Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
summer

গরমের সঙ্গে লড়াইয়ের অস্ত্র ইলেকট্রোলাইট

শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া ঘামে মিশে থাকে প্রচুর প্রয়োজনীয় খনিজ। সেগুলো শরীরে যোগ করা প্রয়োজন। না হলেই ডিহাইড্রেশনের বিপদ ।

সুবর্ণ বসু 
শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২১ ০৪:৫৯
Share: Save:

ইলেকট্রোলাইট নামটির সঙ্গে আমরা সকলেই কমবেশি পরিচিত। খুব সাধারণ ভাষায় আমরা নুন-চিনির জল বলে যা খাই, তাও একধরনের ইলেকট্রোলাইট সলিউশন। ইলেকট্রোলাইট আসলে কী? খুব সহজ ভাষায় বলতে গেলে, জলে মিশে থাকা কিছু খনিজ আয়নই হল ইলেকট্রোলাইট। যেমন, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। ‘ইলেকট্রোলাইট’ শব্দটা থেকে সহজেই আন্দাজ করা সম্ভব যে, এই খনিজ আয়নগুলো তড়িৎ পরিবহণে সক্ষম। শরীরে এই খনিজ পদার্থগুলোর ভারসাম্য বজায় রাখা সুস্থ থাকার পক্ষে খুবই জরুরি।

ইলেকট্রোলাইটের গুরুত্ব

শরীরে প্রধানত চারটি কাজের জন্য এই ইলেকট্রোলাইট দরকার।

শরীরের ফ্লুয়িড অর্থাৎ তরল পদার্থের ভারসাম্য বজায় রাখা।

রক্তচাপ নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে রাখা।

হৃৎপিণ্ড-সহ সারা শরীরের পেশি সঙ্কোচন ও প্রসারণে সাহায্য করা।

রক্তের পিএইচ অর্থাৎ অ্যাসিড এবং ক্ষারীয় ভারসাম্য রক্ষা করা।

ইলেকট্রোলাইট-জলে এই ধরনের খনিজ আয়নগুলো প্রয়োজনীয় ঘনত্বে মিশে থাকে। ডায়াটিশিয়ান সুবর্ণা রায়চৌধুরী জানালেন, কোনও কারণে শরীরের জলীয় পদার্থ বেশি মাত্রায় বেরিয়ে গেলে শরীর ডিহাইড্রেটেড বা জলশূন্য হয়ে পড়ে। যেমন, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়াম, পেটখারাপ, বমি, বেশ কয়েক ঘণ্টা চড়া রোদে থাকা... ইত্যাদি কারণে শরীর থেকে জলের সঙ্গে সোডিয়াম, পটাসিয়ামের মতো অতি প্রয়োজনীয় খনিজও বাইরে চলে যায়। তখন শরীর অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে পড়ে, পেশির খিঁচ বা মাস্‌ল ক্র্যাম্প জাতীয় সমস্যা দেখা যায়। সেগুলোকে পূরণ করার জন্য পান করতে হয় ইলেকট্রোলাইট ওয়াটার। এটি শরীরকে রিহাইড্রেট করে এই সমস্যাগুলো থেকে রেহাই দেয়।

ডিস্টিল্ড ওয়াটারে কোনও রকম খনিজ আয়ন বা ইলেকট্রোলাইট থাকে না। কিন্তু মিনারেল ওয়াটারে সাধারণত স্বাদের জন্য বিভিন্ন অনুপাতে অল্প পরিমাণে ইলেকট্রোলাইট মেশানো থাকে।

রোজকার সাধারণ পানীয় জলে কি ইলেকট্রোলাইট থাকে?

হ্যাঁ থাকে। এক লিটার পানীয় জলে রেফারেন্স ডেলি ইনটেক (আরডিআই), মানে রোজকার প্রয়োজনীয় খনিজ আয়নের ২-৩ শতাংশ পরিমাণ থাকে। এতে পাওয়া যায় সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। তবে পটাসিয়ামের পরিমাণ থাকে খুব কম। প্রায় না থাকারই মতো।

কিছু কিছু স্পোর্টস ড্রিঙ্কে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খনিজ আয়ন মেশানো থাকে। প্রয়োজনীয় সোডিয়ামের প্রায় ১৮ শতাংশ এবং পটাসিয়ামের প্রায় তিন শতাংশ এই ধরনের পানীয়তে পাওয়া যায়। সেই কারণে এগুলো পান করলে শরীর অতি দ্রুত ক্লান্তি কাটিয়ে দরকারি শক্তি ফিরে পায়।

তবে সাধারণ ভাবে নিয়মিত ও পরিমাণমতো জল পান করলে শরীর স্বাভাবিক ভাবেই হাইড্রেটেড থাকে। এতে শরীরের সর্বত্র প্রয়োজনীয় পুষ্টি পৌঁছয়, শরীরের তাপমাত্রা নির্দিষ্ট মাত্রায় বজায় থাকে, শরীরে জমা বর্জ্যও ঠিকমতো শরীর থেকে বেরিয়েও যেতে পারে। শরীরে রোজকার জলের চাহিদা পূরণ করার জন্য সাধারণ পানীয় জলের সঙ্গে চা, কফি, ফলের রস, দুধ ইত্যাদি পানীয়েরও দরকার হয়। এতে সব মিলিয়ে শরীরে ইলেকট্রোলাইট-ব্যালান্স বজায় থাকে।

সহজে ইলেকট্রোলাইট পানীয় তৈরির উপায়

বাড়িতে খুব সহজে আর কম খরচে তৈরি করে নেওয়া যায় ইলেকট্রোলাইট। সাধারণ ভাবে এক গ্লাস জলে দু’চামচ চিনি আর এক চিমটি নুন দিয়ে আমরা ইলেকট্রোলাইট বা ওআরএস (ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন) তৈরি করে কাজ চালিয়ে নিই। তবে সুবর্ণা রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘ডায়াবিটিক রোগীর ক্ষেত্রে ইলেকট্রোলাইট সলিউশনে চিনি না দিয়ে, তার বদলে পাতিলেবুর রস আর নুন দিয়েও একই প্রয়োজন মেটানো যায়।’’

গরমে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে পারেন ইলেকট্রোলাইট সলিউশন নিয়েও। গরম কালে তো নানা রকম শরবত খাওয়া হয়ই। মুসাম্বি লেবুর রসের সঙ্গে সামান্য পাতিলেবুর রস, অল্প নুন, ডাবের জল আর ঠান্ডা জল পরিমাণমতো মিশিয়ে তৈরি করা যায় সুস্বাদু ইলেকট্রোলাইট। চিনি বা কোনও ফ্লেভার না মেশালেও এই পানীয় গরমে রিফ্রেশ করে মানুষকে।

গরম কাল এসে গিয়েছে। এ সময় দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় গরমে থাকলে সানস্ট্রোক বা সর্দিগর্মির আশঙ্কা বাড়ে। শরীরে যথাযথ ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স এই রোগের প্রকোপ আটকাতে পারে অনেকাংশে।

অন্য বিষয়গুলি:

summer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy