শিশুকে ঘর গোছানো শেখাবেন কী ভাবে। ছবি: ফ্রিপিক।
ছোট হলেও বোঝাতে হবে খেলনা ছড়িয়ে রাখতে নেই। বই পড়ে পরিপাটি করে তুলে রাখতে হয়। নিজের ব্যাগ, জামাকাপড় যদি নিজেই গুছিয়ে রাখা শিখে যায়, তা হলে ছোট থেকেই দায়িত্ববোধ তৈরি হবে। আত্মবিশ্বাসও বাড়বে। সন্তানকে নিজের ঘর গোছানোর দায়িত্ব দিন। ঘর পরিষ্কার রাখতে বলুন। শুরুতে হয়তো কথা শুনতে চাইবে না। কিন্তু হাতে ধরে শিখিয়ে দিতে হবে, কী ভাবে নিজের জিনিসপত্রের যত্ন নিতে হয়। কাজের প্রতি শিশুদের আগ্রহ বাড়ানোর দায়িত্ব অভিভাবকদেরই। শুধু একটু পরিকল্পনা মাফিক চলতে হবে।
শিশুর ঘর গুছিয়ে রাখা বেশ ঝক্কির কাজই। খুদে এটা টানছে, ওটা ফেলছে। এক খেলনা নিয়ে রোজ খেলতেও চায় না। যে খেলনাগুলি বাতিল করছে, সেগুলি ঘরময় ছড়িয়ে রাখছে। আবার নতুন খেলনা টেনে নিচ্ছে। একটু বড় হলে বইখাতা, রং, পেন্সিল ব্যাগে হয়তো আপনিই গুছিয়ে দিচ্ছেন। না হলেই হারিয়ে ফেলছে, বা হয়তো স্কুলে ফেলে চলে আসছে। তাই ছোট থেকেই জিনিসপত্রের গুরুত্ব বোঝানো দরকার শিশুকে। সেটা কী ভাবে হবে?
১) শিশুর ঘর যদি আলাদা হয়, তা হলে ওকে নিজের ঘর গোছানোর দায়িত্ব দিন। হাতের কাছে ছোট্ট ঝুড়ি বা বাক্স রাখুন। বলুন, খেলার পর খেলনাগুলি তাতে গুছিয়ে রাখতে। শুরুতে আপনি দেখিয়ে দিন, কী ভাবে গোছাতে হবে। ভাল করলেই প্রশংসা করুন। ছোট ছোট পুরষ্কার দিন।
২) শিশুর জন্য আলাদা ওয়ার্ড্রোব রাখুন। সেখানে প্রচুর হ্যাঙার ঝুলিয়ে দিন। খুদেকে বলুন নিজের জামাকাপড় ওই হ্যাঙারে ঝুলিয়ে রাখতে। ওয়ার্ড্রোবের তাকেও জামাকাপড় রাখতে বলুন। প্রথমে হয়তো ভাঁজ করে গুছিয়ে রাখতে পারবে না। কিন্তু ধীরে ধীরে অভ্যাস তৈরি করুন।
৩) নতুন ও পুরনো মিলিয়ে খুদের কত যে খেলনা, তার হিসাব হয়তো আপনারই নেই। সব খেলনা এক জায়গায় রাখা সম্ভব নয়। পুতুল বা ছোট ছোট খেলনা গাড়ি সাজিয়ে রাখার জন্যে একটা টানা লম্বা র্যাক বানিয়ে দিলে ভাল হয়। শিশুকে বলুন, সেই র্যাক থেকে খেলনা নামিয়ে খেলে আবার যেন সেখানেই তুলে রাখে।
৪) একটু বড় হলে বইখাতা, পেন্সিলের মতো জিনিসপত্র রাখার জন্য ছোট স্টাডি টেবিল-চেয়ার বানিয়ে দিন। পড়ার টেবিলের উপর বই রাখার ‘শেলফ্’ হলে ভাল হয়। বই কী ভাবে পর পর সাজিয়ে রাখতে হয়, তা শিখিয়ে দিন। পড়ার বই আর গল্পের বই আলাদা রাখার জায়গা করুন। টেবিলের উপর রেখে দিন পেনদানি। সেখানে পেন, পেন্সিল, রং গুছিয়ে রাখতে বলুন। নিজের পড়ার টেবিল যদি তারা নিজেরাই গুছিয়ে রাখে, সে ক্ষেত্রে বই-খাতার সঙ্গেও একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পড়তে বসার বিষয়ে আগ্রহও বাড়ে।
৫) সন্তান যখন নিজের ঘর গোছাবে, সঙ্গে থাকতে হবে অভিভাবককেও। তাকে সাহায্য করার জন্য। তবে ঘর গোছানোর সময়ে নিজের মতামত না দিয়ে, সন্তানের মতামতকে গুরুত্ব দিন।
৬) শিশুরা সব সময়েই খেলাচ্ছলে কাজ করতে পছন্দ করে। সন্তানকে দিয়ে যখন কোনও কাজ করাবেন, তখন তা মাথায় রাখতে হবে। বলুন, আজ নতুন কিছু খেলবেন। দেখবেন ঘর গোছানোয় ওর আগ্রহ বাড়ছে।
৭) অনেক শিশুই বইখাতা ছিঁড়ে ফেলে, কিছু ক্ষণ খেলার পর খেলনা ভেঙে ফেলে। সেই সময়ে বকাবকি না করে বোঝাতে হবে যে, তার বইখাতা, খেলনা, টুকিটাকি সব জিনিসই কত মূল্যবান। যত্ন নিলে পরে সেগুলিই তার কত কাজে আসবে।
৮) খুদের যদি সৃজনশীল কাজে আগ্রহ থাকে, তা হলে ওর হাতে আঁকা ছবি, ছোট ছোট ক্রাফ্ট ঘরে সাজিয়ে রাখুন। তেমন কাজ করতে উৎসাহ দিন।
৭) সকলের সামনে শিশুর নিন্দে বা সমালোচনা করবেন না। এতে ওর আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরতে পারে। কথাবার্তায়, আচার-আচরণে বরং ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়ে ওকে উৎসাহিত করুন।
অভিভাবকদের নিজেদের দায়িত্বও কিন্তু শেষ হয়ে যাচ্ছে না। ঘুম থেকে ওঠার পরে মা-বাবা যদি নিজেদের বালিশটা নিজেরা গোছায়, তাঁদের দেখে শিশুও নিজের বালিশটা নিজে গুছিয়ে রাখতে শিখবে। যদি সে দেখে, তার খেলনা, বইয়ের তাক গোছানো, তা হলে তা করার আগ্রহ তৈরি হবে তার মধ্যেও। তাই সে দিন থেকে বাবা-মাকেই বেশি যত্নশীল হতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy