Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
coronavirus

করোনা আবহে অন্তঃসত্ত্বাদের এই সব বিষয়ে খেয়াল রাখতেই হবে

গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে সংক্রমণ হলেও গর্ভপাতের আশঙ্কা খুব কিছু নেই। তবে মানতে হবে সমস্ত নিয়ম।

করোনা আবহে গর্ভাবস্থায় সাবধান থাকতে হবে, তবে আতঙ্ক নয়। ছবি: পিটিআই

করোনা আবহে গর্ভাবস্থায় সাবধান থাকতে হবে, তবে আতঙ্ক নয়। ছবি: পিটিআই

সুজাতা মুখোপাধ্যায
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১১:৪৭
Share: Save:

করোনার প্রকোপে নিয়মিত চেক-আপ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বাধা পড়েছে অন্তঃসত্ত্বাদের। দুশ্চিন্তা বাড়ছে। হঠাৎ সমস্যা হলে কোথায় যাবেন, হাসপাতাল ভর্তি নেবে কি না বা নিলেও সেখান থেকে যদি সংক্রমণ হয়! তার উপর সুযোগ বুঝে বড় হাসপাতাল, নার্সিং হোম টাকা বাড়িয়েছে দ্বিগুণের বেশি। পিপিই, করোনার পরীক্ষা ইত্যাদি যোগ হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে রোজই করোনার খবর।

কোন পথে মিলবে সমাধান

‘‘অত চিন্তার কিন্তু কিছু নেই।’’ জানালেন স্ত্রীরোগ ও বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ সুদীপ বসু। ‘‘চিকিৎসকরা অনেকেই ভিডিয়ো কলে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। রক্তচাপ, সুগার, ওজন দেখতে বলা হচ্ছে বাড়িতেই। রুটিনমাফিক সোনোগ্রাফি না হলেও প্রয়োজন হলে করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। হচ্ছে রক্তপরীক্ষাও। মূল কথা হল, সামনাসামনি বসে কথা বলতে না পারলেও ভাবী মায়েদের অসুবিধে হচ্ছে না কোনও। বরং চেম্বারে আসতে হচ্ছে না বলে সংক্রমণের আশঙ্কা কমছে। কারণ চেম্বারে একজন অন্তঃসত্ত্বার সঙ্গে একজন কি দু-জন বাড়ির লোক আসেন। ফলে ঘড়ি ধরে সময় দিলেও সময় ৯-১০ জনের ভিড় লেগে যায়। তার উপর কর্মচারী, ডাক্তার, নার্স মিলে আরও ৪-৫ জন। ফলে যে কোনও সময় চেম্বারে ১২-১৪ জনের ভিড়। এরকম পরিস্থিতিতে সবার সঙ্গে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা যায় না অনেক সময়ই। কাজেই আপাতত ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে রোগী দেখাই নিরাপদ।’’

কিন্তু যাঁর স্মার্ট ফোন নেই? গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষ? স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ শঙ্করনাথ মিত্র জানিয়েছেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে পৌঁছে গেলে আর চিন্তা নেই। সেখানে সব পরিষেবা আছে। প্রত্যন্ত গ্রামে আশা সেন্টারগুলি ভালো কাজ করছে। ভাবী মায়েদের পুষ্টির দিকে খেয়াল রাখা, স্বাস্থ্যবিধি বোঝানো, রক্তচাপ-সুগার-হিমোগ্লোবিন মাপা, টিটেনাস দেওয়া, সব করছেন তাঁরা। খুব প্রয়োজন হলে কাছাকাছি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠাচ্ছেন। সেখানে আল্ট্রা সোনোগ্রাফি হচ্ছে। ভরতি হলে কোভিড পরীক্ষাও করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কাজেই অত টেনশন করার কিছু নেই।’’

আরও পড়ুন:বিখ্যাত মানুষের আত্মহত্যার খবরে কি মানুষ আরও বিপন্ন বোধ করেন? কী বলছেন মনোবিদরা​

ভাবী মায়ের কোভিড হলে

‘‘গর্ভাবস্থায় কোভিডের আশঙ্কা খুব একটা বাড়ে না। তা-ও যদি রোগ হয়, হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতে হবে। প্রসব হবে সেখানে।’’ জানালেন ডা. মিত্র।

ডা. বসু জানিয়েছেন, ‘‘বিভিন্ন গবেষণায় যতটুকু জানা গেছে, তার ভিত্তিতে বলা যায়, অন্তঃসত্ত্বাদের রোগ হলেও তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মৃদু বা মাঝারি পর্যায়ে থাকে। ভাবী সন্তানেরও কোনও ক্ষতি হয় না। কাজেই চিন্তার কিছু নেই।’’

আরও পড়ুন:‘হার্ড ইমিউনিটি’ গড়ে উঠতে আর কত দিন, ভ্যাকসিনই বা কবে?​

গবেষণার ফল

১১৮ জন কোভিড আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বা উপর সমীক্ষা চালিয়ে উহানের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এঁদের মধ্যে ৯২ শতাংশের রোগ ছিল মৃদু। তার মধ্যে ২১ শতাংশের প্রসব হয়েছিল সময়ের আগে। আমেরিকাতে হওয়া এক গবেষণা থেকে অবশ্য জানা গেছে ভাবী মায়ের কোভিড থাকলে প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে সময়ের আগে প্রসব হতে পারে।

গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে সংক্রমণ হলেও গর্ভপাতের আশঙ্কা খুব কিছু নেই। এ পর্যন্ত সে বিপদের খবর পাওয়া গেছে মাত্র একটি। সুইজারল্যান্ডের লুসেন ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের তরফে ডা. ডেভিড বড জানিয়েছেন, তাঁর এক রোগীর ১৯ সপ্তাহে গর্ভপাত হয়। সম্ভবত মায়ের প্ল্যাসেন্টা থেকে রোগ ছড়িয়েছিল ভ্রূণে। কারণ প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত প্ল্যাসেন্টাতে ভাইরাস জীবিত ছিল। তবে আরও অনেক গবেষণা না করে এ ব্যাপারে কোনও সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যাবে না।

ইরানের ৭টি বড় হাসপাতালে ভর্তি অন্তঃসত্ত্বা কোভিড রোগীদের উপর সমীক্ষা চালিয়ে আমেরিকান জার্নাল অফ অবস্ট্রেটিক্স ও গায়নোকলজিতে প্রকাশিত প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা ৭ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন। চিনে অন্তঃসত্ত্বা কোভিড রোগীদের মধ্যে মারা গিয়েছেন মাত্র একজন। কাজেই গর্ভাবস্থায় কোভিড হলে মৃত্যুহার বাড়ে বলেও মনে হচ্ছে না এখনও।

কোভিড রোগীর প্রসব

‘‘অনেকের ধারণা, স্বাভাবিক পথে প্রসব করালে সন্তানে রোগ ছড়াতে পারে। কিন্তু ধারণাটা ভুল,’’ জানালেন সুদীপবাবু। তাঁর মতে, ‘‘যাঁর যেভাবে প্রসবের প্রয়োজন, তাঁকে সেভাবেই করাতে হবে।’’ ডা. মিত্র জানিয়েছেন, ‘‘সিজারে বরং বিপদ বেশি, তবে সেটা মা বা সন্তানের নয়, চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের। কাজেই নির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনে সিজার করতে হয়।’’

কোভিড রোগীর সিজারিয়ান সেকশনের নিয়ম

• চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মী সবাইকে পিপিই পরে নিতে হবে, সেটা অবশ্য স্বাভাবিক পথে প্রসব করালেও পরতে হবে।

• অজ্ঞান করলে শ্বাসনালিতে যে টিউব পরাতে হয়, সেখান থেকে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি। কাজেই শিরদাঁড়ায় ইঞ্জেকশন দিয়ে অবশ করে অপারেশন করতে হয়।

• পেট কাটার সময় সচরাচর ডায়াথার্মি নামে এক বিদ্যুতচালিত কাটারের সাহায্য নেওয়া হয়, তাতে যে তরলের সূক্ষ্ম কণা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে তা থেকে একটু হলেও সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। কাজেই ডায়াথার্মি যথাসম্ভব কম ব্যবহার করতে বলা হয়।

মা থেকে সন্তানে কি রোগ ছড়ায়

‘‘প্ল্যাসেন্টা দিয়ে রোগ ছড়ায় কি না তার নিশ্চিত প্রমাণ এখনও নেই। দু-একটা স্টাডিতে দেখা গেছে, ছড়িয়েছে। আবার ছড়ায়নি এমন নজিরও আছে’’ জানালেন ডা. মিত্র।

‘‘কোভিড-মায়ের সন্তান সংক্রামিত হচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধি ঠিকভাবে না-মানার ফলে। হাত ধুয়ে মাস্ক পরে বাচ্চাকে স্তন্যপান করানোর কথা, সেখানে কোনও ভুলচুক হলে সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের নির্দেশমতো মায়ের দুধ বোতলে ভরে খাওয়াতে হবে। সব নিয়ম মেনে নার্সের সাহায্যে মা এই কাজ করবেন, তা খাওয়াবেন অন্য কেউ। বুকের দুধ দিয়ে রোগ ছড়ায় না, চিন্তা নেই।’’ জানালেন সুদীপবাবু।

বাড়িতে কারও হাঁচি-কাশি হলে অন্তঃসত্ত্বাকে সেই ব্যক্তির থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। মানতে হবে নিয়ম।

সুদীপবাবু বলেন, ‘‘আমাদের দেশে মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা কম। কাজেই মায়ের কোভিড ধরা পড়লে সন্তানকে আলাদা করে নার্সারিতে রাখা হয়। মা-কে পাঠানো হয় আইসোলেশনে। তবে কোভিডের ভয়ে এত জড়সড় থাকার কোনও প্রয়োজন নেই। গর্ভাবস্থায় সামান্য কয়েকটি নিয়ম মেনে চললেই কিন্তু রোগের আশঙ্কা অনেক কম থাকে।’’

আরও পড়ুন: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেই ভুল করতে বাধ্য করে, এই অসুখে ভুগেছিলেন মাইকেল জ্যাকসনও

ভাবী মায়ের সাবধানতা

• ঘন ঘন হাত ধোওয়া। বাড়িতে লোকজন থাকলে ঘণ্টায় ঘণ্টায় ধোওয়াই ভালো।

• বাড়িতে কারও হাঁচি-কাশি-জ্বর হলে তাঁর থেকে কম করে ৬ ফুট দূরে থাকা। সম্ভব হলে মাস্ক পরে। বাইরের কারও সঙ্গে মেলামেশা না-করা।

• নিতান্ত প্রয়োজন না হলে ডাক্তারের চেম্বারেও যাওয়ার দরকার নেই। গেলে যথাযথ সাবধানতা নিয়ে যাওয়া ও ফিরে এসে জামা-জুতো-ব্যাগ থেকে শুরু করে সব কিছু ধুয়ে স্নান করে নেওয়া।

• ঠিকঠাক খাওয়াদাওয়া করা, একটু হাঁটাহাঁটি করা ও ভালো করে ঘুম।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

অন্য বিষয়গুলি:

Corona COVID-19 coronavirus Pregnancy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy