লিভ ইন করলে লোকে কী বলবে! গ্রাফিক: সনৎ সিংহ
‘লিভ ইন’ কথাটি শুনলে আজও সমাজের একটি বড় অংশের মানুষের ভ্রূ ‘সেকেন্ড ব্র্যাকেট’ হয়ে যায়। কেউ আঁতকে ওঠেন। কেউ আবার বিরক্তিতে খড়্গহস্ত হন। আবার এমনও বহু মানুষ আছেন, যাঁরা বিশ্বাস করেন যে বিষয়টিতে আদৌ আপত্তির কিছু নেই। তাই বিষয়টির প্রাসঙ্গিকতা এখানেই, যে পছন্দ হোক বা না হোক, উপেক্ষা করা সহজ নয়।
কিন্তু ঠিক কী কারণে এমন হয়? কেন সমাজের একটি অংশ মেনে নিতে পারে না অপরের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তকে? এই প্রতিরোধের শিকড়টি ঠিক কোথায়? সমাধানই বা কী? দুই মতামতের মাঝে কি কোনও ধরনের সংলাপ সম্ভব? তা নিয়েই সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক ও ইউটিউবে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এটি ছিল ষোড়শ পর্ব। বিষয়— ‘লিভ ইন করলে লোকে কী বলবে!’
‘লিভ ইন’ নিয়ে ছুঁৎমার্গের প্রথমেই যে জিনিসটি না বললেই নয়, তা হল, অকস্মাৎ কামগন্ধ। সম্পর্কের আর কোনও সামাজিক চুক্তিতে যৌনতাকে এমন ভরকেন্দ্র ভাবা হয় কি না, সন্দেহ। অনুষ্ঠানের প্রথম চিঠিতেই উঠে এল সে কথা। গবেষক তনুশ্রী জানালেন, বিবাহের আড়ম্বরে বিশ্বাসী নন বলেই তিনি ‘লিভ ইন’ সম্পর্কে থাকতে চান। কিন্তু নিজের এই মত পরিজনদের জানাতেই প্রতিক্রিয়াতে ভেসে আসে নানা ধরনের বক্রোক্তি। কেউ বলেন, ‘‘ওহ্! ফুর্তি করবি কিন্তু দায়িত্ব নিবি না?’’ কারও আবার দাবি, তিনি এক জনের সঙ্গে বাঁধা পড়তে চান না বলেই ‘লিভ ইন’-এ আগ্রহী। তনুশ্রীর মনে প্রশ্ন জাগে, ‘‘লিভ ইন মানে যেন শুধুই যৌনতা! বিয়ের যৌনতাটাই যেন শুধু পবিত্র, আর বিয়ে ছাড়া শারীরিক সম্পর্ক আসলে অশ্লীল, অপবিত্র, অশুচি।’’ পাশাপাশি, অনেকেরই পূর্বানুমান, ‘লিভ ইন’ মানেই দায়িত্বহীন সম্পর্ক।
মনোবিদ অনুত্তমা প্রথমেই জানান, আমরা অনেকেই বহুগামিতার সঙ্গে ‘লিভ ইন’কে গুলিয়ে ফেলি। দু’টি কিন্তু আদৌ এক বিষয় নয়। কেউ যদি কোনও সম্পর্কে না-ও থাকেন, তবে তাঁর মানে কি তিনি বহুগামী? তা তো নয়। কেউ যদি বৈবাহিক প্রতিষ্ঠানে বিশ্বাস না করেও যৌথতায় বিশ্বাস করেন, তবে আমরা কেন ভেবে নেব যে, তিনি আসলে একই সঙ্গে অনেকগুলি সম্পর্কে জড়াতে চাইছেন? মনোবিদের মতে, এই ধারণার মূলে এমন একটি ভাবনা, যা আমাদের বলে দেয়, বিয়ে করে নেওয়া মানেই সম্পর্ক অনেক বেশি মজবুত হয়ে গেল। বিয়ে করা মানেই সম্পর্কের আঠা যেন বেড়ে যায় অনেকটা। অথচ সত্যিই কি তাই? তা হলে এত বিয়ে ভেঙে যায় কেন। অন্য দিকে এমনটাও ভেবে নেওয়া ঠিক নয় যে, যাঁরা লিভ ইন সম্পর্কে রয়েছেন, তাঁরা অন্য সম্পর্কের জন্য দরজা খুলে রেখেছেন। অনেকে বিবাহিত হওয়ার পরেও জড়িয়ে যান অন্য সম্পর্কে। তাই মনোবিদের মত, ‘‘দু’টি মানুষের মধ্যে তৃতীয় কোনও মানুষ আসবেন কি না, তা কিন্তু ‘লিভ ইন’ বা বিবাহের চুক্তি দিয়ে নিশ্চিত করা যায় না। কিছুটা হলেও নিশ্চিত করা যায় দু’জনের সম্পর্কের লালনের মধ্যে দিয়ে, পারস্পরিক আস্থার মধ্যে দিয়ে।’’ আর যৌনতা নিয়ে মনোবিদের বক্তব্য, ব্যক্তিগত আপত্তি থাকতে পারে, কিন্তু এ কথা সকলেই ভিতরে ভিতরে জানেন যে, ‘লিভ ইন’ বা বিবাহ ছাড়াও বহু মানুষ যৌনতায় লিপ্ত হন। তার জন্য একত্র রাত্রিবাস বা এক ছাদের তলায় থাকার দরকার হয় না। তা হলে এমন ভেবে নেওয়ার কি সত্যিই কোনও কারণ আছে, যে যাঁরা ‘লিভ ইন’ করেন, তাঁরা সকাল থেকে রাত, শুধুই যৌনতায় মত্ত থাকেন? মনোবিদের পরামর্শ, ‘‘আমি যদি বিবাহে বিশ্বাসী হই, তবে আমি বিবাহের দিকে যাব। কিন্তু যাঁরা ‘লিভ ইন’-এর কাঠামোয় বিশ্বাসী, তাঁদের ক্ষেত্রে যে বিশেষ দিকগুলির দিকে তাকিয়ে আমি তাঁদের আটকানোর চেষ্টা করছি, আসুন ভেবে দেখি সেই দিকগুলি কি শুধু ‘লিভ ইন’-এর সঙ্গেই সম্পর্কিত? প্রত্যেকটি কি শুধু ‘লিভ ইন’-এর ক্ষেত্রেই ঘটছে? তা হলেই দেখবেন হয়তো মনের ভার কিছুটা হলেও লাঘব হবে।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy