নিজের বাড়িতে এ বার প্রথম দুর্গাপুজো করছেন পুরোহিত নন্দিনী ভৌমিক। ছবি: সংগৃহীত।
উৎসব হবে, না কি হবে না? উচিত না কি অনুচিত— সে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। তার মধ্যেই ডাক্তারি পড়ুয়াদের অনশন শুরু হয়েছে। আবার পুজোও এসেছে। দ্রোহের সঙ্গে পুজোর কোনও মতভেদ নেই, এমন কথাও কেউ কেউ বলেছেন। কেউ বলেছেন পুজো হোক, উৎসব নয়। তবে এক নারীর কাছে এ বছর পুজোই দ্রোহ। মণ্ডপই তাঁর প্রতিবাদের মঞ্চ।
পুরোহিত নন্দিনী ভৌমিক পুজো করেন বেশ কয়েক বছর হল। তবে এই বছরের দুর্গাপুজো আলাদা। এ বার নিজের বাড়িতে, নিজের পুজো শুরু করেছেন। মেয়েদের সুরক্ষা-সম্মানের জন্য যখন উত্তাল তাঁর শহর, তখন এ ভাবেও এক নতুন দিকে পা বাড়ানোর বার্তা দিচ্ছেন এই নারী।
দুই কন্যার মা নন্দিনী সংস্কৃত সাহিত্য পড়িয়েছেন বহু কাল। তবে এ শহর তাঁকে চেনে প্রথম নারী পুরোহিত হিসাবে। নিজের বড় মেয়ে অনন্যা ভৌমিকের বিয়ে দিয়েছিলেন নিজের মতো করে। বৈদিক মতে। সেই শুরু। তার পর ছোট কন্যার বিবাহ তো নিজে দিয়েছেন বটেই, সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন আরও অনেকের। পৌরহিত্যের পথ চিনিয়েছেন আরও বহু নারীকে। দুর্গাপুজোও করেছেন অন্যত্র। এ বছর নিজের পুজো। লেক গার্ডেন্সে নিজের বাড়িতে, নিজের মতো করে।
পুজোর আয়োজনের ব্যস্ততার মাঝেই আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন নন্দিনী। জানান, বিশুদ্ধসিদ্ধান্ত মতে চার দিনের পুজো করছেন তিনি। সবটা নিজে হাতে, নিজের পছন্দে। এক নারী নিজের ইচ্ছায় পুজো করছেন, তার নিন্দা যে নেই, এমন নয়। তবে তা নিয়ে চিন্তায় নেই নন্দিনী। বরং আনন্দবাজার অনলাইনকে নন্দিনী বলেন, ‘‘সময় বদলেছে। যে কোনও বইয়ের বলা কথার মানেও কিন্তু বদলে যায় সময়ের সঙ্গে। মেয়েরা এখন সব ধরনের কাজ করছেন। আগামী দিনে আরও করবেন।’’
কলকাতা শহরের পরিস্থিতি গত দু’মাস ধরে অন্য রকম। নারীর সম্মান ও অধিকার নিয়ে বার বার কথা উঠছে। তার মধ্যে এই নারী সমাজের নিন্দা-চোখরাঙানির তোয়াক্কা না করে নিজের ভাবনার সম্মান করছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের প্রাচীন সাহিত্য, যেখানে এ সমস্ত পুজোর কথা বলা আছে, সেই সব সাহিত্য সেই সময়ের কথা বলেছে। আমরা অবশ্যই সেই সাহিত্য অনুযায়ী পুজোর যে আচার, সেগুলোকে মেনে চলি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তো অনেক কিছু বদলায়, তখনকার মেয়েদের যে অবস্থান আর এখনকার মেয়েদের যে অবস্থান, সে তো আকাশ-পাতাল ফারাক, তাই না? তা হলে, যুক্তি দিয়ে বিচার করলে আর মেয়েদের পুজো করায় কেন বাধা থাকবে?’’
তবে পুজো করছেন মানেই কি উৎসবে আছেন নন্দিনী? এর আগে টানা আন্দোলনের সঙ্গেই যুক্ত থেকেছেন তিনি। মিছিলে হেঁটেছেন, প্রতিবাধ মঞ্চে থেকেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বাড়িতে পুজো করছি বলে এই ক’টা দিন যেতে পারছি না সেখানে। কিন্তু মন তো পড়েই আছে। আন্দোলন তো জরুরি। আন্দোলনে আমরা এখনও আছি। কিন্তু শক্তির আরাধনা তো করতে হবে। শক্তির আরাধনা করলে দুষ্টের দমন তো হওয়ার কথা।’’
নন্দিনীর বার্তা, শক্তি হল সত্য। সত্যের জয় হবে। মিথ্যাকে দূরে ঠেলে রাখতে চান তিনি। আর বড় কন্যা অনন্যা বলেন, ‘‘আমার মা বরাবরই সমাজ সংশোধনে মন রেখেছেন। এখনও রাখেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy