মা হবেন ভেবেই ভয় লাগছে? ছবি: সংগৃহীত।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘মন ভালো নেই’ কবিতার লাইন মনে আছে? ‘...বিকেল বেলায় একলা একলা পথে ঘুরে ঘুরে কিছুই খুঁজি না কোথাও যাই না কারুকে চাইনি...’ মন ভাল না থাকলে সত্যিই তো আমরা কাউকে চাই না। ভিড়ের মধ্যে থেকেও একেবারে একা হয়ে যাই। দু’চোখ খোলা রেখেও কিছুই নজরে পড়ে না। কিন্তু মন ভাল না থাকার কারণ খুঁজতে চেষ্টা করেন কি? পাশে ভরসাযোগ্য তেমন কাউকে না পেলে মনের কথা বলতে ইচ্ছে না করাই স্বাভাবিক। অবসাদের কথা বলতে গিয়ে উপহাসের শিকার হওয়ার নজিরও নেহাত কম নয়। বাড়ির বড়দের কাছে ছোটদের অবসাদ কাজ না করার ‘অজুহাত’ হয়ে দাঁড়ায়। আবার অনেকেই জড়তা কাটিয়ে সকলে মনোবিদের কাছে গিয়ে উঠতে পারেন না। কারণ, অবশ্যই খরচ।
মনের কথা, জীবনের কথা, ঘরে-বাইরে নানা রকম অভিজ্ঞতার কথা শোনার জন্য সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে লাইভ এসেছিলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘লোকে কী বলবে’র এই পর্বে নির্দিষ্ট কোনও বিষয় ধার্য করা থাকে না। এই অনুষ্ঠানের দর্শকেরা সরাসরি প্রশ্ন রাখতে পারেন মনোবিদের কাছে। লাইভ অনুষ্ঠানে নাম প্রকাশ করতে না চাইলে, সে ব্যবস্থাও আছে।
লোকে কী বলবে অনুষ্ঠানের এক দর্শক, তানিয়া সেন জানালেন তাঁর মনের কথা। নতুন অতিথি আসার খবর পেয়েছেন মাস তিনেক হল। কিন্তু কোনও ভাবেই মন থেকে খুশি হতে পারছি না। শারীরিক বেশ কিছু সমস্যার কারণে কাজ থেকেও বিরতি নিতে হয়েছে তানিয়াকে। তার পর থেকেই মানসিক নানা রকম সমস্যার শিকার হতে হচ্ছে তাঁকে। নিজের জীবনে যে বড় বদল ঘটতে চলেছে, সেই সত্যি মেনে নিতে কি ভয় পাচ্ছেন তিনি? উত্তর খুঁজলেন মনোবিদ। অনুত্তমার কথায়, গর্ভধারণ করার প্রথম দিকে শরীর নানা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায়। তাই মনের উপর চাপ পড়া অবান্তর নয়। নিজের এবং গর্ভস্থ ভ্রূণের জন্য যদি সম্ভব হয় দক্ষ, পেশাদার মনোবিদের সাহায্য নেওয়া ভাল। তবে তার আগে কিছু বিষয়ে পরিষ্কার করে বুঝে নেওয়া প্রয়োজন। মাতৃত্ব নিঃসন্দেহে আনন্দের। তবে, এই মাতৃত্ব যদি মায়ের কাঙ্ক্ষিত না হয়, সে ক্ষেত্রে মনে দোলাচল হওয়া স্বাভাবিক। এখন যেহেতু আর ভাবার অবকাশ নেই মনোবিদের পরামর্শ হল একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার। কারণ, চার মাস পর থেকে শরীর এবং মন এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করে। সমস্যাগুলো একটু থিতু হতে শুরু করে। তার পরেও সমস্যা হতে পারে। তার জন্য নিজেকে সচেতন বোঝাতে হবে। মাতৃত্ব কিন্তু রোগ নয়। তাই সামান্য কয়েকটা মাসের জন্য সব বন্ধ হয়ে যাবে এমনটা ভাবার কিন্তু কোনও কারণ নেই। অফিসে না গিয়ে যদি বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ থাকে, সেই ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। মা হওয়ার পর জীবনে কিছু বদল তো আসবেই। তা খুবই স্বাভাবিক। তার জন্য যেটুকু প্রস্তুতি প্রয়োজন, তা নিতেই হবে। সেই প্রস্তুতি কিন্তু স্থায়ী বদল নয়। তাই ভয় না পেয়ে বোঝাপড়া করে নিলে নতুন মায়েদের সুবিধেই হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy