মাস কয়েক আগেই একটি পোশাক বিপণির বিজ্ঞাপনে কন্যাদানের প্রথা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। বলিউডের অভিনেত্রী আলিয়া ভট্ট ছিলেন সেই বিজ্ঞাপনের মুখ।
বিয়ে হবে। আর ‘কন্যাদান’ হবে না? এ আবার কেমন কথা? হিন্দু বিয়ে কি ‘কন্যাদান’ না করে হয়? ধর্মের কি কোনও মান-সম্মান থাকবে না? কন্যার বিবাহের আমন্ত্রণপত্র ছাপিয়ে এমনই হাজার প্রশ্নের মুখে পড়েছেন এক পিতা। আসতে শুরু করেছে বিয়ে ভেস্তে দেওয়ার হুমকিও!
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি মেয়ের বিয়ে। আমন্ত্রণপত্র ছাপা হয়ে গিয়েছে। পৌঁছে গিয়েছে স্বজনদের হাতে। বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি সেই চিঠিতে লেখা আছে, ‘কন্যা কোনও বস্তু নয় যে দান করা হবে’। চিঠির শেষে আরও লেখা হয়েছে, ‘কন্যা ‘দান’ নয় রক্ত ‘দান’।
কোনও বিয়ের আমন্ত্রণপত্রেই এমন বক্তব্য সচরাচর দেখা যায় না। সম্ভবত সেই কারণেই নেটমাধ্যমে সেটি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন আমন্ত্রিত কোনও ব্যক্তি। আমন্ত্রণপত্রে রয়েছে পাত্রীর বাবার ফোন নম্বর। নেটমাধ্যমে কিছু ক্ষণেই ভাইরাল হয়ে যায় সেই চিঠি। এর পরেই একের পর এক ফোন আসতে শুরু করে পাত্রীর বাবার কাছে। ‘কন্যাদায়গ্রস্ত’ পিতাকে বলা হয়, ‘কন্যাদান’ না করে হিন্দু বাড়িতে বিয়ে হতে পারে না! কন্যাদানের বিরুদ্ধে কথা বলে তিনি হিন্দু ধর্মের অবমাননা করেছেন। এমন কাজ করলে যে তাঁর পরিবারের বিপদ হতে পারে, সে হুমকিও দেওয়া হয়েছে ওই মধ্যবয়সীকে।
পাত্রীর বাড়ি দক্ষিণবঙ্গের একটি জেলায়। বিজ্ঞাপন দেখে বিয়ে ঠিক হয়েছে কলকাতার এক সরকারি কর্মী পাত্রের সঙ্গে। নেটমাধ্যমে বিয়ের আমন্ত্রণপত্রটি দেখে সেই নম্বরে বৃহস্পতিবার যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। প্রথমে কেউ ফোন ধরেননি। বারবার যোগাযোগ করার পর অবশেষে পাত্রীর বাবা ফোনটি ধরেন। এবং গভীর উদ্বেগের সঙ্গে জানান, মেয়ের বিয়ের চিঠিটি নেটমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে তাঁদের রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে। একের পর এক হুমকি-ফোন আসছে। অপরিচিত সমস্ত কণ্ঠ তাঁদের চিন্তা-ভাবনা, চলাফেরা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। সে কারণে তিনি ফোন ধরাই প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন।
আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি সনির্বন্ধ অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে তাঁদের নাম-ঠিকানা বা ফোন নম্বর না-লেখা হয়। অসহায় পিতার সেই অনুরোধ মেনেই এই খবরটিতে সে সব কিছুই উল্লেখ করা হল না। খবরের সঙ্গে বিবাহের আমন্ত্রণপত্রটি ছাপা হলেও সংশ্লিষ্ট অংশগুলি ঝাপসা করে দেওয়া হচ্ছে। আতঙ্কের চোটে তাঁরা পুলিশে পর্যন্ত হুমকি-ফোনের ঘটনাটি জানাননি।
বৃহস্পতিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে চিন্তিত এবং আতঙ্কিত গলায় পাত্রীর বাবা বলেছেন, ‘‘আমরা কোনও প্রচারের জন্য এই চিঠি ছাপাইনি। যা বিশ্বাস করি, তা-ই লেখা হয়েছিল মেয়ের বিয়ের চিঠিতে। কিন্তু এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি যে তৈরি হবে ভাবতেও পারিনি!’’ এখন তাঁর এবং তাঁদের ভয়, বিয়েটাই না ভেস্তে যায়! তাঁদের উদ্বেগ স্বাভাবিক। কারণ, বিয়ের চিঠিটিতে তাঁদের নাম-ঠিকানা বিস্তারিত রয়েছে। যেমন যে কোনও আমন্ত্রণপত্রে থাকে। বিয়ের দিন সেখানে কেউ হাজির হয়ে গেলে ঘোর সমস্যায় পড়তে পারেন তাঁরা। পাত্রীর বাবা বলছেন, ‘‘সাধারণ একটি ভাবনা নিয়েও যে এত গোলমাল করা যেতে পারে, ভাবিনি।’’
ঘটনাচক্রে, মাস কয়েক আগেই একটি পোশাক বিপণির বিজ্ঞাপনে কন্যাদানের প্রথা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। বলিউডের অভিনেত্রী আলিয়া ভট্ট ছিলেন সেই বিজ্ঞাপনের মুখ। কন্যা যে কোনও দানের বস্তু নয়, বিজ্ঞাপনে তা শোনা গিয়েছিল আলিয়ার মুখে। সেই বিজ্ঞাপন ঘিরেও শুরু হয়েছিল তোলপাড়। হিন্দুত্ববাদীদের প্রতিবাদ, হুমকির মুখে পড়ে শেষে সেই বিজ্ঞাপনটি তুলে নিতে বাধ্য হয় সংশ্লিষ্ট পোশাক বিপণি।
তবে সেটি ছিল প্রচারমাধ্যমের ঘটনা। আদতে বিজ্ঞাপন। গণমাধ্যম মারফত অনেকের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল বিজ্ঞাপনটি। কিন্তু এই ঘটনাটি একটি পরিবারের ব্যক্তিগত ভাবনা! এ ক্ষেত্রে কোনও প্রচারের উদ্দেশ্য ছিল না বলেই তাই বার বার মনে করাচ্ছেন পাত্রীর বাবা। ফোন ছাড়ার আগেও যিনি বারবার বলছিলেন, ‘‘আমরা যে কন্যাদান করব না, সে কথাও লেখা নেই চিঠিতে। শুধু লেখা আছে, কন্যা কোনও বস্তু নয় যে, দান করা হবে। আমরা রক্তদানের উপর বেশি জোর দিতে চেয়েছি। এটা আমাদের ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক ভাবনা। তবু এত হুঁশিয়ারি দিয়ে ফোন কেন আসছে? মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে যে এমন বিপদে পড়তে হতে পারে, তা আমরা কিন্তু কখনও ভাবিনি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy