করোনা আক্রান্তকে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। ছবি: শাটারস্টক
সামান্য জ্বর আর গলা ব্যথা নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে সোয়াব টেস্ট হল। জানা গেল আপনার করোনা পজিটিভ, তবে উপসর্গ অত্যন্ত মৃদু এবং অন্য কোনও ক্রনিক অসুখ নেই। বয়সও খুব বেশি নয়। তাই বাড়িতে থেকে অবস্থার সামাল দিতে হবে। কোভিড-১৯ পজিটিভ যখন বাড়িতে থাকবেন, তাঁকে কিছু নিয়ম মেনে চলার সঙ্গে সঙ্গে নির্দিষ্ট ঘেরাটোপের মধ্যে থাকতে হয়।
বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায় জানালেন যাঁদের কোনও উল্লেখযোগ্য কোমর্বিডিটি নেই, বয়স খুব বেশি নয় এবং নিজেই নিজের খেয়াল রাখতে পারবেন একমাত্র সেই সব করোনা পজিটিভদের বাড়িতে পর্যবেক্ষণে রাখা যেতে পারে। আক্রান্ত মানুষটি এমন একটি ঘরে থাকবেন যেখানে সংলগ্ন বাথরুম আছে, তাঁকে স্নান বা অন্য কারণে ঘরের বাইরে যেতে না হয়। বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে তাঁকে থাকতে হবে ১৪ দিন। করোনা আক্রান্ত মানুষটি হোম আইসোলেশনে থাকাকালীন ঘরের দরজা বন্ধ রাখা দরকার। তবে বাইরের দিকে জানলা থাকলে তা খুলে রাখতে হবে। রোগীর অবস্থা স্টেবল আছে কি না জানতে নিয়মিত তাঁকে মনিটরিং করা আবশ্যক, বললেন যোগীরাজ।
আরও পড়ুন: সপ্তাহে দু’দিন লকডাউনে গোষ্ঠী সংক্রমণ কি আটকানো যাবে?
করোনা পজিটিভ মানুষ হোম কোয়রান্টিনে থাকলে বাড়িতে অবশ্যই একটি কার্যকর পালস অক্সিমিটার রাখতে হবে, বললেন আলিপুরদুয়ারের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী। নিয়মিত আক্রান্তের শরীরের অক্সিজেনের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করা দরকার। কেননা কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণের ফলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে, বিশেষত ফুসফুসের সূক্ষ্ম রক্তজালিকায় জমাট বাঁধা রক্তের ডেলা (ব্লাড ক্লট) আটকে যায়। এর ফলে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যেতে পারে। কিন্তু রোগী বিশ্রামে থাকায় তাঁর শ্বাসকষ্ট বা অন্য সমস্যা খুব একটা বোঝা যায় না। এই ব্যাপারটাকে বলে হ্যাপি হাইপক্সিয়া, বললেন সুবর্ণ।
দরজার বাইরে ঢাকা দেওয়া খাবার রাখতে হবে করোনা আক্রান্তের জন্য। —শাটারস্টক।
পালস অক্সিমিটার দিয়েই প্রত্যেক দিন নিয়ম করে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা পরীক্ষা করতে হবে। দরকার মত দিনে ৩ – ৪ বার অক্সিজেনের মাত্রা পরীক্ষা করে নিন। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৪ এর থেকে কম হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে কিংবা বাড়িতে অক্সিজেন দেওয়া দরকার। নইলে রোগীর অবস্থা আচমকা খারাপ হয়ে যেতে পারে বললেন যোগীরাজ। করোনা আক্রান্ত মানুষটি যদি অন্য কোনও শারীরিক কষ্ট বোধ করেন তাহলে দ্রুত বাড়ির অন্যদের বিষয়টা জানানো উচিৎ। প্রয়োজন মনে করলে কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার।
যোগীরাজ রায় জানালেন যাঁদের ব্লাড প্রেশার বা ডায়বিটিস নিয়ন্ত্রণে আছে এবং সামগ্রিক ভাবে ভাল স্বাস্থ্য তাঁরাও যদি কোভিড পজিটিভ হন বাড়িতে থাকতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। সুবর্ণ গোস্বামী জানালেন বাড়িতে করোনা আক্রান্ত থাকলে বাড়ির অন্য সদস্যদের অনেক বেশি সাবধান থাকতে হবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেকেরই যথাযথ মাস্ক পরে থাকা দরকার। একাধিক বার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া-সহ সামগ্রিক পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা দরকার। কোভিড আক্রান্তদের উপসর্গ কম হলেও সাবধানতা হিসেবে কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। নিয়ম করে সেই ওষুধ খাওয়া উচিৎ। রোগীকে টাটকা বাড়িতে রান্না করা খাবার খেতে দিতে হবে। দরজার বাইরে চাপা দিয়ে খাবার রেখে দেওয়া যায়। অকারণে হাসপাতালের শয্যা আটকে রাখলে যার প্রকৃত দরকার তাঁরা অক্সিজেন ও চিকিৎসা পাবেন না। তাই অল্প বয়স বা উপসর্গ অনেক কম তাঁদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করা উচিৎ বলে মনে করেন সুবর্ণ। যাঁদের বাড়িতে আলাদা ঘর বা আইসোলেশনে থাকার জায়গার অভাব তাঁদের অবশ্যই সরকারি কোভিড কোয়রান্টিন সেন্টারে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রাণায়াম জাতীয় শ্বাসের ব্যায়াম করা দরকার সুস্থ থাকার জন্য। —শাটারস্টক।
অনেক সময় আচমকা কোভিড পজিটিভ রোগীর মারাত্মক শ্বাসকষ্ট দেখা যেতে পারে। তাঁরা দাবি করেন, আগে কোনও উপসর্গ ছিল না। এই দাবি মানতে রাজি নন যোগীরাজ। তাঁর মতে বেশিরভাগ তথাকথিত অ্যাসিম্পটোমেটিক করোনা পজিটিভের কোনও না কোনও উপসর্গ থাকেই। অল্প গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা বা কাশি থাকলেও তাঁরা ডিনায়াল মোডে থাকেন। নিজেকেই আশ্বস্ত করেন আমার করোনা হতেই পারে না। এসি তে থাকার জন্যে এরকম হয়েছে। এই বলে ঘুরে বেড়ান আর রোগ ছড়ান। এদের মধ্যে অনেকেরই আচমকা শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তাই কোনও রকম শারীরিক অসুবিধেকে অগ্রাহ্য করতে মানা করলেন দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই। টাটকা খাবার, ফল, সবজি, দুধ বা দই খাবারের তালিকায় থাকলে আলাদা করে ভিটামিন খাবার দরকার নেই বলে অভিমত চিকিৎসকদের। তবে গৃহবন্দী থাকার সময় নিয়ম করে সকাল সন্ধ্যে প্রাণায়াম জাতীয় শ্বাসের ব্যায়াম করলে ভাল থাকা যায়।
আরও পড়ুন: রসুন কি রোজ খাবেন? কতটা, কীভাবে খেতে হবে?
বড়রা নির্দিষ্ট ঘরে হোম কোয়রান্টিনে থাকতে পারলেও বাচ্চাদের এক ঘরে আটকে রাখা বেশ মুশকিল বললেন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ শমীক ঘোষ। তবে এটাও ঠিক কোভিড আক্রান্ত হলে বাচ্চাদের সেরকম কোনও উল্লেখযোগ্য শারীরিক সমস্যা না থাকলেও তাদের থেকে বাড়ির বড়দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি খুব বেশি।
শমীক জানালেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী মা, বাবা, মাসি বা পিসি যে কোনও একজনকে বাচ্চার দেখভালের দায়িত্ব নিতে হবে। বাড়ির বয়স্ক মানুষদের বাচ্চার থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা বাধ্যতামূলক। শিশুটিকে গল্প বলে নানান খেলার মাধ্যমে ভুলিয়ে ঘরে আটকে রাখার পাশাপাশি তার শারীরিক অবস্থার ওপর নজর রাখতে হবে। গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে, নিজেদের সাবধান হতে হবে। যথাযথ মাস্ক পরে ও মানুষে মানুষে দূরত্ব বজায় রেখে কোভিড-১৯ কে দূরে রাখুন। ভাল থাকুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy