Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
শান্তিনিকেতন থেকে ‘সান্দোকান’... তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে বিবিধ রত্ন। আন্তর্জাতিক তারকা কবীর বেদীর সাজ সম্পূর্ণ হল তাঁর ব্যক্তিত্বে
kabir bedi

Kabir Bedi: মহারাজ, একি সাজে...

সম্প্রতি আনন্দলোক শর্ট কাট, শর্ট ফিল্ম কনটেস্টে বিচারক হিসেবে কলকাতায় আগমন কবীর বেদীর। বৈশাখের তপ্ত দুপুরে তাঁর সাজপর্ব শুরুর পালা।

নবনীতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২২ ০৭:৩০
Share: Save:

এবঙ্গের সঙ্গে তাঁর যোগসূত্র আজকের নয়, ছেলেবেলা থেকেই সে বন্ধন সুদৃঢ়। বিশ্বের দরবারে সুপরিচিত মানুষটির জীবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতে। আমবাগানে পড়াশোনা, বৃষ্টিভেজা বিকেলে মাঠে ফুটবল পায়েই কেটেছে তাঁর শান্তিনিকেতনের দিনগুলো। ইটালিয়ান টিভি সিরিজ়ের ‘সান্দোকান’-এর মন যে শান্তিনিকেতনে বাঁধা, তা বুঝতে বেশি সময় লাগে না। যেমন তাঁর পরিমার্জিত ব্যবহার, তেমনই রুচিবোধ। পড়াশোনা শেষে তাঁর কর্মজীবনের শুরু দিল্লিতে, অল ইন্ডিয়া রেডিয়োয়। ব্যারিটোন কণ্ঠস্বর রেডিয়োয় তাঁকে পরিচিতি এনে দিয়েছিল দ্রুত। তবে শুধু কণ্ঠস্বর নয়, ভাষা নিয়েও তাঁর চর্চা কম নয়। দেশি-বিদেশি ভাষার সঙ্গে স্থানীয় ভাষা শিখতেও বরাবর জোর দিয়েছেন। পরিষ্কার বাংলায়, ‘একলা চলো রে’-র গানের কলি ভেসে এল তাঁর কণ্ঠে। বাঁকাচোরা অবাঙালি সুরের বাংলায় সত্তরোর্ধ্ব মানুষটির ঘোর আপত্তি।

সম্প্রতি আনন্দলোক শর্ট কাট, শর্ট ফিল্ম কনটেস্টে বিচারক হিসেবে কলকাতায় আগমন কবীর বেদীর। বৈশাখের তপ্ত দুপুরে তাঁর সাজপর্ব শুরুর পালা। এক মুখ হাসি নিয়ে এসে সামনে দাঁড়ালেন তিনি। দীর্ঘকায় চেহারা এতটুকু ন্যুব্জ নয় বয়সের ভারে। সুদর্শন মানুষটির পরনে তখন একেবারে বিদেশি কাটের প্যান্টস-শার্ট। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই এথনিকে নিজেকে সাজিয়ে নিলেন। পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে নিয়ে বসলেন মেকআপে।

অতিরঞ্জিত সাজ তাঁর পছন্দ নয়। দাড়ির ব্যাপারে বেশ সচেতন। কবীরের কথায়, ‘‘একাধিক ইটালিয়ান সিরিজ় করেছি। হিন্দি ছবি ‘কাচ্চে ধাগে’, ‘খুন ভরি মাঙ্গ’, তার সঙ্গে জেমস বন্ড মুভি ‘অক্টোপুসি’তেও অভিনয় করেছি। চরিত্রের প্রয়োজনে চুল বাড়িয়েছি, কখনও চুল কেটেছি। কিন্তু দাড়িতে হাত দিইনি। দাড়িই আমার সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করি। বলিউডে ‘কাচ্চে ধাগে’তে দাড়ি নিয়ে যখন জনপ্রিয়তা পেলাম, তখনই বুঝেছিলাম এ আমার চিরসঙ্গী।’’ কথা শেষ করে এক বার হাত বুলিয়ে নিলেন নিজের চিবুকে।

নিজেই পোশাক বেছে লুক তৈরি করে নিলেন নিমেষে। হলুদ শেরওয়ানি ও পাজামা পরলেন মোজরি দিয়ে। পরের লুকে বেছে নিলেন ধুতি। উপরে কাঁথা কাজের পাঞ্জাবি। ধুতি পরে কোঁচা হাতে বেরিয়ে এলেন ড্রেসিং রুম থেকে, ‘‘এটা পকেটে রাখব? নাকি হাতে নেব?’’ স্বগতোক্তি করে বেশ কয়েকবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে নিলেন কোনটায় তাঁকে ভাল লাগছে। কোঁচা হাতে নিয়েই চললেন শুটিং লোকেশনের দিকে। তার পরেই আবার রুমে এসে চোখের পলকে পাঞ্জাবি বদলে নীল সুটে প্রস্তুত।

ফ্যাশনকে কোনও ব্র্যান্ডে সীমাবদ্ধ রাখায় ঘোর আপত্তি তাঁর। ‘‘ফ্যাশনেবল হওয়া মানে ব্র্যান্ড-সচেতন হওয়া নয়। কয়েকটি বিশেষ ব্র্যান্ডে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখলে ফ্যাশনও সেই সীমায় বাঁধা পড়বে। আমি কেমন মানুষ, তারই প্রকাশ সাজগোজে। প্রথম দর্শনে মানুষ সাজপোশাক দেখেই আমার সম্পর্কে ধারণা করবে। তাই নিজেকে সে ভাবে উপস্থাপিত করা জরুরি, যে ভাবে আমি নিজেকে দেখি। তার জন্য সবসময়ে ব্র্যান্ডেড পোশাকের দরকার পড়ে না। রাস্তার ধারের দোকান থেকেও সুন্দর জিনিস পাওয়া যায়। নিজের লুকের সঙ্গে কী মানাবে, কোনটা পরে কমফর্ট জ়োনে রয়েছি, সেগুলো দেখতে হবে,’’ বললেন কবীর।

লকডাউনে বসে তিনি শেষ করেছেন তাঁর আত্মজীবনী ‘স্টোরিজ় আই মাস্ট টেল’। সেখানেও উঠে এসেছে তাঁর এই জীবনবোধ, যা প্রতিফলিত হয় তাঁর সাজপোশাকে। দেশবিদেশের বিভিন্ন জায়গায় যখন শুটিং করতে গিয়েছেন, মিশেছেন স্থানীয়দের সঙ্গে। ‘‘তাঁদের কথাবার্তা, পোশাকআসাকের সঙ্গে একাত্ম হতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হল অ্যাডপ্ট করা। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া একটা আর্ট। প্রত্যেক মানুষের কাছ থেকে কিছু না কিছু শিখেছি, গ্রহণ করেছি।’’ আর যে পোশাক তাঁর ঘরানার বলে মনে করেন না, তা কিন্তু একেবারেই পরেন না।

বয়সের হাতে নিজেকে সঁপে না দিয়ে, বয়সকে হাতের মুঠোয় নিয়ে চলতে পছন্দ করেন অভিনেতা। কবীরের কথায়, ‘‘আমার শরীরের বয়স বাড়তে পারে। মনের বয়স বাড়তে দিইনি। পঞ্চাশ বছর হওয়ার পর থেকে জন্মদিনে বয়স আর বাড়েনি। এখনও প্রতি বছর আমার পঞ্চাশতম জন্মদিনই পালন করি,’’ বলেই একগাল হাসি ছড়িয়ে দিলেন। ভাঁজ পড়ল তাঁর মসৃণ দুই চিবুকে। খেয়াল হল, সত্যি তাঁর ত্বকে তেমন বলিরেখা নেই! কবীর বেদী মনে-মনে এখনও যেন সেই ‘সান্দোকান’।

অন্য বিষয়গুলি:

kabir bedi Style Statement
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy