কুকুর আঁচড়ালে বা কামড়ে দিলে শুধু জলাতঙ্কের প্রতিষেধক বা অ্যান্টি-র্যাবিস টিকা নিলেই যে বিপদ কেটে যাবে, তা নয়। নিতে হবে আরও একটি প্রতিষেধক। কুকুরের কামড়ে যদি গভীর ক্ষত তৈরি হয়, তা হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই প্রতিষেধক নিলে তবেই র্যাবিস ভাইরাসের থেকে রেহাই পাওয়া যাবে বলেই দাবি গবেষকদের। ‘দ্য ল্যানসেট’ মেডিক্যাল জার্নালে এই নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, এ দেশে প্রতি বছর পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় র্যাবিস ভাইরাসের কারণে। অনেকেই সময় মতো জলাতঙ্কের টিকাও নেন, কিন্তু তার পরেও শরীরে সংক্রমণ ঘটে। এর কারণ হল, কেবল অ্যান্টি-র্যাবিস টিকা ভাইরাস ধ্বংস করতে পারে না। যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, যেমন শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে কুকুর কামড়ে দিলে কেবল ওই একটি টিকা নিয়ে ভাইরাস ঠেকানো যাবে না। র্যাবিস ভাইরাস খুব দ্রুত দেহকোষের মধ্যে বিভাজিত হয়ে বংশবিস্তার করতে পারে। এই ভাইরাস শরীরের রোগ প্রতিরোধী কোষগুলিকে একের পর এক নষ্ট করতে থাকে। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, টিকা নেওয়ার ৭-১০ দিন পরে ধীরে ধীরে অ্যান্টিবডি তৈরি শুরু হয়। এর মধ্যেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে সারা শরীরে।
তা হলে উপায়?
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, জলাতঙ্কের টিকার পাশাপাশি আরও একটি প্রতিষেধক নিতে হবে, যার নাম র্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন (আরআইজি)। এই প্রতিষেধকটি কৃত্রিম অ্যান্টিবডি দিয়েই তৈরি হয়েছে। ইঞ্জেকশন নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অ্যান্টিবডি রক্তে মিশে যাবে ও ভাইরাসগুলিকে ধ্বংস করতে শুরু করবে। জলাতঙ্কের টিকার সঙ্গেই র্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন প্রতিষেধক নিলে দ্বিস্তরীয় সুরক্ষাবলয় তৈরি হবে শরীরে। ফলে প্রাণসংশয়ের ঝুঁকি থাকবে না।
আরও পড়ুন:
কুকুর কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কী করা উচিত?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র একটি নির্দেশিকা রয়েছে। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী, কুকুর কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতস্থানটি ভাল করে জল দিয়ে ধুতে হবে। অন্তত ১৫ মিনিট জায়গাটিতে টানা জল দিয়ে যেতে হবে।
এর পরে আয়োডিন বা অ্যালকোহল (৭০ শতাংশ) দিয়ে জায়গাটি পরিষ্কার করতে হবে, যাতে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে না পারে।
এর পরে যদি জলাতঙ্কের টিকা বা ‘অ্যান্টি-র্যাবিস ভ্যাকসিন‘ (এআরভি) নেন তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সময় দেখে র্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন টিকাও নিয়ে নিতে হবে। পাঁচটি ডোজ়ে নিতে হবে এই টিকা। একটি ডোজ় সঙ্গে সঙ্গে নিতে হবে। অন্যগুলি ৩, ৫, ৭ ও ১৪ দিনের ব্যবধানে নিতে হবে। পঞ্চম ডোজ়টি নিতে হবে ২৮ দিন পরে।
দাম কত?
এ দেশে জলাতঙ্কের টিকার দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে হলেও র্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিনের দাম বেশি পড়বে। এই টিকার ডোজ়ের দাম ৪ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে।