হবু মায়েদের জ্বর হলে সতর্ক থাকতেই হবে। ফাইল চিত্র।
ঘোর বর্ষায় সর্দি, জ্বর, গলা ব্যথা, কাশি এখন ঘরে ঘরে। কিন্তু ২০২০ সালে উহানের নোভেল করোনাভাইরাস সব হিসাব বদলে দিয়েছে। বাড়িতে কারও জ্বর হলে সকলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বিশেষ করে এখন হবু মায়েদের জ্বর হলে সতর্ক থাকতেই হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছাড়াও এই সময়টায় ডেঙ্গির ঝুঁকি বেড়েছে। যদিও কোভিড-১৯-এর দাপটে এ বারে ডেঙ্গি কিছুটা ব্যাকফুটে। তা-ও এই ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত, বললেন স্ত্রীরোগের চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়। এডিস ইজিপ্টাই মশার কামড়ে ডেঙ্গির ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে। এর কিছু দিনের মধ্যেই উপসর্গ হিসেবে জ্বর হয়। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে কোভিড-১৯-এর ভয়ে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত চিকিৎসককে জানানো দরকার, বললেন অভিনিবেশবাবু। তিনি বলেন, “হবু মায়েদের ডেঙ্গি হলে ভ্রূণ ও মায়ের সুস্থতার জন্য দ্রুত কিছু ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। যদিও ডেঙ্গির উপসর্গ হিসেবে মাথা ও হাত-পা ব্যথা করে। কিন্তু ভুলেও কোনও রকম ব্যথা বা অন্য কোনও ওষুধ নিজের থেকে খাওয়া ঠিক নয়।”
জ্বর হলেই ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি খুব বেড়ে যায়। তাই প্রচুর জল ও জলীয় খবার খাওয়া উচিত এই সময়। ওআরএস যুক্ত জল ছাড়াও বারে বারে অল্প অল্প করে সাধারণ জলপান করার সঙ্গে সঙ্গে সুপ, জুস খেলে ভাল। চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল ছাড়া আর কোনও ওষুধ খাওয়া চলবে না। প্রয়োজন বুঝে হবু মায়েদের ব্লাড থিনার দেওয়া হয়। তবে ডেঙ্গি জ্বর হলে ব্লাড থিনার খাওয়া বন্ধ করতে হবে। কেন না, ডেঙ্গি হলে রক্তে অনুচক্রিকার পরিমাণ কমে গিয়ে রক্তপাতের ঝুঁকি থাকে। গর্ভবতীকে প্যারাসিটামল দেওয়ার পরেও জ্বর না কমলে জ্বর হওয়ার তৃতীয় দিনে ডেঙ্গির রক্ত পরীক্ষা করা আবশ্যিক। অনেক সময় ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জ্বর কমে গেলেও দুর্বলতা বাড়তে থাকে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে যেতে পারে বলে জানালেন অভিনিবেশবাবু। তাই তাঁর পরামর্শ, “জ্বর হলে কোভিডের ভয়ে নিজে থেকে ওষুধ খেতে যাবেন না, বরং টেলিফোনে দ্রুত সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। দরকার হলে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞর নির্দেশে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে। তবে যদি জ্বরের সঙ্গে বমি হয়, কোনও ঝুঁকি না নিয়ে হবু মাকে দ্রুত যেন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।”
এমনিতেই জ্বরের জন্য শরীরে জল ও ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তার সঙ্গে বমি সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে ডিহাইড্রেশন হয়ে গিয়ে মা ও গর্ভস্থ শিশু-- দু’জনেরই জীবন বিপন্ন হতে পারে। ডিহাইড্রেশন আটকানোর একমাত্র উপায় স্যালাইন দেওয়া। তাই বাড়িতে রেখে চিকিৎসার ঝুঁকি নেওয়া অনুচিত, মত চিকিৎসকদের। হবু মায়েদের ডেঙ্গি গর্ভাবস্থার শুরুতে বা মাঝামাঝি সময়ে, এমনকি প্রসবের ঠিক আগেও হতে পারে। সব ক'টি ক্ষেত্রেই সন্তান ও মাকে সুস্থ রাখতে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করলে ভাল হয়। তবে এখনকার কোভিড পরিস্থিতিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, তা চিকিৎসকের উপর ছেড়ে দেওয়াই ভাল বলে অভিনিবেশবাবুর অভিমত। গর্ভাবস্থার শেষের দিকে হবু মায়ের জ্বর হলে প্রসব বেদনা শুরু হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ওষুধ দিয়ে প্রসব যন্ত্রণা পিছিয়ে দিতে হয়। না হলে মা ও শিশু দু’জনেরই সমস্যা হতে পারে। ডেঙ্গি জ্বরের এক অন্যতম সমস্যা রক্তে অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট স্বভাবিকের তুলনায় কমে যাওয়া। এর ফলে রক্তপাতের ঝুঁকি থাকে। আবার প্রসবের সময় স্বাভাবিক নিয়মে আধ থেকে এক লিটারের কাছাকাছি রক্তপাত হওয়া স্বাভাবিক। প্লেটলেট কমে গেলে অনিয়ন্ত্রিত রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আর এই কারণেই বিশেষ ওষুধের সাহায্যে মায়ের প্রসব যন্ত্রণা পিছিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি গর্ভস্থ শিশু ও মাকে অনবরত মনিটরিং করা হয়। ডেঙ্গি আক্রান্তদের অনিয়ন্ত্রিত রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে বলে সিজার করার ঝুঁকি না নেওয়াই ভাল। অনেক সময় মায়ের ডেঙ্গি থাকার সময় শিশুর জন্ম হলে বাচ্চার জন্মগত ডেঙ্গির আশঙ্কা থাকে। এ ক্ষেত্রে বাচ্চার জীবন বাঁচানো খুব মুশকিল। তাই হবু মায়ের লেবার পেন পিছিয়ে দিয়ে ডেঙ্গি সেরে যাওয়ার পর প্রসব করানো হয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল ছাড়া আর কোনও ওষুধ খাওয়া চলবে না।
মশাবাহিত এই রোগ প্রতিরোধ করা খুব কঠিন কাজ নয়। বাড়ি ও আশপাশের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে খেয়াল রাখুন। মশা বাড়তে দেবেন না।
আরও পড়ুন: আদৌ কি দ্বিতীয় বার করোনা সংক্রমণ হতে পারে? কী বলছেন চিকিৎসকরা?
আরও পড়ুন: অশ্বগন্ধা, আমলকি, কালমেঘ, গুলঞ্চ, কোন ভেষজ উপাদান কখন খাবেন, কেন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy