Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Parenting Tips

ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যা বলছে সন্তান? কিশোর-কিশোরীর এমন অভ্যাস হলে বাবা-মা কী করে সামলাবেন?

কেউ বলে উদ্দেশ্যে, আবার কেউ এমনিই অভ্যাস বশে মিথ্যা বলে। কল্পনার আশ্রয় নিয়ে গল্প ফেঁদে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টাও করে। সন্তানের মিথ্যা বলার অভ্যাস কেন হল, সেই গোড়ার কারণটাই আগে ধরতে হবে বাবা-মাকে।

When your teenager lies, you can try these things

সন্তানের মিথ্যা বলার প্রবণতা দূর করবেন কী ভাবে। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৪ ১০:১৪
Share: Save:

বয়ঃসন্ধিকালই হল ছেলেমেয়েদের বিকাশের এমন এক গুরুত্বপূর্ণ স্তর যেখানে দৈহিক ও মানসিক পরিবর্তনগুলি হঠাৎ করেই চলে আসে। বয়ঃসন্ধিকাল কমবেশি সব ছেলেমেয়ের উপরেই প্রভাব ফেলে। এই সময়ে শরীর আর মনে হানা দেয় বিচিত্র সব সমস্যাও। অনেককেই ঘিরে ধরে অভিমান, অবসাদ, হতাশাও। সকলের দৃষ্টি আকর্ষণের এক অদ্ভুত স্পৃহাও কাজ করে অনেকের মধ্যে। ফলে আবেগজাত ও আচরণগত নানা পরিবর্তন আসে বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়েদের মধ্যে। তাদের ব্যবহার ও আচরণে এমন কিছু দেখা দেয় যা পরবর্তী কালে অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। তার মধ্যে একটি হল কথায় কথায় মিথ্যা বলা। এই বয়সের অনেক ছেলেমেয়েই কল্পনার জগতে বিচরণ করে। ফলে গল্প বানিয়ে বলার অভ্যাসও তৈরি হয় অনেকের মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে বাবা-মায়েদের কী করা উচিত?

এই বিষয়ে পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষের পরামর্শ, “অনেক সময়ে বাবা-মা ‘বন্ধু’ হিসাবে সন্তানদের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করলেও পারেন না। আবার ছেলেমেয়েদের মনে উঁকি মারা কৌতূহলকে অনেকেই এড়িয়ে যেতে চান। ফলে ওই বয়সের ছেলেমেয়েরা তাদের সমস্যা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে কুণ্ঠাবোধ করে। আর মিথ্যা বলার অভ্যাস তৈরি হয় সেখান থেকেই।”

মূলত তিনটি কারণে কৈশোরে মিথ্যা বলার অভ্যাস তৈরি হতে পারে। পায়েলের মতে, প্রথমত, বাবা-মায়েদের নিজেদের মধ্যে সমস্যা, অশান্তি, চিৎকার করে কথা বলা, বকুনি, অতিরিক্ত উপদেশ দেওয়া এবং সন্তানের কোনও কথাতেই কর্ণপাত না করার প্রবণতা তাদের মনকে প্রচণ্ড রকমভাবে আঘাত করে। মনের ভিতরে যে চাপা অভিমান ও ক্ষোভের জন্ম হয়, তার থেকেই মিথ্যা বলার প্রবণতা তৈরি হয়।

দ্বিতীয়ত, অন্যের সঙ্গে সব সময়ে তুলনা টেনে কথা বলেন অনেক বাবা-মাই। সকলের সামনেই তা করেন। অনেক সময়ে দেখা যায়, দুই সন্তান হলে যার গুণ ও প্রতিভা বেশি, তার সঙ্গেই তুলনা বেশি করা হয়। ফলে নিজের সম্মান বজায় রাখতে ও নিজেকে সেরা প্রমাণ করতেও মিথ্যা বা কল্পনার আশ্রয় নেয় ছেলেমেয়েরা।

তৃতীয়ত, কেবলমাত্র অভ্যাস। মানে এমনি এমনিই মিথ্যা বলা। একে বলে ‘প্যাথোলজিক্যাল লাইং’। এই প্রবণতা ছোট বয়স থেকেই শুরু হয়। কেবলমাত্র দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বানিয়ে বানিয়ে কথা বলতে ভালবাসে অনেকে।

মিথ্যা যখন মনের ব্যাধি

অভ্যাসবশে মিথ্যা বলাকে বলা হয় ‘কমপালসিভ লাইং’, যা বড় ধরনের ক্ষতি করে না অনেক সময়েই, এমনই মনে করছেন মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, ছেলেমেয়েরা যদি বোঝে তারা পরিবারে বা বন্ধুদের মাঝে অবহেলিত অথবা তাদের ভাবনাকে কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না, তখন কোনও চাঞ্চল্যকর কথা বলে বা গল্প ফেঁদে নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে চায়। আবার এমনও অনেক ছেলেমেয়ে রয়েছে যারা মিথ্যা বলে কোনও বিশেষ উদ্দেশ্যে। অনেক সময়ে অপরাধপ্রবণতা থেকেও এমন হতে পারে। সেই মিথ্যা যদি কারও ক্ষতি করে তখন তা চিন্তার বিষয় হয়ে ওঠে। সে ক্ষেত্রে বাবা-মাকে শুরু থেকেই পদক্ষেপ করতে হবে। বুঝিয়ে কাজ না হলে থেরাপির আশ্রয়ও নিতে হতে পারে। কারণ অকারণ মিথ্যা বলা অভ্যাস ‘অ্যাংজ়াইটি ডিসঅর্ডার’-এর কারণও হয়ে উঠতে পারে। অনিন্দিতা বলছেন, বাবা-মা বা পরিবারের কারও যদি এমন মিথ্যা বলার অভ্যাস থাকে, তা হলে তার থেকেও ছোটরা তা শিখে যায়।

সোহাগ না কি শাসন, কী ভাবে বোঝাবেন?

১) শান্ত মনে ধৈর্য রেখে কথোপকথনের পথে যেতে হবে বাবা-মাকে। এমনই মনে করেন পায়েল। তাঁর পরামর্শ, বকুনি বা উপদেশ দেওয়া, গায়ে হাত তোলা অথবা কটু কথা বা গালমন্দ করলে মিথ্যা বলার জেদ আরও চেপে বসবে। তাই সন্তানের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনাই শ্রেয়।

২) সন্তানের সব বিষয়ে অনধিকার চর্চা করবেন না। ধরুন, মেয়ে আপনার সামনে বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে চাইছে না, তা হলে আপনি সরে যান। সব কাজে বাধা দিলে ক্ষোভ বাড়বে। তখন গোপন করা বা মিথ্যা বলার প্রবণতা তৈরি হবে। সব বিষয়ে নাক না গলিয়েও সতর্ক নজর রাখা যায়।

৩) মনোযোগ আকর্ষণ করতে যদি মিথ্যা বলে, সেই মুহূর্তে ভুল শুধরে দিন। বলুন আপনি রেগে যাননি বা বকাঝকা করবেন না। শুধু জানতে চাইছেন, সে কেন এমন কথা বলছে যার কোনও অস্তিত্বই নেই। এক বারে হয়তো শুনবে না, কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে শিখে যাবে।

৪) সন্তানকে সময় দিন। বয়ঃসন্ধিতে অহেতুক উপদেশ বা নীতিকথা শোনার রুচি থাকে না এখনকার ছেলেমেয়েদের। তাই বন্ধুর মতোই মিশতে হবে। তার ভাল লাগা, মন্দ লাগাগুলিকে গুরুত্ব দিন। তার কথা শুনুন, শ্রোতা হয়ে যান। তা হলেই আপনার প্রতি ভরসার জায়গা তৈরি হবে।

৫) অনেক সময়ে বন্ধুদের প্রভাবেও মিথ্যা বলার ঝোঁক তৈরি হয়। বাবা-মাকে খেয়াল রাখতে হবে সন্তান কার কার সঙ্গে মিশছে, কোন কথাটি গোপন করছে। শাসনের বাড়াবাড়ি না করে বোঝাতে হবে যে বয়ঃসন্ধিতে কী কী ভুল হতে পারে, কোন পদক্ষেপে ক্ষতি হতে পারে। নিরাপত্তার বিষয়টি ধৈর্য ধরে বোঝালেই দেখবেন সন্তান আপনার কথা শুনছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Parenting Mindful Parenting Teenager
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy