Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Art Exhibition

অনেক কথা অল্প রেখা

শিবপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশেই বাড়ি ছিল সুদীপ্তর। কাজেই দীর্ঘ সময় ধরে ওখানে যাতায়াত করেছেন শুধু প্রকৃতির সঙ্গ করবেন বলে এবং অবশ্যই স্কেচ করবেন বলেও।

রঙেরেখায়: সুদীপ্ত অধিকারীর একক প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম

রঙেরেখায়: সুদীপ্ত অধিকারীর একক প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম

শমিতা বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৩৫
Share: Save:

যোগেন চৌধুরী সেন্টার ফর আর্টস, চারুবাসনায় শিল্পী সুদীপ্ত অধিকারীর একটি একক প্রদর্শনী হয়ে গেল। মোট ৮৬টি ছবি দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন দর্শক, যার মধ্যে ৩০টি চারকোলে আঁকা, জলরঙের ছবি ২০টি। এ ছাড়া কিছু পেন অ্যান্ড ইঙ্কের কাজ। শিল্পীর গত দু’বছরের সম্ভার।

প্রায় প্রত্যেক দিনই সারা রাত জেগে ছবি আঁকার অভ্যেসটি বজায় রেখেছেন সুদীপ্ত। তাঁর ছবি আঁকা শুধুই নিজেকে প্রকাশের চেষ্টা। প্রকৃতিপ্রেমী সুদীপ্ত প্রকৃতির ভিতর দিয়েই মনের ভাব প্রকাশ করেন। চেষ্টা, সেই প্রকৃতির অন্তরে পৌঁছনোর। বাইরের সব জটিলতা, অপ্রাসঙ্গিকতা বর্জন করে অন্তরের সেই মূল কথাটি খুঁজে নেওয়াই সুদীপ্ত অধিকারীর নিরন্তর প্রচেষ্টা। ভারতীয় শিল্পীদের মধ্যে সতীশ চন্দ্র তাঁর সবচেয়ে প্রিয় শিল্পী।

চারুবাসনার প্রদর্শনীতে রাখা বেশির ভাগ ছবিই ছিল স্কেচধর্মী এবং মাপে বেশ ছোট। কিছু বড় কাজও দেখা গেল অবশ্য। চারকোলের ছবিগুলিতে সরু উইলো চারকোল দিয়ে প্রাথমিক স্কেচটা করে তারপর মোটা চারকোলের পাশ দিয়ে কিছু স্ট্রোকে শিল্পী সম্পূর্ণ করেছেন ছবি। খুব সামান্য কয়েকটি স্ট্রোকে একটি সমুদ্রের সুন্দর ছবি এঁকেছেন। ছোট্ট একটি নৌকো মাঝসমুদ্রে ঝড়ে পড়েছে। আকাশ এবং সমুদ্রের ভয়ঙ্কর চেহারা। চারকোলে ওই রূপটি আনতে সক্ষম হয়েছেন সুদীপ্ত।

শিবপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশেই বাড়ি ছিল সুদীপ্তর। কাজেই দীর্ঘ সময় ধরে ওখানে যাতায়াত করেছেন শুধু প্রকৃতির সঙ্গ করবেন বলে এবং অবশ্যই স্কেচ করবেন বলেও। নিসর্গপ্রীতি খুব ছোটবেলা থেকেই জন্মেছিল তাঁর। স্কুল-কলেজ থেকেই আঁকা শুরু। শেষে ছবি আঁকার প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে বছর পাঁচেক আগে
চাকরি ছেড়ে পুরোদস্তুর শিল্পীজীবন বেছে নিয়েছিলেন। কোনও প্রাতিষ্ঠানিক চারুকলা-শিক্ষার সুযোগ হয়নি সুদীপ্তর। তিনি পুরোপুরি স্বশিক্ষিত। খুব সম্ভবত সেই
কারণেই সুদীপ্ত অধিকারীর ছবিতে বিশেষ কারও প্রভাব দেখতে পাওয়া যায় না।

বেশ কয়েকটি জলরঙের ভূদৃশ্যের ছবি প্রদর্শনীতে দেখা গেল। দু’টি ছোট কাজে জলরঙে সামান্য একটু বার্ন্ট সিয়েনা, একটু ইয়েলো অকার, অল্প নীল এবং গভীরতা আনার জন্য কালো রঙের টানে সুন্দর ভাব প্রকাশ পেয়েছে। এ ছাড়া আরও দু’টি জলরঙের কাজে বিশেষ কোনও রঙের প্রাধান্য নেই। কালো রঙের বিভিন্ন টোনে জলাশয়, দূরে নদী এবং কাছে দৃশ্যমান সরু সরু পাতাবিহীন আকাশছোঁয়া গাছ। আর একটি ছবিতে কাছাকাছি বেশ কিছু গাছ এবং পটভূমিতে হালকা ভাবে রঙিন আকাশ। ভারী মনোরম। যদিও এই ছবিগুলি প্রায় একরঙা।

সুদীপ্ত খুব অল্প সময়ে জলরং নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে করতে বেশ কিছুটা আয়ত্তে এনে ফেলেছেন। কোথায় রং চেপে উঠিয়ে দেওয়া দরকার, কোথায় উপর থেকে হালকা রঙের ছোঁয়া দেওয়া প্রয়োজন, আবার কোথায় জলের উপর রং ভাসিয়ে দিতে হবে... তা ভালই জানেন শিল্পী। আর এ সবের ফলে যে ছবি তৈরি হচ্ছে, তা দর্শকের জন্য খুবই উপভোগ্য।

সব শিল্পীই নিজের মতো করে নানা ভাবে অনুসন্ধান করতে করতে স্ব স্ব পথ বেছে নেন। শেষে পরিণত হওয়ার পরে নিজের স্বাক্ষর ও শৈলী রচনা করতে সক্ষম হন। সেটা তাঁদের নিজেদের পথ। সুদীপ্ত অধিকারীকেও ভবিষ্যতে তাঁর নিজস্ব কাজের মধ্য দিয়েই সন্ধান করতে হবে তাঁর স্বাক্ষর, তাঁর রচনাশৈলীর। সেটাই তাঁর পথ।


অন্য বিষয়গুলি:

Review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy