Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

জাদুতেও এ বার ম্যালেরিয়া রোখার বার্তা

লাল রংয়ের খালি ব্যাগটির চেন বন্ধ করে শূন্যে উপরে ছুড়ে দিয়ে মুহূর্তে লুফে নিলেন জাদুকর। ব্যাগ খুলতেই বেরিয়ে পড়ল রং বেরংয়ের বাহারি থোকা ফুল আর একটি সুদৃশ্য কাপড়ের ব্যানার! তাতে লেখা: ‘ম্যালেরিয়া হোক পরাজিত, ভবিষ্যত্‌ হোক সুরক্ষিত’। কীভাবে ম্যালেরিয়াকে পরাজিত করা যাবে? হেড-সেট মাইক্রোফোনে সে নিদানও দিচ্ছেন জাদুকর বৈদ্যনাথ ঘোষ।

বিনপুরের দহিজুড়ি চকে চলছে ম্যাজিক শো।  দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

বিনপুরের দহিজুড়ি চকে চলছে ম্যাজিক শো। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৫ ০২:১১
Share: Save:

লাল রংয়ের খালি ব্যাগটির চেন বন্ধ করে শূন্যে উপরে ছুড়ে দিয়ে মুহূর্তে লুফে নিলেন জাদুকর। ব্যাগ খুলতেই বেরিয়ে পড়ল রং বেরংয়ের বাহারি থোকা ফুল আর একটি সুদৃশ্য কাপড়ের ব্যানার! তাতে লেখা: ‘ম্যালেরিয়া হোক পরাজিত, ভবিষ্যত্‌ হোক সুরক্ষিত’। কীভাবে ম্যালেরিয়াকে পরাজিত করা যাবে? হেড-সেট মাইক্রোফোনে সে নিদানও দিচ্ছেন জাদুকর বৈদ্যনাথ ঘোষ। জাদুর জগতে অবশ্য ‘বি এন ঘোষ’ নামেই পরিচিত তিনি। রবিবার ছুটির সকালে ভিড়ে ঠাসা বিনপুরের দহিজুড়ি চকে এমন ম্যাজিক দেখে তাজ্জ্বব শেখ সাবের আলি, শেখ সাজ়িদ আলির মতো কৌতূহলিরা। তাঁদের মতো জমায়েত থেকে কেউ কেউ জানতে চান, ‘রাতে মশা মারার তেল জ্বালিয়ে ঘুমোই। তা হলেও কী মশারি টাঙাতে হবে?’ এবার জাদুর ভেল্কিতে খালি বাক্স থেকে বেরিয়ে পড়ল মশারি। রাতে ঘুমোনোর সময় মশারি টাঙানোর অপরিহার্যতা ব্যাখ্যা করে জাদুকরের জবাব, “ম্যালেরিয়া থেকে বাঁচার ম্যাজিক মশারিতেই আছে ভাই!” এরপরই তুড়ি মেরে ম্যলেরিয়া পরীক্ষার র্যাপিড টেস্টিং কিট হাতে নিয়ে জাদুকরের আবেদন, “সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই কিট রয়েছে। জ্বর হলেই নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে বিনামূল্য রক্ত পরীক্ষা করান। আধ ঘন্টার মধ্যে জানতে পারবেন জ্বরটা ম্যালেরিয়ার কি-না। জ্বর হলে উপেক্ষা করবেন না।”

রবিবার দিনভর জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় চলল এমনই অভিনব ম্যালেরিয়া বিরোধী প্রচারাভিযান। এদিন দুপুরে বেলপাহাড়ির ইন্দিরা মোড়ের কাছে ম্যাজিক দেখানোর সময় বৈদ্যনাথবাবুর চোখে পড়ল, রাস্তার ধারে ডাবের খোলা পড়ে রয়েছে। উত্‌সাহী দর্শকদের উদ্দেশ্যে জাদুকর জানালেন, ‘‘এভাবে ডাবের খোলা ফেলে রাখলে বৃষ্টির জল জমে সেখানে ম্যালেরিয়ার জীবানু-বাহক মশা জন্মায়। ডাব খাওয়ার পরে সেটিকে কয়েক টুকরো করে দিন। যাতে জল জমতে না পারে। এটা ভাল জ্বালানিও হতে পারে।’’ বাস ধরার অপেক্ষায় থাকা কদমডিহার প্রৌঢ়া রেবতী সর্দার বললেন, “জ্বরে বছর বছর এলাকায় লোক তো মরছেই। সবাই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে চায় না। মশারি টাঙিয়ে ঘুমোনোর অভ্যাস নেই আমাদের। কিন্তু জাদুকর যা দেখালেন, এর পর মশারি টাঙাব।” বিকেলে জামবনির পড়িহাটি গ্রামের হাটচালায় ম্যাজিক দেখতে ভিড় করেছিলেন আবালবৃদ্ধবনিতা। প্রতিটি শো চলাকালীন, স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা পথচলতি মানুষজনকে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে ইতিকর্তব্যের প্রচারপত্রও বিলি করলেন।

পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম স্বাস্থ্য জেলার উদ্যোগে জঙ্গলমহলের পথেঘাটে জাদু প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমজনতাকে ম্যালেরিয়া নিয়ে সচেতন করা হচ্ছে। গোটা জুন মাস জুড়ে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে নানা ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তবে ম্যালেরিয়া প্রবণ বেলপাহাড়ি-সহ তিনটি ব্লকে আগামী ছ’মাস ধরে শতাধিক সচেতনতা-শিবির করা হবে। ম্যাজিক শো’র মাধ্যমে প্রচারাভিযানে ভাল সাড়া মিলেছে বলে দাবি স্বাস্থ্য কর্তাদের। কেন এই উদ্যোগ?

গত পাঁচ মাসে ম্যালেরিয়ার খতিয়ান দেখে চিন্তা বেড়েছে স্বাস্থ্য দফতরের। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত জানুয়ারি-মে মাসে কেবলমাত্র ঝাড়গ্রাম স্বাস্থ্য জেলার অন্তর্গত জঙ্গলমহলের ৮টি ব্লকে ২৩৫ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে ১৬১ জনের রক্তে ক্ষতিকারক প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিফেরামের জীবাণু পাওয়া যায়। আরও উদ্বেগের বিষয় হল, মোট আক্রান্তের সিংহভাগ বেলপাহাড়ি ব্লক এলাকার বাসিন্দা। গত পাঁচ মাসে বেলপাহাড়ি ব্লকে ম্যালেরিয়ার আক্রান্তের সংখ্যা ১৮০ জন। এর মধ্যে ক্ষতিকারক ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ১২৯ জন। ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকা হিসেবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে বিনপুর-১ (লালগড়) ও জামবনি ব্লক। সরকারি হিসেবে গত পাঁচ মাসে ঝাড়গ্রাম স্বাস্থ্য জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে
দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। দু’জনই বেলপাহাড়ির বাসিন্দা।

পশ্চিম মেদিনীপুরের উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-২ (ডেপুটি সিএমওএইচ-২) রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “ম্যালেরিয়াকে একেবারে নির্মূল করতে হলে এলাকাবাসীকে সচেতন হতে হবে। প্রচারাভিযানে ম্যাজিক শো’য়ের মাধ্যমে আমরা সেই কথাটাই তুলে ধরছি। এতে, ভাল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এলাকার পথে ঘাটে, হাটেবাজারের পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুলেও এ ধরনের শো
করা হবে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE