এক স্বাস্থ্য সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতে প্রতি দশ জনের মধ্যে অন্তত সাত জন শিশু ‘ওরাল হেলথ’ সংক্রান্ত সমস্যায় ভোগে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর একটা বড় কারণ সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব। অনেক সময়েই বাবা-মায়েরা মনে করেন, তাঁর সন্তানের ওরাল হেলথ ভালই রয়েছে। যদিও চেকআপের সময়ে দেখা যায় ব্যাপারটা একেবারেই উল্টো। ছোটবেলা থেকে এই সমস্যার যদি ঠিকমতো নিরাময় না হয়, তা হলে এর থেকে আগামী দিনে অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। ওরাল হেলথ সংক্রান্ত সমস্যা এবং তার নিরাময় হবে কী ভাবে, জানব একে একে...
সদ্যোজাতের ক্ষেত্রে
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অপূর্ব ঘোষ বললেন, ‘‘সদ্যোজাত শিশুরা সাধারণত মায়ের দুধ খায় অথবা বোতল থেকে দুধ টানে। এ ক্ষেত্রে কিন্তু নিপল পরিষ্কার রাখা খুবই জরুরি। না হলে শিশুদের মুখের মাড়ি, জিভ, ঠোঁট এমনকি গালের ভিতরে এক ধরনের ফাঙ্গাস জন্মায়, যার নাম ‘ক্যানডিডা অ্যালবিক্যাপ’। এটা খুবই যন্ত্রণাদায়ক।’’ ডা. ঘোষের পরামর্শ, শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে এবং তাঁকে নিপল পরিষ্কার রাখতে হবে। যদি একান্তই তা সম্ভব না হয়, তবে বোতলের বদলে বাটি, চামচ ব্যবহার করাই শ্রেয়। খাওয়ানোর আগে বাটি, চামচ প্রত্যেক বার গরম জলে ফুটিয়ে নিতে হবে। অনেকে শিশুকে হাতে খাওয়ান। এ ক্ষেত্রেও হাতের বদলে চামচ ব্যবহার করা উচিত। যদি একান্তই হাতে খাওয়াতে হয়, তা হলে খাওয়ানোর আগে খুব ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে হাত। আর, নিপল অথবা দুধের বোতল মুখে নিয়ে শিশুকে কখনও ঘুমোতে দেওয়া উচিত নয়।
দাঁত বেরোলে ও পরে
দাঁত বেরোনোর পরে অনেক সময়ে মায়েরা শিশুদের মুখে অনেকক্ষণ ধরে বোতল বা নিপল দিয়ে রাখেন। বুকের দুধ অথবা বেবি ফুড-এ যে সুগার রয়েছে, তা দাঁতে লেগে থাকে। ব্যাক্টিরিয়া এই সুগারকে অ্যাসিডে পরিণত করে, যা দাঁতের এনামেল নষ্ট করে দেয়। এর ফলে দাঁতে ক্যারিজ় হয়, যাকে বলা হয় ‘মিল্ক বটল ক্যারিজ়’। মূলত উপরের পাটির দাঁতে এই সমস্যা দেখা যায়। তাই ডা. ঘোষের মতে, যে সব খাবারে মিষ্টির পরিমাণ বেশি, তেমন কিছু খাওয়ানোর পরেই মুখ ধুইয়ে দিতে হবে বাচ্চাকে। তবে ১ থেকে ১০— যে কোনও বয়সের শিশুরই বেশি মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া উচিত নয়। মোটামুটি দেড়-দু’বছর বয়স থেকেই শিশুদের ব্রাশ করার অভ্যেস শুরু করা উচিত। ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের টুথপেস্ট পাওয়া যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেই সব ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, কতখানি পেস্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে যেমন ব্রাশের সময়ে ছোট মটরশুঁটির আকারের পেস্ট নেওয়া যেতে পারে। একটু আধটু টুথপেস্ট পেটে গেলে শিশুদের কোনও ক্ষতি হয় না। ৭-৮ বছর বয়স পর্যন্ত অভিভাবকদের তত্ত্বাবধানে শিশুদের ব্রাশ করা উচিত। যাদের দাঁতের সমস্যা রয়েছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শমতো ট্রপিকাল ফ্লোরাইড (যেমন জেল, ফোম ইত্যাদি) ব্যবহার করতে পারে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা
• একটু বড় শিশুদের ক্ষেত্রে দিনে অন্তত দু’বার ব্রাশ করা উচিত। সকালে উঠে এবং রাতে শুতে যাওয়ার আগে।
• নিজেদের এঁটো চামচ বা বাসনে শিশুদের খাওয়ানো উচিত নয়।
• কোনও কিছু খাওয়ার পরে মুখ ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। যদি তা করা সম্ভব না হয়, তা হলে শিশুকে খানিকটা জল খাওয়াতে হবে। এতে দাঁতের উপরে লেগে থাকা খাবারের কণাগুলি ধুয়ে যায়।
• শিশুদের ব্রাশ বড়দের ব্রাশের থেকে আলাদা রাখা উচিত। প্রয়োজনে তাতে ক্যাপ পরিয়ে রাখতে হবে। সময়ে সময়ে দেখতে হবে, ক্যাপটি পরিষ্কার রয়েছে কি না।
• ব্রাশের অবস্থা বুঝে তা পাল্টানো উচিত। বেশি শক্ত ব্রাশ ব্যবহার করা উচিত নয়। তাতে মাড়ি ও দাঁত, দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
• ব্রাশ করার সময়ে সোজাসুজি না ঘষে, আলতো ভাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ব্রাশ করতে হবে।
শিশুরা মুখে আঙুল দেবেই। এটা তাদের সহজাত ধর্ম। এটিকে ইংরেজিতে ‘ওরাল স্টেজ অব ডেভেলপমেন্ট’ বলে। তবে সেটা দাঁতের অ্যালাইনমেন্ট-এর ক্ষতি করে, এমন কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত মেলেনি বলেই জানালেন ডা. ঘোষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy