লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
মেসেজ পাঠিয়েছেন, সে অনলাইনও আছে কিন্তু উত্তর দিচ্ছে না আপনার প্রশ্নের! কার সঙ্গে কথা বলছে সঙ্গী? এমন প্রশ্ন প্রায়ই ঘুরপাক খায় আপনার মনে? আপনি জানেন, আপনার প্রেমিক আপনাকে বড্ড ভালবাসেন। তবুও কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না সন্দেহ! সম্পর্কে এক বার সন্দেহের বীজ তৈরি হয়ে গেলে, সেই সম্পর্কের আয়ু বেশি দিন হয় না! একে অপরের প্রতি বিশ্বাস সম্পর্কের ভীত মজবুত করে। মনে সন্দেহ বাসা বাঁধলেই মুশকিল!
সন্দেহ আদতে কি বাতিক? অসুখ? সন্দেহ মানেই কি অমূলক না কি তার মধ্যে কোথাও বাস্তব কিছু কারণও থেকে যায়? এই নিয়েই সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এই সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘তোমাকে সন্দেহ করি!’
এই বিষয় অনুত্তমা বলেন, ‘‘কেবল সন্দেহবাতিক মনোভাবের কারণে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে, এমন অভি়জ্ঞতা অনেকেরই। তেমনই কিছু অভিজ্ঞতার কথা উঠে এল আলোচনায়। প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে পাঠানো যায় প্রশ্ন। এই পর্বেও বহু মানুষের কাছ থেকে ই-মেলে প্রশ্ন পেয়েছিলেন মনোবিদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা লেখেন, ‘জানুয়ারি মাসে প্রেমিকের সম্পর্ক কিছু কথা আমার কানে আসে। কিন্তু পরে জানতে পারি, সেই সব কথাই মিথ্যে। প্রেমিক বার বার আমার ভুল ভাঙ্গানোর চেষ্টা করেছে। আমি জানি ও ভাল ছেলে, তবুও ওকে বিশ্বাস করতে পারছি না! মাঝেমাঝে নিজের উপর ঘৃণা হয়। এই সব চিন্তার মাঝে আমি মোটেই ভাল নেই’।
আর এক জন মহিলা লেখেন, ‘সঙ্গীর পরিবারের এক বিশেষ মানুষকে নিয়ে আমার সন্দেহ। আমরা যখনই ফোনে কথা বলি তখন ওই মহিলার কণ্ঠস্বর শুনলেই আমার অস্বস্তি হয়, রাগ হয়। আমার তাঁকে নিয়ে প্রবল সন্দেহ। আমি যুক্তি দিয়ে বুঝতে পারি বিষয়টা তা নয় হয়তো, কিন্তু আবেগ কিছুতেই বাঁধ মানছে না!’
এক জন লিখেছেন, তাঁর সঙ্গীর ফেসবুক পেজে এমন অনেকে আছে যারা গায়ে পড়ে কমেন্ট করে, ওঁর সমস্যা তাঁদের নিয়ে।
অনুত্তমা বললেন, ‘‘বিশ্বাস সত্যিই বড় পলকা, কাচের মতো। তাতে যদি খুব গাঢ় দাগ পড়ে, দাগ যে পড়েছিল সেই আভাস কিন্তু চিরকাল থেকে যায়। সেই যন্ত্রণা থেকে বেরিয়ে আসাও কঠিন, এটাও সত্য। আপনি কাউকে ভালবাসলে তাঁর জীবনে অন্য কোনও ভূমিকায় আর কেউ থাকবে না, এমনটা তো সম্ভব নয়! এমনও তো হতে পারে যাঁকে নিয়ে আপনি সন্দেহ করছেন, তাঁর সঙ্গে আপনার সঙ্গীর সখ্যতা আপনার মনে ঈর্ষা তৈরি করছে। কিন্তু সকলের জীবনে এক এক সম্পর্ক এক এক রকম। আপনার সঙ্গে কারও প্রেমের সম্পর্ক থাকতে পারে, কারও গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকতে পারে, কারও সঙ্গে আবার সহকর্মী হিসাবে ভীষণ নির্ভরতা থাকতে পারে। একটা কথা আমাদের মাথায় রাখতে হবে এই প্রত্যেকটি সম্পর্কের আকৃতি কিন্তু আলাদা, সেই মানুষগুলি থেকে আমাদের প্রত্যাশা আলাদা, বোঝাপড়া আলাদা। আপনার প্রেমিকের সঙ্গে অন্য কারও ভাল সম্পর্ক থাকাটা তো স্বাভাবিক। সে তো আর আপনার জায়গাটি কাউকে দিয়ে দিচ্ছে না। তা হলে অস্বস্তিবোধ কীসের? এর কারণ কিন্তু আপনি আপনার সম্পর্কে কোথাও একটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সবার আগে দরকার সেই বোধ নিজের মন থেকে দূর করার।’’
অনুত্তমা আরও বুঝিয়ে বললেন, ‘‘ভেবে দেখুন, আপনি যা খুঁজছেন আদতে তা খুঁজে পেলে আপনার ভাল লাগবে না। কিন্তু তথাপি আপনি খোঁজা থামাতে পারছেন না। সম্পর্কের বোমকেশ বক্সী না-ই বা হলেন। সম্পর্কে যদি গোয়েন্দাগিরিই করতে হয় তা হলে সেই সম্পর্কে না থাকাই বোধহয় ভাল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy