লাতিন ‘টেরা’ কথার অর্থ মাটি আর ‘কোটা’ মানে পোড়ানো। আঠালো মাটির সঙ্গে খড়কুটো, তুষ মিশিয়ে কাদামাটি তৈরি করে তা থেকে তৈরি হয় নানাবিধ মূর্তি, সামগ্রী। তার পর রোদে শুকিয়ে আগুনে পুড়িয়ে তৈরি হয় বলে এর নাম টেরাকোটা। সুমেরীয়, মায়া, সিন্ধু সভ্যতার সময়ে টেরাকোটার নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। মৌর্য ও গুপ্ত যুগেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়।
কী ভাবে তৈরি হয় টেরাকোটা?
পোরাস মাটি নেওয়া হয় টেরাকোটার জন্য। হাতে চাপে মাটি দিয়ে নানা সামগ্রী তৈরি করা হয়। এর পরে রোদে শুকিয়ে আগুনে পুড়িয়ে তৈরি হয় টেরাকোটা। প্রায় ৬০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত তাপমাত্রা থাকে। আগে কড়া রোদে শুকিয়ে, তার পর আগুনে পোড়া ছাইয়ের গাদায় বেক করা হত বলে একে বেকড আর্থও বলে। মাটির মধ্যে যে লোহা থাকে, তা আগুনে পুড়ে লালচে খয়েরি বর্ণ ধারণ করে। তাই মাটির গঠনের উপরে নির্ভর করে এর রং পাল্টে যায় কমলা, খয়েরি, লালে।
সামগ্রী ও ব্যবহার
• টেরাকোটার থালা, বাটি, গ্লাসের মতোই তৈরি হয় প্রেশার কুকার, হাঁড়ি ইত্যাদি রন্ধনসামগ্রী। এর দু’টি ধরন আছে। গ্লেজ়ড আর নন-গ্লেজ়ড। গ্লেজ়ড হলে তা বেশ উজ্জ্বল ও মসৃণ হয়, স্থায়ীও হয় বেশি দিন। কিন্তু ব্যবহারবিধি জানতে হবে।
• আনগ্লেজ়ড টেরাকোটা পাত্র রান্নার জন্য প্রস্তুত করতে হয়। প্রথমে পাত্রটি এক গামলা জলে ডুবিয়ে রাখুন। যেহেতু মাটি ছিদ্রযুক্ত হয়, তাই অনেকটা জল শুষে নেবে। সারা রাত জলে রেখে দিন। সকালে উঠে দেখবেন, জল কমে গিয়েছে। খেয়াল করে দেখবেন, মিষ্টির দোকানেও ভাঁড়ে দই বা রসগোল্লা দেওয়ার আগে জলে ডুবিয়ে নেওয়া হয়। না হলে ভাঁড় রস টেনে নেয়।
• জল থেকে তুলে ভাল করে মুছে সাদা তেল বা অলিভ অয়েল লাগিয়ে নিন পাত্রের গায়ে। কোল্ড আভেনে ৩৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় ১ ঘণ্টা বেক করুন। পাত্র মজবুত হবে। আভেনে ব্যবহার করা যাবে কি না তা কেনার সময়ে জেনে নিন। কিছু টেরাকোটা বাসন আভেনে ব্যবহার করা যায়, কিছু আবার খাবার পরিবেশনের জন্য তৈরি।
• এই বাসনে রান্না করার আগে অন্তত পনেরো মিনিট জলে ভিজিয়ে রাখুন। এতে রান্নার সময়ে মাটির পাত্রের গায়ে যে জল থাকবে, তা ধীরে-ধীরে স্টিম বার করে রান্না হতে সাহায্য করবে। এতে রান্নাও ভাল হবে। খুব বেশি আঁচে রাঁধবেন না। কম আঁচে রান্না শুরু করে মাঝারি আঁচে অনেকক্ষণ ধরে রান্না করাই ভাল।
• এই ধরনের পাত্র ধোয়ার সময়ে কড়া ডিটারজেন্ট ব্যবহার করবেন না। গরম জল ও বেকিং সোডা মিশিয়ে তা দিয়ে ধুয়ে নিন। কড়া দাগ তোলার জন্য সারা রাত গরম জল, বেকিং সোডা, নুন দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে পারেন।
অন্দরসজ্জায়: টেরাকোটা শুনলেই বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের ঘোড়ার ছবি ভেসে ওঠে চোখের সামনে। দশভুজা, কৃষ্ণের মূর্তিও পাওয়া যায়। তার সঙ্গে রকমারি লণ্ঠন, ডিফিউজ়ারও পাওয়া যায় টেরাকোটার, যার গায়ে ফিলিগ্রির কাজও করা থাকে। টেরাকোটা টালিও ছাদে ব্যবহার করতে পারেন। এই লালচে টালির ব্যবহারে বাড়ির রূপ তো খুলবেই, সঙ্গে ঘরও বেশ ঠান্ডা থাকবে। তবে এই টালি পরিষ্কার করার সময়ে সাবধান। বৃষ্টির জলে ভিজে শ্যাওলা হয়ে টালি নষ্ট হতে পারে। জলের সঙ্গে বেকিং সোডা বা ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে পাইপ দিয়ে পরিষ্কার করুন।
• শো-পিস থাকলে তা শুকনো কাপড়ে মুছে নিন। গ্লেজ় আগের মতো বজায় রাখতে তেল মালিশ করে রোদে দিয়ে নিন। এতে শো-পিসটি নতুনের মতো থাকবে অনেক দিন।
টেরাকোটা কি বায়োডিগ্রেডেবল?
অনেকেরই ধারণা, টেরাকোটা মাটি দিয়ে তৈরি বলে সহজেই প্রকৃতিতে মিশে যায়। কিন্তু সত্যিটা উল্টো। মাটি থেকে তৈরি হলেও যেহেতু উচ্চ তাপমাত্রায় এটি প্রস্তুত করা হয়, মাটির রাসায়নিক গঠন পাল্টে যায়। ফলে তা জল ও বায়ুতে আর দ্রবীভূত হয় না। টেরাকোটার জিনিস নষ্ট হয়ে গেলেও তা মাটিতে মিশে যায় না। সেই জন্য বিভিন্ন সভ্যতায় তৈরি হওয়া টেরাকোটার জিনিস এখনও বিভিন্ন আর্কিয়োলজিক্যাল সাইটে অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি বলে এটি পরিবেশবান্ধব।
টেরাকোটার গয়না, আসবাবও বিক্রি হয়। অন্দরসজ্জায় ব্যবহার করলে ভাল দেখায়, মাটির গন্ধও থাকে রোজকার যাপনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy