বাগান, ছাদ বা এক টুকরো বারান্দায় ছোট বড় নানা মাপের, নানা রঙের টবে তরতাজা গাছ, রঙিন ফুলের সারি চোখের আরাম, মনের শান্তি। তবে এই শান্তির জন্য গাছ অনুযায়ী কম বেশি পরিচর্যাও দরকার। ঠিক মতো জল, আলো, সার পেলে গাছ নিজেকে বিকশিত করে। আলো বা সারের চেয়ে জলের হেরফেরে গাছ দ্রুত মারা যায়। ঋতু অনুযায়ী জল দেওয়ার পরিমাণ বাড়ে কমে, আমরা জানি। কিন্তু অনেকেরই হয়তো অজানা টবের মেটিরিয়াল বা উপকরণের উপরেও জল দেওয়ার পরিমাণ নির্ভর করে।
গাছ বসানোর জন্য এখন শুধু পোড়ামাটির টব নয়, সেরামিক, মেটাল, প্লাস্টিক, ফাইবার, বাঁশ, বেত ইত্যাদি বিভিন্ন মেটিরিয়ালের টব পাওয়া যায়। অনেকেই টিন বা প্লাস্টিকের বড় ড্রাম মাঝবরাবর কেটে টব হিসেবে ব্যবহার করেন বড় গাছ বা ফলের গাছের জন্য। বারান্দা, ছাদ বা জানালার রেলিং থেকে ঝুলিয়ে দেওয়ার জন্য মেটাল ও প্লাস্টিকের হাতলওয়ালা টব এখন বেশ ইন।
আমাদের দেশে নার্সারি হোক বা বাড়ি, পোড়ামাটির টব সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। মাটির টব ছিদ্রযুক্ত হওয়ায় অক্সিজেন চলাচল ভাল হয়। যা তরতাজা গাছের জন্য জরুরি। কিন্তু মাটির টব জল শুষে নেয় তাড়াতাড়ি, তাই এই ধরনের টবে জল নিয়মিত দিতে হবে। গরমে সকাল-বিকেল দু’বার জল দিতে হবেই। মাটির টবের সুবিধে বোঝা যায় বাড়ি না থাকলে। সে সময়ে মাটির টবের গাছগুলি জলপূর্ণ বড় পাত্রে বসিয়ে গেলে অন্তত এক সপ্তাহ দিব্যি বেঁচে থাকে। মাটির দেওয়াল জল শুষে নিয়ে গাছকে আর্দ্র রাখে। এই সুবিধে কিন্তু প্লাস্টিক, সেরামিক বা মেটালের টবে নেই। তবে ভারী এবং শ্যাওলা পড়ে কালো হয়ে যায় বলে অনেকেই এখন গাছের জন্য বেছে নিচ্ছেন হালকা প্লাস্টিক, মেটাল বা টিনের টব। মাটির টবে মাঝে মাঝে রং না করলে সৌন্দর্য ধরে রাখা মুশকিল। সে ঝক্কি নেই প্লাস্টিকের টবে। তবে প্লাস্টিকের টবে পোরস না থাকায় বায়ুচলাচল ঠিক মতো হয় না। এই একই কারণে জল শোষণের গতিও কম। তাই মাটির টবে রাখা কোনও গাছে যে পরিমাণ জল দিতে হবে, তার চেয়ে জলের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে প্লাস্টিকের টবে সেই গাছটি রাখলে। রোদে মেটালের টব তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যায়, ফলে মাটি শুকিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে জল বেশি। বড় গাছ বা ফলের গাছের জন্য অনেকেই বড় টিনের বা প্লাস্টিকের ড্রাম ব্যবহার করেন। ড্রাম রোদে বেশ গরম হয়ে যায় এবং গভীরতাও অনেকটা থাকে তাই জল বেশি লাগে। তবে ড্রামের গা চট দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখলে জলদি গরম হওয়া আটকানো যায়। সেরামিকের টবেও জল দ্রুত শুকিয়ে যায় না, তাই বুঝে জল দিতে হবে। মোটা বাঁশ কেটে তার খোলে গাছ বাসানো যায়, বিশেষ করে লতানো গাছ, কিন্তু এ ক্ষেত্রে জল নিষ্কাশনের জন্য তলায় ছিদ্র করে নিতে হবে। বাঁশ বা বেত দিয়ে তৈরি টবে সরাসরি গাছ বসানোর আগে একটা প্লাস্টিকের শিট দিয়ে ভিতরটা মুড়িয়ে নিতে হবে। না হলে বাঁশ বা বেতের ফাঁক দিয়ে জল ও মাটি বেড়িয়ে যেতে পারে। প্লাস্টিকের শিটের জন্য জলসংরক্ষণ হবে, মাটি দ্রুত শুকিয়ে যাবে না, কিন্তু হাওয়া চলাচলের সমস্যাটা থাকেই।
টব যেমনই হোক না কেন, তার জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল হতেই হবে। জল দেওয়ার পরে টবের নীচ থেকে জল বেরিয়ে না এলে বুঝতে হবে ভিতরে জল জমে যাচ্ছে, এতে গাছের গোড়া পচে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেক সময়ে প্লাস্টিকের টবে জল নিষ্কাশনের ছিদ্র থাকে না, গাছ বসানোর আগে সেটা পরখ করে নিতে হবে। মাটি বা মেটালের টবে দ্রুত মাটি শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা এড়াতে গাছের গোড়ায় নারকেলের ছোবড়া, খড়কুচি দিতে পারেন। এতে জল সংরক্ষিত হয়, আগাছা জন্মায় না এবং এগুলো সার হিসেবেও কাজ করে। কিছু দিন জল দেওয়ার পরে গাছের চেহারাই বলে দেয় জল ঠিক মতো দেওয়া হচ্ছে কি না। দশ দিন অন্তর নিড়ানি দিয়ে টবের মাটি খুঁড়ে দিয়ে জল দিন। সকালে রোদের তেজ বাড়ার আগে এবং পড়ন্ত বিকেলে গাছে জল দেওয়ার উপযুক্ত সময়। ঝারিতে ফোয়ারা লাগিয়ে জল দেওয়া সবচেয়ে ভাল। বোতল বা মগ ব্যবহার করলে টবের মাটির কাছে নিয়ে জল ঢেলে দিতে হবে। টানা ক’দিন বৃষ্টি চললে সূর্যের দিকে মুখ করে টব কাত করিয়ে শুয়ে দিন। ইন্ডোর প্লান্টের জন্য মাটির চেয়ে সেরামিক, মেটাল, প্লাস্টিকের বাহারি টব বেশি উপযুক্ত। কারণ অধিকাংশ ইন্ডোর প্লান্টে বেশি জলের প্রয়োজন পড়ে না। খোলা জায়গায় গাছের জন্য মাটির টব উপযুক্ত। জল বেশি দিতে হলেও গাছের সুস্বাস্থ্যের জন্য বায়ুচলাচল ভাল হওয়া জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy