গ্রাফিক্স: সনৎ সিংহ
বিবাহ দু’জন মানুষকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসে। সম্পর্কে একটি সামাজিক সিলমোহর পড়ে। একে অপরকে ভালবেসে, একসঙ্গে থাকতে চেয়ে দু’জন মানুষ বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। আবার দুই পরিবারের সম্মতিতে স্বল্প পরিচিত দুই ব্যক্তিও বাঁধা পড়েন বিয়ের সম্পর্কে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বিবাহ পরবর্তী জীবনে বিভিন্ন কারণে সম্পর্কে জটিলতা তৈরি হয়েছে। প্রথম প্রথম মানিয়ে নেওয়া, মেনে নেওয়ার চেষ্টা করা হয় অনেক ক্ষেত্রে। কিন্তু একটা সময়ের পর বিচ্ছেদ ছাড়া আর কোনও সমাধান থাকে না। যাবতীয় জটিলতার অবসান ঘটাতে পাকাপাকি দূরত্বই একমাত্র উপায় বলে মনে হয়। কিন্তু অনেক সময়ে সেটা সম্ভব হয় না। বিয়ে থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে বাধা দেওয়া হয়। অনেকে বিচ্ছেদ চেয়ে হুমকির মুখেও পড়েছেন। এবং সে ক্ষেত্রে বিয়ে ভাঙলে লোকে কী বলবে, সে চিন্তায় মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় হয়েছে। একেবারে নিভে যাওয়া সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার সমস্যা নিয়েই সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক ও ইউটিউবে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এটি ছিল পঞ্চদশ পর্ব। এ পর্বে আলোচনা হয় বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে।
দমবন্ধ করা বৈবাহিক সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়ে প্রচুর কটূক্তির শিকার হতে হয়েছে অনেককেই। তেমনই কিছু অভিজ্ঞতার কথা উঠে এল আলোচনায়। প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে পাঠানো যায় প্রশ্ন। এই পর্বেও বহু মানুষের কাছ থেকে ই-মেলে প্রশ্ন পেয়েছিলেন মনোবিদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী যে সন্দেহপ্রবণ, তা তিনি প্রথম থেকেই টের পেয়েছিলেন। তাঁর বাবা মারা যাওয়ার প্রায় ২৫ দিনের মাথায় বাড়ির কিছু কাজ না করা নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা। স্বামী গায়ে হাত পর্যন্ত তোলেন। আপাতত স্বামীর ঘর ছেড়েছেন। আলাদা থাকছেন। কিন্তু তিনি চাইছেন এই সম্পর্ক থেকে পাকাপাকি ভাবে বেরিয়ে আসতে।
আরও এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, বিয়ের আগে তিনি জানতে পারেননি যে তাঁর স্বামী শারীরিক ভাবে অক্ষম। সম্বন্ধ করে বিয়ে। শ্বশুরবাড়ির সকলেই জানতেন সে কথা, অথচ তাঁকে কিছু বলা হয়নি। এখন জানতে পেরে বিয়ে থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
কারও হুমকির সঙ্গে ভয়ের সহবাসের নাম বিয়ে নয়। বিবাহ যৌথতার গল্প বলে। পরস্পরের সম্মানের, একসঙ্গে পথচলার গল্প। এই ধরনের নিগ্রহের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময়ে যদি মানিয়ে নেওয়ার প্রশ্ন জাগেও, তা উড়িয়ে দিন। বিয়ে থেকে বেরিয়ে এলে পরিবারকে পাশে না পেলেও এমন অনেক সংগঠন আছে যারা আপনার পাশে থাকতে পারে। পরামর্শ দিলেন মনোবিদ অনুত্তমা।
এই পর্বে অধিকাংশ মানুষই নিজেদের নাম আড়ালে রেখে প্রশ্ন পাঠিয়েছেন। তেমন আরও এক জন জানান, বাড়ির কাজে সাহায্য করার জন্য এক জনকে রাখতে চেয়েছিলেন। তা নিয়েও দিনের পর দিন শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। তিনি আর এই সম্পর্কটি এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন না। অথচ তাঁকে ক্রমাগত বিয়ে না ভাঙার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অনুত্তমা বলেন, ‘‘যে সম্পর্কে আপনার মানসিক স্বাস্থ্য বিঘ্নিত হচ্ছে, বুঝতে পারছেন আপনি ভাল নেই, হয়তো মনেই পড়ে না আপনি শেষ কবে হেসেছেন— এ কিন্তু সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার একটি সঙ্কেত। আমরা সম্পর্কে আসি যাতে দু’জনে মিলে একটা ভাল থাকা রচনা করতে পারি। এ ক্ষেত্রে আরও একটি প্রয়োজনীয় ব্যাপার হল, আপনি যদি আইনি সাহায্য নেন, তা হলে আপনার সঙ্গী বুঝবেন যে তিনিও কোনও সমস্যায় পড়তে পারেন। এবং এ রকম চলতে থাকলে বিপদে বাড়বে। ফলে ভয় না পেয়ে শক্ত থাকুন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy