লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা গ্রাফিক: সনৎ সিংহ
ভয় কি অমূলক? ভয়ের কোনও কারণ কী সত্যিই নেই?
আছে।
ভয়ের যথেষ্ট কারণ আছে। যখন এমন দু’জন মানুষের মধ্যে প্রেম জন্মায়, যাঁদের জন্মসূত্রে ধর্ম আলাদা, তখন নানা ভয় ঘিরে ধরে যুগলকে। ভয়ের কারণ আছে, যখন তাঁরা একসঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেন। বিরোধিতা তো কেবল পরিবারের তরফ থেকে আসে না, বিরোধিতা সর্বত্র। প্রায়শই খবরের শিরোনামে আসে ভিন্ন ধর্মের প্রেম ছিল বলে গণপিটুনির মতো ঘটনা। ভিন্ন ধর্মে বিয়ে করার ‘অপরাধ’-এ হত্যা। এমন খবর আকছাড় কানে আসে। ফলে ভিন্ন ধর্মে বিবাহ করলে লোকে কী বলবে, সে প্রশ্ন ঘুরপাক খায় মনে। তেমনই কিছু অনুভূতির কথা সোমবার উঠে এল আনন্দবাজার অনলাইনের ইউটিউব এবং ফেসবুকের অনুষ্ঠান ‘লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’-র চোদ্দতম পর্বে।
ভয় দিয়ে কি প্রেম কখনও আটকানো গিয়েছে? এমন অনেক যুগল আছেন, যাঁরা মনে করেন ধর্ম কখনওই তাঁদের ভালবাসার পথে অন্তরায় হতে পারে না। সমাজ ও পরিবারের বিরোধিতার বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর পথ খুঁজে চলেছেন তাঁরাও।
২২ বছরের সুনীতা যেমন চিঠি লিখে জানিয়েছেন, ‘আমি হিন্দু। তবে অনেক বছর ধরে এমন এক জনকে ভালবাসি যিনি মুসলিম। আর এ কারণে পরিবারের লোকজন আমাকে রোজ মারধর করেন। আমি প্রতিবাদ করলে বাবা বলেন, আমি মরে গেলেই নাকি তিনি শান্তি পাবেন।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘আমি হিন্দু তবে বাংলাদেশের এক মুসলিম ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছি। সম্পর্কে আমাদের নিজেদের মধ্যে কোনও টানাপড়েন নেই। তবে বাবা বলেছেন, আমি যদি সেই ছেলেকে বিয়ে করি, তা হলে তিনি আত্মহত্যা করবেন। কী করব বুঝে উঠতে পারছি না!’
চিঠিগুলি পড়ে মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই সব ক্ষেত্রে পরিবারের সঙ্গে কথপোকথন মাধ্যমেই সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। তবে যে কোনও কারণেই শারীরিক নির্যাতন কিন্তু মেনে নেবেন না। বাড়িতেই যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তা হলে আইনের সাহায্য নিন। আপনি এক জন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ। এ আপনার সিদ্ধান্ত, আপনি কার সঙ্গে জীবন কাটাতে চাইবেন। তিনি আপনার ধর্মের না-ও হতে পারেন। তবে আপনার সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারও নেই। অবিভাবক হিসাবেও কিন্তু কারও প্রতি শারীরিক হিংসার অধিকার জন্মায় না। তাঁরা বিরোধিতা করতে পারেন, মৌখিক ভাবে জানিয়ে দিতে পারেন তাঁদের অনিচ্ছার কথা। তবে মারধর করার অধিকার তাঁদের নেই। শারীরিক নির্যাতন কখনওই বরদাস্ত করবেন না। সবের আগে রুখে দাঁড়াতে হবে হিংসার বিরুদ্ধে।’’
মনোবিদ আরও বলেন,‘‘ পরিবারের সদস্যদের বোঝান, ভিন্ন ধর্মের সম্পর্ক থেকে বার করে এনে অন্য যে মানুষটির সঙ্গে আপনার বিয়ে দিতে চাইছেন তাঁরা, সেই মানুষটির জীবন নিয়ে খেলা করার অধিকার কি আদৌ তাঁদের আছে? অভিভাবকরা অনেক ক্ষেত্রেই পরামর্শ দেন, একসঙ্গে থাকতে থাকতে একদিন ঠিক প্রেম-ভালবাসা জন্মে যাবে। আচ্ছা তাঁদের পাল্টা বলে দেখুন না সেই নিয়মটা কি তাঁদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য নয়! এমনটা তো হতেই পারে যে ভিন্ন ধর্মের মানুষটিকে মানতে তাঁদের এতটা আপত্তি হচ্ছে সেই মানুষই এক দিন তাঁদের নয়নের মণি হয়ে উঠবেন না, সে কথা কেউ কি বলতে পারে?’’
কার সঙ্গে ঘর বাঁধবেন, সে সিদ্ধান্ত একান্তই আপনার। পরিবারকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। এমন অনেক দাম্পত্যের উদাহরণ দিন, যেখানে ভিন্ন ধর্মে বিয়ে করেও সেই দম্পতি সুখী। পরামর্শ দেন অনুত্তমা।
যাঁদের মনে ধর্ম নিয়ে এত টানাপড়েন, সেই অবিভাকদের উদ্দেশ্যে অনুত্তমা বলেছেন, ‘‘ধর্মের বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে এসে সন্তানের ভাল থাকাকেই গুরুত্ব দেওয়ার কথা ভাবুন। সমাজে অনেক লোক অনেক কথা বলবেন। তাঁদের গুরুত্ব না দিয়ে সন্তানের ভাল থাকাই আপনার একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে— সেটাই তো কাম্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy