Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Taslima Nasrin

Taslima Nasrin: আমি ঘন ঘন প্রেমে পড়ি, কিন্তু ভুল মানুষের, আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন তসলিমা নাসরিন

তাঁর লেখক জীবনের ওঠাপড়া নিয়ে চর্চা হয় সব জায়গায়। জন্মদিনে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি তসলিমা।

আমি কখনওই রেখেঢেকে কথা বলি না।

আমি কখনওই রেখেঢেকে কথা বলি না। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

রিচা রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২২ ১০:৫৪
Share: Save:

রাখঢাকে তিনি বিশ্বাস করেন না। নির্ভীক, স্পষ্ট উচ্চারণ তাঁর আজন্মের স্বভাব। সে জন্য মাশুলও গুনেছেন। তবু ভয় পেয়ে থেমে যাননি। আফসোসও নেই। এমনই থাকতে চান। চালিয়ে যেতে চান লেখালিখিও। অবসর যাপন থেকে একাকিত্ব, রোগা হওয়ার রহস্য— জন্মদিনে আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে অকপট নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন।

প্রশ্ন: শুভ জন্মদিন, কেমন আছেন?

তসলিমা: ধন্যবাদ। বেঁচে আছি। শরীর ঠিক আছে।

প্রশ্ন: ১৬ অগস্ট ফের প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন। এই নিয়ে কত নম্বর হল? গুনেছেন?

তসলিমা: (খানিক হেসে..) অগুনতি। কোনও হিসেব নেই। বাংলাদেশে থাকাকালীন তিন-চার বার পেয়েছিলাম। ভারতে এই নিয়ে বোধহয় পাঁচ বার। এ বারের ‘ডেথ থ্রেট’ এসেছে পাকিস্তান থেকে।

প্রশ্ন: সিধু মুসেওয়ালাকে প্রকাশ্য রাস্তায় গুলি করা হয়েছে। নিউ ইয়র্কের মঞ্চে সলমন রুশদির উপর হামলা। ভয় পাচ্ছেন?

তসলিমা: দেখুন, গত ৩০ বছর ধরে প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছি। এগুলি নিয়েই তো বেঁচে আছি। তবে ভয় যে পাই না, তা নয়। এখন কথা হচ্ছে, ভয় পেয়ে গুটিয়ে থেকে স্বাভাবিক জীবনযাপন, লেখালিখি বন্ধ করে দেওয়ার তো কোনও মানে হয় না। ভয়ে লেখা বন্ধ করে দেওয়া মানে তো মৃত্যুরই সমান। তাই সতর্ক থাকি। সাবধানে থাকার চেষ্টা করি।

প্রশ্ন: চিরকালই আপনি স্পষ্টবক্তা, ‘পলিটিক্যালি কারেক্ট’ কথা বলার প্রয়োজন কখনও বোধ করেছেন?

তসলিমা: আমি কখনওই রেখেঢেকে কথা বলি না। আর কেনই বা বলব? আমি সব সময় সরাসরি কথা বলি। যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে। এমনকি, দুর্বোধ্য কোনও শব্দ লেখাতেও ব্যবহার করি না। আমার লেখা কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস এমনই সরল-সহজ। অপ্রিয় হলেও সত্যিটা আমি তুলে ধরবই।

প্রশ্ন: ফেসবুকে লিখেছিলেন, ভাল স্তন না হলে খোলামেলা পোশাক পরা অনুচিতআপনার এই মন্তব্যে তো অনেকেই অপমানিত বোধ করেছিলেন...

তসলিমা: এটা আমার মনে হয়েছে। অনেকেই হয়তো এমনটাই ভাবেন। কিন্তু বলেন না। আমি বলেছি। কিন্তু এটা একেবারেই ‘বডি শেমিং’ নয়। শুধু মাত্র আমার মত। আমি রূপ আর সৌন্দর্যের চেয়ে মস্তিষ্ককে সারা জীবন বেশি গুরুত্ব দিয়ে এসেছি। মেয়েদের কেন সাজতে হবে? চিরকালই আমি এর বিরোধিতা করে এসেছি। পাশাপাশি আবার এটাও মনে হয়েছে, মেয়েদেরই তো সাজ-পোশাক, প্রসাধনীতে এত বৈচিত্র আছে। ফলে কারও যদি ইচ্ছা এবং সামর্থ্য— দুই-ই থাকে, তিনি নিজেকে মনের মতো করে সাজাতেই পারেন।

আমি খুব বেশি সাজগোজ করি না।

আমি খুব বেশি সাজগোজ করি না। ছবি-সংগৃহীত

প্রশ্ন: আপনি সাজগোজ করতে ভালবাসেন?

তসলিমা: আমি খুব বেশি সাজগোজ করি না। ঘরে যা পরে থাকি, সেটা পরেই বেরিয়ে যাই। তবে শাড়ি পরলে সে দিন হয়তো হালকা করে একটু কাজল লাগালাম। একটা টিপ পরলাম। আসল কথা হল, আমি সাজগোজ করতে পারি না। কী করে সাজতে হয় তা-ও জানা নেই।

প্রশ্ন: সম্প্রতি এক ধাক্কায় ২৪ কেজি ওজন ঝরালেন! কড়া ডায়েট মেনে চলেছিলেন নিশ্চয়?

তসলিমা: এটা আসলে খানিক বাধ্য হয়েই করতে হল। ২০২০, এপ্রিল মাসে আমার কোভিড হয়েছিল। ২০২১-এ ধরা পড়ল লিভার ফাইব্রোসিস। বহু চিকিৎসককে দেখিয়েছি। সকলেরই একটাই পরামর্শ, এই রোগের কোনও ওষুধ নেই। তবে অনেকটা ওজন কমিয়ে ফেললে, সুস্থ থাকা সম্ভব। নয়তো ধীরে ধীরে লিভার যদি কাজ করা বন্ধ দেয়, অবধারিত মৃত্যু। আমি বাঁচার জন্য সব করতে পারি। আমার তখন ওজন ছিল ৭৯ কেজি। তা কমিয়ে ৫৪-এ নিয়ে এসেছি। এখন আমি ভাল আছি। ডায়াবিটিস, হাইপারটেনশনের সমস্যাটাও আর এখন নেই।

প্রশ্ন: ছিপছিপে শরীর পাওয়া নিশ্চয়ই সহজ ছিল না?

তসলিমা: সত্যি কথা বলতে, আমি তেমন কোনও নিয়ম মানিনি। মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করেছিলাম। প্রথম দিকে ভাত-রুটি খেতাম না। তবে এখন আবার খাচ্ছি।

প্রশ্ন: রোগা হওয়ার ডায়েটের তালিকায় কী কী ছিল?

তসলিমা: প্রচুর শাকসব্জি ছিল। নানা ধরনের মাছ খেতাম। মটনটা বাদ দিয়েছিলাম। প্রচুর ফলও খেতাম। তবে নিয়ম করে রোজ এক ঘণ্টা করে ট্রেডমিলে হাঁটতাম অথবা সাইকেলে। সিনেমা দেখতে দেখতে ট্রেডমিলে হাঁটতাম।

প্রশ্ন: রোগা হওয়ার পর আপনার পোশাকেও খানিকটা বদল এসেছে বলে মনে হচ্ছে!

তসলিমা: (হাসি)...হ্যাঁ। এখন শাড়ি ছেড়ে জিনস্‌, শার্ট বেশি পরছি। আগের জামাকাপড় সব তুলে রেখে দিয়েছি। এখন আলমারিতে সব নতুন পোশাক জায়গা পেয়েছে। আগে শাড়ি দিয়ে মেদ ঢেকে রাখতে হতো। এখন তো সে সবের ঝামেলা নেই। জিনসে্‌র সঙ্গে শার্ট গুঁজেও পরতে পারছি। আগে যা পরতে পারিনি, এখন সব ইচ্ছেমতো পরে নিচ্ছি।

আমাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য মিনু আছে।

আমাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য মিনু আছে। ছবি-সংগৃহীত

প্রশ্ন: জন্মদিনে কী পরিকল্পনা?

তসলিমা: জন্মদিন নিয়ে এখন আর আগে থেকে কিছু ভাবি না। একটা সময় একুশ পদে রান্না করতাম। সবাই আসত। আপ্যায়ন করতাম। এ বার আমি ভেবেছি, কিছুই করব না। কাউকে নিমন্ত্রণও করিনি। কলকাতা থেকে কয়েক জন বন্ধুর আসার কথা। তাঁদের নিয়ে হয়তো রাতে রেস্তরাঁয় খেতে যাব।

প্রশ্ন: অবসর কাটে কী ভাবে?

তসলিমা: নিজেকে নিজে সঙ্গ দিয়ে। তবে একেবারে একা নই। মিনু (১৯ বছর বয়সি পোষ্য বিড়াল) আছে। মাঝেমাঝে একা খেতে চলে যাই। আমি একা থাকাতে অভ্যস্ত। খারাপ লাগে না। পৃথিবী ঘুরেছি একাই। সিনেমা দেখতে যাই। প্রথম দিন গিয়েই ‘লাল সিংহ চড্ডা’ দেখে এসেছি। আমার ভাল লেগেছে। ‘ফরেস্ট গাম্প’ তো আমার বহু বার দেখা। মুখস্থ হয়ে গিয়েছে। কোনও সিনেমা বা বই বয়কট করা হলে তা আমি সবার আগে দেখি এবং পড়ি।

প্রশ্ন: রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব এলে কী করবেন?

তসলিমা: ফিরিয়ে দেব। সব কিছু সবার জন্য নয়। লেখালিখিই মানুষের জন্য কাজ করা। আমার প্রত্যেকটি লেখা মানবতার কথা বলে। বৈষম্যহীনতার কথা বলে। মানুষের কথা ভেবেই আমার লেখার জন্ম।

প্রশ্ন: শেষ কবে প্রেমে পড়েছেন?

তসলিমা: (লাজুক গলায়) আমি তো ঘন ঘন প্রেমে পড়ি। তবে ভুল মানুষের। কিছু দিন পর বুঝতে পারি নির্বাচন ভুল হয়েছে। আসলে ভাল লাগলে অনেক কিছু আবার প্রথম দিকে চোখেও পড়ে না। ধীরে ধীরে বুঝি। তাই বলে হৃদয়ের দরজা বন্ধ করি না।

প্রশ্ন: নির্বাসন যদি তুলে নেওয়া হয়, বাংলাদেশ নাকি কলকাতা, কোথায় আগে পা রাখবেন?

তসলিমা: সবার আগে কলকাতায় যাব। কলকাতা আমার প্রিয় শহর। বাংলাদেশ এখনও আমার জন্য নিরাপদ নয়। পশ্চিমবঙ্গ আমার জন্য সুরক্ষিত বলে মনে করি। কলকাতা থেকে আমাকে বিতাড়িত করা হয়েছিল রাজনৈতিক কারণে। তবে আমি জানি, এ জীবনে বয়কট তুলে নেওয়া হবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Taslima Nasrin Birthday poet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy