Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
seasonal change

গলা ব্যথা আটকে দেয় মাস্ক আর হাত ধোয়া

অতিমারি প্রতিরোধে সঠিক ভাবে মাস্ক পরা ও সাবান দিয়ে হাত ধোওয়ার অভ্যাস  কিন্তু টনসিলের অসুখ বা ফ্যারেঞ্জাইটিসের মতো গলা ব্যথার সমস্যা আটকে দিতে পারে বললেন দ্বৈপায়ন।

যাঁরা সদ্য কোভিড থেকে সেরে উঠেছেন, তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় বেশি সাবধানতা নেওয়া উচিত। ছবি: শাটারস্টক।

যাঁরা সদ্য কোভিড থেকে সেরে উঠেছেন, তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় বেশি সাবধানতা নেওয়া উচিত। ছবি: শাটারস্টক।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২০ ১৪:১৬
Share: Save:

ভোর রাত্তিরে বাতাসে ঠান্ডা আমেজ। শীত আসছে। প্রতি বারই ঋতু পরিবর্তনের সময় অনেকের গলায় ব্যথা হয়। কিন্তু এবছরে সব কিছুই অন্য রকম। গলা ব্যথা বা জ্বর হলে কোভিডের ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে। আসলে ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টায় নানান রোগ জীবাণু বেড়ে ওঠে। সুযোগ বুঝলেই আক্রমণ করে। জ্বর-সর্দি আর গলা ব্যথা এখন বলতে গেলে ঘরে ঘরে।

ইএনটি সার্জেন দ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায় জানালেন, গলা ব্যথা ও অল্প জ্বর মূলত টনসিলাইটিস ও ফ্যারেঞ্জাইটিসের উপসর্গ। আমাদের নাকের ঠিক পেছনেই শ্বাসনালীর সামনে থাকে টনসিল আর ফ্যারিংস। এরা শরীরের পাহারাদারের কাজ করে । বাইরের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে গেলে তাদের সঙ্গে লড়াই করে। নাক মুখ দিয়ে আমরা যে বাতাস টেনে নিই তার সঙ্গে কিছু জীবাণুও থাকে। টনসিল জীবাণুদের শ্বাসনালীতে ঢুকতে বাধা দেয়। কিন্তু অনেক সময় জীবাণুদের কাছে এরা যুদ্ধে হেরে গিয়ে নিজেরাই আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এই সময়টায় ভাইরাস ব্যাকটেরিয়াদের সক্রিয়তা বেড়ে যায়। আর সংক্রমিত মানুষের হাঁচি, কাশি বা কথা বলার মাধ্যমে এই জীবাণুগুলি ছড়িয়ে পড়ে ঠিক নভেল করোনা ভাইরাসের মতোই।

অতিমারি প্রতিরোধে সঠিক ভাবে মাস্ক পরা ও সাবান দিয়ে হাত ধোওয়ার অভ্যাস কিন্তু টনসিলের অসুখ বা ফ্যারেঞ্জাইটিসের মতো গলা ব্যথার সমস্যা আটকে দিতে পারে বললেন দ্বৈপায়ন। কিন্তু এবারেও প্রচুর মানুষ গলা ব্যথার সমস্যা নিয়ে আসছেন। কোভিডের ভয়ে সামান্য উপসর্গ দেখলেই মানুষজন আতঙ্কিত হচ্ছেন। অথচ নাক মুখ ঢেকে মাস্ক পরার অভ্যেস করলে এই সমস্যার ঝুঁকি অনেকটাই কম থাকে। যাঁরা সদ্য কোভিড থেকে সেরে উঠেছেন, তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় বেশি সাবধানতা নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন: শুধু বাজির ধোঁয়াই নয়, আগুন থেকেও বিপদ আসে

ঠান্ডা লাগলে টনসিলের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বাচ্চাদের মধ্যেও টনসিলাইটিসের সমস্যা বেশি দেখা যায়। স্কুল বা খেলাধুলো বন্ধ থাকায় শিশুদের মধ্যে ঝুঁকি অন্য বারের তুলনায় কিছুটা কম হলেও বড়দের থেকে বাচ্চাদের ও উল্টোটা হবার সম্ভাবনা থেকেই যায়, বললেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ পল্লব চট্টোপাধ্যায়। গলা ব্যথা, খাবার গিলে খেতে অসুবিধে হওয়া, জ্বর, টনসিল লালচে হয়ে ফুলে ওঠা, মাথা ও ঘাড়ের যন্ত্রণার মতো উপসর্গ দেখা গেলে এবং দু’তিন দিনের মধ্যে সমস্যা না কমলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে হবে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছাড়াও এই সময়টায় ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার কারণেও জ্বর হচ্ছে। তাই তিন দিনের বেশি জ্বর থাকলে অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত বলে পল্লববাবুর পরামর্শ।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ শান্তনু রায়ের পরামর্শ, জ্বর আর গলা ব্যথা থাকলে ব্যথা কমানোর ওষুধ খাওয়া চলবে না। শুধুমাত্র প্যারাসিটামল ও গরম জলে গার্গল এবং প্রয়োজন হলে ভেপার নিয়ে হবে। ব্যথা কমানোর ওষুধ খেলে রক্তের প্লেটলেট কমে গিয়ে ভয়ানক বিপদের ঝুঁকি থাকে। কোনও সংক্রমণ হলেই আমাদের শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম চেষ্টা করে শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে জীবাণুদের শরীরের বাইরে বের করে দিতে। আর এই জন্যেই ইনফেকশন হলে জ্বর হয়, বললেন শান্তনু রায়। টনসিলের ইনফেকশন হয় ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অ্যালার্জি থেকে। অ্যান্টিবায়োটিক আর প্যারাসিটামল খেলে দু’তিন দিনের মধ্যেই সমস্যার সমাধান হয়। পল্লব চট্টোপাধ্যায় জানালেন যে, মূলত ৫–১৫ বছরের বাচ্চাদের মধ্যে টনসিলাইটিসের সমস্যা বেশি দেখা যায়। ছোঁয়াচে এই অসুখের হাত এড়াতে ভিড় বাজার দোকান বা বাসে ট্রামে নাক মুখ ঢেকে থাকাই সব থেকে ভাল উপায়। আর সংক্রমণ হলে ২–৩ দিন বিশ্রাম নেওয়া উচিত। খাবার খেতে অসুবিধে হয় বলে নরম ও গরম খাবার খেলে ভাল। ভাত, ডাল, দুধ, রুটি, চিকেন বা সবজির স্ট্যু, ডিম— সবই খাওয়া যায়। আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় এসি ব্যবহার, ঠান্ডা জল বা বোতলবন্দি ঠান্ডা পানীয় খেতে মানা করলেন পল্লববাবু।

আরও পড়ুন: ক্যানসার সচেতনতা আটকে স্রেফ উদ্‌যাপনেই

অনেক সময় গলা ব্যথা হলে গলা জুড়ে সাদাটে প্যাচ দেখা যায়। যদি গলার একদিকে প্যাচ থাকে, তবে অবশ্যই থ্রোট সোয়াব পরীক্ষা করাতে হবে। গলা ব্যথার চিকিৎসায় যদি অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়, ব্যথা কমলেই মাঝপথে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া বন্ধ করা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে ড্রাগ রেসিস্ট্যান্ট হয়ে অর্থাৎ পরবর্তী সময়ে ওষুধ ব্যবহার করে আর কোনও কাজ হবে না। যাদের বছরে ৫–৬ বার টনসিলের অসুখ করে তাদের টনসিল অপারেশন করিয়ে নিলেই ভাল হয়। তবে ৫ বছর বয়সের আগে টনসিল অপারেশন করা অনুচিত। অনেকের ধারণা, টনসিল অপারেশন করলে নাকি গলার স্বর খারাপ হয়ে যায়। ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল। টনসিলের অনেকটা নিচে ল্যারিংস থেকে গলার আওয়াজ বেরোয়। তাই, সংক্রমিত টনসিল বাদ দিলে গলা খারাপ হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না। তবে এক্ষেত্রে প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর— এই আপ্তবাক্য মেনে রোগ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

অন্য বিষয়গুলি:

SORE THROAT TONSIL INFECTION
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE