Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪

Kanyadaan: কন্যাদান বিতর্ক: কী বলছে সমাজ? খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন

কন্যাকে যে কোনও অবস্থায় দিয়ে দেওয়া যায়। চাণক্যের শ্লোকে তো আছে যে নিজেকে বাঁচানোর জন্য স্ত্রীকে পর্যন্ত বিকিয়ে দেওয়া যায়।

কন্যাদান প্রথার বিরুদ্ধে কথা বলায় এত উত্তেজনা কেন? কেউ নিজের মেয়ের বিয়ের চিঠিতে এমন ভাবনা প্রকাশ করলে সমাজের তা নিয়ে এত বক্তব্য থাকে কেন?

কন্যাদান প্রথার বিরুদ্ধে কথা বলায় এত উত্তেজনা কেন? কেউ নিজের মেয়ের বিয়ের চিঠিতে এমন ভাবনা প্রকাশ করলে সমাজের তা নিয়ে এত বক্তব্য থাকে কেন?

সুচন্দ্রা ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২১ ২০:৪৫
Share: Save:

কন্যা দান করার মতো কোনও বস্তু নয়। বরং রক্তদান করা জরুরি। মেয়ের বিয়ের চিঠিতে এমন ভাবনার কথা তুলে ধরেছে এক পরিবার। সে চিঠি নেটমাধ্যমে ঘুরতে শুরু করায় উঠেছে নানা প্রশ্ন। পাত্রীর পিতার কাছে গিয়েছে হুমকি ফোনও। কিন্তু কন্যাদান প্রথার বিরুদ্ধে কথা বলায় হঠাৎ এত উত্তেজনা কেন? কেউ নিজের মেয়ের বিয়ের চিঠিতে এমন ভাবনা প্রকাশ করলে সমাজের তা নিয়ে এত বক্তব্য থাকে কেন?

বৃহস্পতিবার সকালে এই ঘটনাটি নিয়ে একটি প্রতিবেদন পেশ করে আনন্দবাজার অনলাইন। তার পরেই সমাজের নানা স্তরে শুরু হয় আলোচনা। নেটমাধ্যমে চলতে থাকে কথোপকথন। কারও ব্যক্তিগত ভাবনা কেন সমাজের চোখ রাঙানির মুখে পড়বে, ওঠে প্রশ্ন। ঘটনাটি কানে এসেছে সমাজতাত্ত্বিক প্রশান্ত রায়ের। তিনি মনে করাচ্ছেন, হিন্দু ধর্ম তো আগেও ছিল। কিন্তু তা ঘিরে এ ধরনের কাণ্ড তেমন শোনা যেত না। এখন ধর্ম এবং রাজনীতি যেন কিছুটা গুলিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের না পাওয়া বেড়ে গিয়েছে। তাই অন্যের জীবন নিয়ে এমন সব মন্তব্যও বাড়ছে। অন্যের চলাফেরায় ত্রুটি খুঁজেই নিজের অপ্রাপ্তির জ্বালা মেটাতে চান অনেকে।’’

এই বিয়ের চিঠি নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।

এই বিয়ের চিঠি নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।

যাঁরা হুমকি দিচ্ছেন, তাঁরা বরাবর মহিলাদের সম্পত্তি বলে মনে করে এসেছেন বলেই বক্তব্য সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অনন্যা চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি মনে করেন, কেউ নিজের ধারণা বদলাতে চান না। তাই অন্যেরা এগিয়ে গেলেও সমস্যায় পড়েন। অনন্যা বলেন, ‘‘বিয়ে একটি সামাজিক আয়োজন। এতে ধর্মের বিশেষ জায়গা নেই। তাই কেউ নিজের মতো করে বিয়ে করা মানেই যে তা কোনও ধর্মকে অবমাননা করা নয়, সে কথা বুঝতে হবে।’’

যে সংস্কার চলে আসছে, তা আসলে বদলাতে চায় না কেউ। কন্যাকে ঘিরে এমন ধারণাই চলে আসছে বহু যুগ ধরে। সমাজ মনে করে, কন্যাকে যে কোনও অবস্থায় দিয়ে দেওয়া যায়। চাণক্যের শ্লোকে তো আছে যে নিজেকে বাঁচানোর জন্য স্ত্রীকে পর্যন্ত বিকিয়ে দেওয়া যায়। এমনই মনে করাচ্ছেন সমাজতাত্ত্বিক অভিজিৎ মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘নারীকে সামগ্রী হিসাবে ভাবা হয় বহু কাল ধরেই। মহাভারতে পাশা খেলার ঘটনাও তো সে কথাই মনে করায়। কন্যাদানের এই পৈশাচিক নিয়ম যে কবে যাবে কে জানে? দায়িত্ব নিয়ে এর বিরুদ্ধ জনমত তৈরি করা উচিত। ওই পরিবার খুব ভাল কাজ করেছে। এ নিয়ে অন্য কারও বক্তব্য থাকতেই পারে না। কারও অধিকার নেই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলার।’’

এত দিন ধরে নারী আন্দোলনেও এই বিষয়গুলি তেমন স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরা হয়নি বলে মনে করেন অভিজিৎ। তাঁর মতে, গোটা দেশের রাজনৈতিক আবহ যেমন, তাতে এখন সহজেই কন্যাদানের মতো এই সব বিষয় ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে কথা যখন উঠছে, তখন তা মেয়েদের পক্ষে ব্যবহার করা উচিত। বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা হওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি। সমাজতাত্ত্বিক বলেন, ‘‘বিদ্যাসাগরের পর আর সে ভাবে সমাজসংস্কার হয়নি। এ বার মেয়েদের রুখে দাঁড়ানো দরকার। মেয়েরাই পারবে। বলা উচিত যে এমন সব প্রথা মানতে হলে সে বিয়েতে বসবে না। এই নিয়ে দিকে দিকে আন্দোলন তৈরি করা উচিত।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy