আবার এএসডি অর্থাৎ অটিজ়ম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের ক্ষেত্রে শিশুদের জন্য বানানো হয় আলাদা করে সেন্সরি গার্ডেন। সেখানে গাছের পাতা, ডাল, ফুল শুঁকে, ছুঁয়ে, দেখে বাচ্চাদের প্রাণ জুড়োয়। অটিজ়মের ক্ষেত্রে বিশেষ যত্ন এবং ধৈর্যের দরকার। গাছের চাইতে বেশি ধৈর্য আর কে বা দিতে পারে!
আছে হিলিং গার্ডেনও। আইসিইউ-এর ঠান্ডা ঘর, ওষুধের গন্ধ, সিরিঞ্জ দেখতে দেখতে ক্লান্ত রোগীটিকে নির্মল আনন্দ দিতে পারে হিলিং গার্ডেন। শুধু রোগী নয়, চিকিৎসক, রোগীর পরিজন, নার্স, অন্যান্য কর্মীদের জন্যও দরকার এই হিলিং গার্ডেন।
আরও যত্ন
এই ধরনের সমস্ত গার্ডেনিংই যে-কোনও মানুষকে সার্বিক ভাবে ভাল রাখতে সাহায্য করে। মানসিক সমস্যার কথা যা অন্য কাউকে বোঝানো যায় না, সে সব কথারও ভাগীদার হয় থেরাপিউটিক গার্ডেন। মনঃসংযোগ বাড়ায়, স্ট্রেস কমায়। শ্বাসের সমস্যায় আক্রান্তরা আবার মুক্ত বাতাস নিতে পারেন। পোস্ট সার্জারির ক্ষেত্রে রোগী সুস্থ হয় তাড়াতাড়ি। ব্লাড প্রেশার কমিয়ে ঠান্ডা মাথায় চিন্তাভাবনা করতেও সাহায্য করে বাগানের এই পরিবেশ।
বাড়িতে থেরাপি
চাইলে নিজের বাড়িতেও বানিয়ে ফেলতে পারেন এই ধরনের থেরাপিউটিক গার্ডেন। তবে তার জন্য মাথায় রাখতে হবে ক’টি কথা।
• বাগান হতে হবে খোলা আকাশের নীচে। সেটি বারান্দা কিংবা ছাদের এক টুকরো অংশ হতে পারে। সেই বাগানে এমন গাছ রাখুন, যাতে
চোখ জুড়োয়। গাছে ফুল ধরলেও তা উপকারী।
• সামান্য বেশি জায়গা থাকলে সেখানে ছোট পুকুর বা বেশ বড় গর্তের ব্যবস্থা করুন। জল ছেড়ে সেই গর্তে রাখতে পারেন রঙিন মাছ।
• ইদানীং চল হয়েছে ইনডোর ফাউন্টেনের। ছোট পোর্টেবল ফাউন্টেন বসিয়ে তাতে জল রাখুন। জলের শব্দও চিন্তা ও নানা অসুস্থতার জট ছাড়াতে সাহায্য করে।
• জায়গা থাকলে রাখতে পারেন বার্ড হাউস। বাগানে পাখির কলকাকলিও মন কাড়বে।
• বাড়ির বাগানে এমন গাছ রাখবেন না, যার গন্ধে মাথা ধরে। ফোয়ারার আশপাশে কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থারও দরকার নেই।
থেরাপির বাগান হবে প্রাকৃতিক। গাছ, জল, প্রাণীর ছোঁয়ায় সেই বাগান যেন অন্য দুনিয়া। সারা দিনের শেষে এক বার সেই বাগানে গিয়ে বসুন। জট তো ছাড়বেই, দিনের শেষে মন ভাল হবে আপনারও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy