পরিচ্ছন্নতা মেনে চললে এই রোগজীবাণুদের অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব।
মায়ের জঠরই বোধহয় শিশুর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ। সেখান থেকে যেই না সে পৃথিবীতে পা রাখে, অমনি চার দিক থেকে ধুলো, ধোঁয়া, ব্যাকটিরিয়া, ভাইরাস ছুটে আসে ছোট্ট শরীরটাকে কাবু করতে। চার পাশে দূষণ যে হারে বাড়ছে, তাতে বাচ্চাকে নীরোগ রাখা অসম্ভব। কিন্তু কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে ঘন ঘন অসুখে পড়ার হাত থেকে অনেকটাই রেহাই মেলে।
সদ্যোজাতের হাইজিন
সদ্যোজাতকে কোলে নেওয়ার আগে হাত ভাল করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নেবেন। বাইরে থেকে এলে জামাকাপড় বদলে তবেই বাচ্চাকে কোলে নেওয়া উচিত।
শিশুকে অনেকেই ডায়পার পরিয়ে রাখেন। একটা ডায়পার চার ঘণ্টার বেশি ব্যবহার না করাই ভাল। প্রতি বার ডায়পার ছাড়িয়ে বেবি ওয়াইপ দিয়ে শিশুর ডায়পার এরিয়ার সামনে থেকে পিছনের দিকে মুছে দিতে হবে। একগাদা পাউডার মাখানোর প্রয়োজন নেই। বরং নরম কাপড় দিয়ে শুকনো করে মুছে ডায়পার র্যাশ ক্রিম লাগিয়ে রাখলে র্যাশের সম্ভাবনা কমে।
স্নানের সময়ে শিশুর প্রাইভেট পার্টস এরিয়া ভাল করে ধুয়ে দিতে হবে। মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রতি বার টয়লেট করার পরে ওই জায়গা জল দিয়ে ধুয়ে দিন। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অপূর্ব ঘোষ জানালেন, ছেলেদের ক্ষেত্রে যাদের ফাইমোসিস থাকে, তিন-চার বছরে তাদের ফাইমোসিস খুলে যায়। সেই সময়ে জায়গাটা পরিষ্কার করে দিতে হয়।
দু’-তিন মাস বয়স থেকেই দিনে অন্তত দু’বার পাতলা পরিচ্ছন্ন কাপড় আঙুলে জড়িয়ে খুব আলতো হাতে শিশুর মাড়ি পরিষ্কার করে দিন। মাড়ি শক্ত হয়ে দাঁত উঁকি দিলে ফিঙ্গার ব্রাশও ব্যবহার করতে পারেন। তবে সাবধানে পরিষ্কার না করলে শিশুর নরম মাড়ি ছড়ে যেতে পারে। ফুটন্ত জলে ধুয়ে ফিঙ্গার ব্রাশ ব্যবহার করুন। দাঁত ওঠার সময়ে বাচ্চা সব জিনিস মুখে দেয়। তাই মেঝে, কার্পেট পরিষ্কার রাখুন। এই সময়ের জন্য টিদার বা গাম সুদার ব্যবহার করলে সেগুলোকে ফুটন্ত জলে ধুয়ে তবে শিশুর হাতে দিন। তবে এই ধরনের প্রডাক্ট যত কম ব্যবহার করা যায়, ততই ভাল। তার চেয়ে ও নিজের আঙুল কামড়াক।
স্কুল শুরুর পরে
বাচ্চা স্কুল থেকে ফেরার পরেই ওর জামাকাপড় পাল্টে হাত-মুখ ধুইয়ে দিন। গরম কালে বাচ্চার পা ভীষণ ঘামে। তাই পা খোলা জুতো পরান ও নিয়মিত পরিষ্কার করুন। পা-ঢাকা জুতো পরাতে হলে সুতির মোজা পরিয়ে জুতোটা পরান। নয়তো জুতোয় ঘাম জমে পায়ে র্যাশ বেরোনোর সম্ভাবনা থাকে।
কিছু খাওয়ার সময়ে বাচ্চারা সেটার জন্য বায়না করলে, অনেকেই নিজের আধখাওয়া খাবারটাই বাচ্চার মুখে তুলে দেন। এতে হয়তো আপনার স্নেহ ঠিকরে বেরোতে পারে, কিন্তু বাচ্চার স্বাস্থ্যের পক্ষে তা ক্ষতিকর। ছোট থেকেই ওর জলের বোতল, প্লেট, চামচ আলাদা রাখুন। খাবার দেওয়ার সময়ে আগে ওর অংশটা ওর বাটিতে রেখে খেতে দিন। স্কুলে ভর্তির সময় থেকেই শেখান, ও অন্যদের সঙ্গে টিফিন ভাগ করে খেতে পারে, কিন্তু কারও চামচ, বোতল যেন ব্যবহার না করে।
মা-বাবা বা বাচ্চা যদি ডান হাতে আংটি পরে থাকে, তা হলে সেই আংটির ফাঁকে ময়লা জমে। নখ বড় করলেও ময়লা জমে তার ফাঁকে। সেই হাত দিয়ে বাচ্চাকে খাওয়ালে বা সে নিজে খেলে খাবারের সঙ্গে ময়লাও ঢোকে শিশুর শরীরে। ডা. ঘোষ জানালেন, যাঁরা টিসু পেপার, কমোড শাওয়ার এবং খাওয়ার সময়ে সম্পূর্ণ কাঁটা-চামচের উপরে নির্ভরশীল, তাঁদের ক্ষেত্রে এই অভ্যেস চলতে পারে। কিন্তু আমাদের মতো দেশে, যেখানে হাতে খাওয়াই দস্তুর, সেখানে এই অভ্যেস থেকে নানা রোগ ছড়ায়। বাচ্চার কোমরে পরানো কালো সুতো টয়লেট বা পটি করার সময়ে নোংরা জলের সংস্পর্শে হামেশাই আসে। অথচ সেগুলো নিয়ে আমরা ততটা সচেতন নই। কালো সুতো নোংরা হয়ে গেলেও তা চট করে বোঝা যায় না। বাচ্চার গলায় হারজাতীয় কোনও জিনিস পরানো থাকলে অনেক সময়ে দেখা যায়, সে হারটাকে মুখে নিয়ে চিবোচ্ছে। এ সব কিন্তু পরিচ্ছন্নতার লক্ষণ নয়।
বাচ্চার দায়িত্ব
বাচ্চাকে সুস্থ রাখতে মা-বাবাকে সচেতন হলেই চলবে না। বাচ্চারও কিছু দায়িত্ব আছে। সেটা ওকে গোড়া থেকেই শেখাতে হবে, গল্পের ছলে। কারণ, স্বাস্থ্যকর অভ্যেসের দরকার কেন— সেটা বোঝার পক্ষে ও বড্ডই ছোট। তাই যেটাই বারণ করা হবে, শিশুসুলভ প্রবণতায় ও সেটাই বেশি করবে। বাচ্চাদের ম্যাগাজ়িনে, ছোটদের অনেক বইয়ে বা অনলাইন ভিডিয়োয় কার্টুন চরিত্রের মাধ্যমে ভাল অভ্যেস গড়ে তুলতে পারেন। সেগুলো দেখিয়ে, নিজে অভিনয় করে দেখালে ও শিখে নিতে পারবে। খাওয়ার আগে, টয়লেট ব্যবহারের পরে বা বাইরে থেকে ঘুরে এলে হাত ধোয়ার অভ্যেস করান। হাতের দু’পিঠ, আঙুলের ফাঁক আর নখের ডগা ভাল করে পরিষ্কার করে হাত ধোয়ার ঠিক নিয়মটা ওকে দেখান। স্কুলব্যাগে ওয়াইপস ও পরিষ্কার রুমাল রাখুন। বাইরে বেরোলে ওর ছোট ব্যাগে রুমাল ও হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার রাখুন। চেষ্টা করুন সাবানজলে বাচ্চার হাত ধোয়ানোর। সাবান না থাকলে জল দিয়ে ভাল করে হাত ধুলেও কাজ হবে। প্রতি বার খাওয়ার পরে ওকে মুখ ধুতে শেখান। দিনে অন্তত দু’বার ব্রাশ করার অভ্যেস তৈরি করুন। আপনিও ওর সঙ্গে ব্রাশ করতে পারেন। তা হলে ও মজাও পাবে, ব্রাশ করার গুরুত্বও বুঝতে শিখবে। হাঁচি, কাশির সময়ে মুখে হাত দেওয়ার অভ্যেস করান। সন্তানকে ওয়েস্ট বিনের ব্যবহার শেখান। ব্যবহৃত টিসু, খাবার, ভাঙা খেলনা যেখানে-সেখানে যে ফেলতে নেই, ওকে বোঝাতে হবে। ওকে ছোট ছোট কাজের দায়িত্ব দিন। যেমন নিজের পড়ার ডেস্ক গুছিয়ে রাখা, স্কুল থেকে ফিরে ব্যাগ থেকে টিফিন বক্স বার করে দেওয়া, আয়রন করা জামাকাপড় আলমারিতে ওর নির্দিষ্ট তাকে গুছিয়ে রাখা, জুতো পরে ঘরে না ঢুকে সেটিকে শু র্যাকে তুলে রাখা। প্রথমে আপনাকেই বার বার মনে করিয়ে দিতে হবে। পরে তা অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গেলে ও নিজেই নিজেরটা গুছিয়ে রাখা শুরু করবে।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
মডেল: ডিম্পল আচার্য, রোমিত বন্দ্যোপাধ্যায়; ছবি: অমিত দাস মেকআপ: সৈকত নন্দী; পোশাক: ওয়েস্টসাইড, পার্ক স্ট্রিট
লোকেশন: লাহাবাড়ি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy