আমির খান ও কিরণ রাও। ফাইল চিত্র
বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেই থাকে।
তাতে সেই দম্পতির বাইরে আর কারও বিশেষ হাত থাকার কথা নয়। তবে মাথা থাকে। কথাও থাকে। পরপর দুই বিচ্ছেদ-বিবৃতি যেন সেই কথার মোড় ঘোরানোর চেষ্টা দেখাল।
শনিবার সকালে বলিউডের আমির খান এবং তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী কিরণ রাওয়ের বিবাহবিচ্ছেদের কথা একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়। আমির-কিরণ জানিয়েছেন, দাম্পত্য না টিকলেও একে-অপরের পরিবার হয়েই থাকবেন দু’জনে। একসঙ্গে কাজও করবেন। যেমন এতদিন করে এসেছেন।
মাস দুয়েক আগে এমনই আর এক বিবৃতি পেয়ে অবাক হয়েছিল পৃথিবী। দীর্ঘ ২৭ বছরের দাম্পত্য জীবন শেষের ঘোষণা করেন বিল গেটস্ ও স্ত্রী মেলিন্ডা। সেখানেও একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা প্রকাশ করেন তারকা দম্পতি।
বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরে বন্ধুত্বপূর্ণ আদানপ্রদান যে আগে একেবারেই দেখা যায়নি, তা নয়। বহু বিচ্ছেদের পরে দেখা গিয়েছে, সন্তান পালনের দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছেন দু’জনে। সে সূত্রে দেখাও করেন। হৃত্বিক রোশন ও তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী সুজানকে একসঙ্গে ছুটি কাটাতেও দেখা গিয়েছে বিচ্ছেদের পরে। কঙ্কনা সেনশর্মা আর রণবীর শোরেও একসঙ্গে পার্টি করেছেন। তবে সে সবই সন্তানদের মুখ চেয়ে। নিজেদের একে-অপরের পরিবার বা কাজের সঙ্গী হিসাবে দাবি জানানো হয়নি। নিজের তাগিদেও যে প্রাক্তনের সঙ্গে কোনও ধরনের সম্পর্ক রাখা যায়, সব সময়ে স্পষ্ট ভাবে দেখানো হয়নি।
কিন্তু এই দুই বিবৃতি আলাদা। দম্পতি থাকবেন না তাঁরা। কিন্তু একে অপরের পাশে থাকবেন। ভূমিকায় পরিবর্তন ঘটবে। সম্পর্ক নতুন আকার নেবে।
এই দুই বিবৃতি কি তবে নতুন ভাবে ভাবতে শেখাবে সমাজকে? নাকি সমাজ যেদিকে যাচ্ছিল, তাতেই সিলমোহর দিল পরপর এই দুই বিবৃতি? এর পরে কি প্রাক্তনের সঙ্গে কাফেতে বসে আড্ডা দিতে দেখলে কিছুটা কম আলোচনা হবে তা নিয়ে?
সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অনন্যা চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, তারকারা এখন খোলাখুলি বলছেন বলে এই সব পরিবর্তন অনেকের চোখে পড়ছে। ‘‘তবে আগেও যে এ রকম হতো না, তা নয়। সকলে বিবাহবিচ্ছেদের পরে একে অপরের শত্রু হয়ে যান না। আগে একটা সামাজিক চাপ থাকত। এখন তা কমছে। তাই এ ধরনের বন্ধুত্বপূর্ণ কথা সামনে আসছে,’’ বক্তব্য অনন্যার। এমন কথা যত সামনে আসবে, বিয়ে ভাঙা নিয়ে কুমন্তব্যও তত কমবে বলে মনে করেন তিনি।
বিয়ে ও পরিবারের সামগ্রিক ধারণাই এখন বদলে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সমাজতাত্ত্বিকেরা। সমাজতাত্ত্বিক অভিজিৎ মিত্রের মতে, একসঙ্গে থাকা মানেই এক ছাদের তলায় থাকা আর নেই। অনেকে বিবাহিত হয়েও নানা কারণে দূরে থাকেন। উল্টোটাও এখন সত্যি। এক ছাদের তলায় থাকলেও বহু ক্ষেত্রে একসঙ্গে থাকা বোঝায় না।
এত বদলের মাঝে বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে পুরনো কিছু ধারণা ধরে রাখা চলে কি? চলে না বলেই যেন ইঙ্গিত দিচ্ছে তারকাদের বিচ্ছেদের ভঙ্গি। বরং আগামী দিনে বিচ্ছেদের ভাবনা কিছুটা বন্ধুত্বপূর্ণ হতে সাহায্য করবে এমন সব পদক্ষেপ, আশা সমাজতাত্ত্বিকদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy