এক সময়ে মুলতানের খনিজ-সমৃদ্ধ মাটি দেশ-বিদেশে রফতানি করা হত, তার হরেক গুণ ও ব্যবহারের জন্য। পাকিস্তানের সেই অঞ্চলের মাটির স্পর্শে ঝলমল করত বেগমদের ত্বক। সৌন্দর্য চর্চায় বহু যুগ ধরে পাকা জায়গা করে নিয়েছে মুলতানি মাটি। আর তার সঙ্গতে যদি থাকে চন্দন, সেই রূপটানের অব্যর্থ ফল মিলতে বাধ্য।
মুলতানি মাটি বা ফুলার’স আর্থে প্রাকৃতিক খনিজে ভরপুর। অ্যালুমিনিয়াম সিলিকেট, ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড সমৃদ্ধ এই মাটির স্বাভাবিক ক্ষমতা রয়েছে ধুলোময়লা পরিষ্কার করার ও অতিরিক্ত তেল শোষণ করে নেওয়ার। তাই কোনও কেমিক্যালের ব্যবহার ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বক ও চুল পরিষ্কার রাখতে এবং তৈলাক্ত ভাব দূর করতে মুলতানি মাটির ব্যবহার খুবই কার্যকর।
তেলের শত্রু
যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত, তাঁদের রোজকার স্কিনকেয়ার রুটিনে মুলতানি মাটি রাখা আবশ্যিক। মুলতানি মাটি দই বা গোলাপজলে গুলে নিয়ে স্নানের মিনিট পনেরো আগে লাগিয়ে নিতে হবে, সপ্তাহে দু’-বার করে। এতে ত্বকে নিঃসৃত হওয়া অতিরিক্ত সেবাম থেকে মুক্তি মিলবে। ওপেন পোরস ও ব্ল্যাকহেডসের সমস্যা দূর হবে। প্রাকৃতিক স্ক্রাবার হিসেবেও মুলতানি মাটির ব্যবহার রয়েছে। সামান্য মধু ও আমন্ড গুঁড়োর সঙ্গে মিশিয়ে এটি লাগাতে হবে। মৃত কোষ দূর করে ত্বক এক্সফোলিয়েট করতে ওটমিলের সঙ্গে মুলতানি মাটি মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়।
কম্বিনেশন ত্বকের ক্ষেত্রে মুলতানি মাটির প্যাক তৈরি করুন সামান্য হলুদ, দুধ আর মধু মিশিয়ে। ব্রণ বা অ্যাকনেযুক্ত ত্বকের যত্নে মুলতানি মাটি আর চন্দন বাটার প্যাক ম্যাজিকের মতো কাজ করে। রাতে শোয়ার আগে অ্যাকনে বা পিম্পলের জায়গায় লাগিয়ে শুয়ে পড়ুন। সকালে উঠে দেখবেন, শক্ত হয়ে আপনিই খসে পড়ছে প্যাক। পাশাপাশি ব্রণ বা অ্যাকনে শুকিয়ে ছোট হয়ে গিয়েছে অনেকটাই।
শুধু ত্বকের তৈলাক্ত ভাব নয়, মুলতানি মাটি চুল পরিষ্কার রাখার ক্ষেত্রেও বিশেষ ভাবে উপযোগী। চুল ও স্ক্যাল্পের চিটচিটে ভাব দূর করতে নারকেল তেলের সঙ্গে মুলতানি মাটি মিশিয়ে হেয়ার প্যাক হিসেবে লাগাতে পারেন শ্যাম্পুর আগে।
মাটির পরশে
ইনফ্ল্যামেশন বা পিগমেন্টেশন দূর করতে মুলতানি মাটির জুড়ি নেই। শোনা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে দিনের পর দিন যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সেনারা ফুলার’স আর্থ জলে গুলে অনাবৃত অংশে মেখে রাখতেন, রোদে পোড়ার হাত থেকে ত্বক বাঁচাতে। শুধু তৈলাক্ত ত্বক নয়, শুষ্ক ত্বকের অধিকারী যাঁরা, তাঁরাও ত্বকের জেল্লা ফেরাতে মধুর সঙ্গে মুলতানি মাটি মিশিয়ে লাগাতে পারেন স্নানের আগে।
মুলতানি মাটির মধ্যে স্কিন লাইটনিং গুণ রয়েছে, অর্থাৎ এর নিয়মিত ব্যবহারে স্কিনটোন কয়েক পরত হালকা হয়ে যায়। ত্বকের কালো দাগছোপও একই ভাবে দূর করে এই মাটি। এর নিয়মিত ব্যবহারে বসন্ত বা ব্রণর দাগও হালকা হয়ে যায় অনেক। ওপেন পোরসের ক্ষেত্রেও একই ভাবে এটি কার্যকর। সঙ্গে লেবু বা টম্যাটোর রস মিশিয়ে নিলে ন্যাচারাল ব্লিচও হয়ে যাবে।
চন্দনচর্চিত ত্বক
মুলতানি মাটির সঙ্গে সবচেয়ে ভাল যে উপকরণটির মিলমিশ হয়, তা হল চন্দন। দু’টিই গুঁড়ো অবস্থায় কিনতে পাওয়া যায়, বাড়িতে বেটে নিয়েও মেশাতে পারেন। প্যাক বানানোর অন্যান্য উপকরণ রান্নাঘরে না থাকলে শুধু চন্দন আর মুলতানি মাটি অল্প গোলাপজলে গুলে লাগালেই উপকার পাবেন। সামনেই গরমকাল আসছে। ত্বকে অতিরিক্ত ঘাম, ধুলোময়লা বসে সমস্যা শুরুর দিন আসতে বেশি দেরি নেই। পরিষ্কার রাখা তো বটেই, ত্বক ঠান্ডা করতেও জুড়ি নেই মুলতানি মাটির। শুধু মুখ, হাতের ত্বক কিংবা চুলে নয়, মুলতানি মাটির প্যাক লাগান কনুই, হাঁটু, বাহুমূলেও। কারণ শরীরের এই অংশগুলিতেই ময়লা বেশি জমে, কালো দাগছোপও বেশি হয়।
তবে মুলতানি মাটি ব্যবহারের পরে ত্বকে ময়শ্চারাইজ়ার লাগিয়ে নিতে ভুলবেন না। মাটি সাময়িক ভাবে হলেও ত্বকে টানটান ভাব সৃষ্টি করে। ময়শ্চারাইজ়ার ত্বকের সেই টান বা শুষ্ক ভাব দূর করতে সাহায্য করবে।
মাটি দিয়ে ত্বক ও চুল ধোয়ার অভ্যেস খুবই পরিচিত ছিল এক সময়ে। এখন শ্যাম্পু-শাওয়ার জেলের রোজরুটিনের মাঝে এক-দু’দিন বরাদ্দ রাখতেই পারেন মুলতানি মাটির জন্য। এতে জেল্লা বাড়বে ত্বক ও চুলের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy