Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
stent operation

ঝক্কি কম স্টেন্ট বসানোয়

হার্টের সমস্যায় অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করে স্টেন্ট বসানো হবে, নাকি বাইপাস সার্জারি করা হবে, তা নির্ভর করে বেশ কিছু বিষয়ের উপরে। এ ব্যাপারে রইল চিকিৎসকের পরামর্শ

ঊর্মি নাথ 
শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:২২
Share: Save:

বয়স হলে হার্টের সমস্যা বা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে সচেতন মানুষ চল্লিশ পেরোলেই খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় নিয়ন্ত্রণ আনেন। বিশেষ করে যাঁদের পরিবারে হার্টের সমস্যার ইতিহাস আছে। কিন্তু এতেই বিপদ এড়িয়ে যাওয়া যায় না। এখন আর হার্টের সমস্যা বয়স বাড়ার অপেক্ষা করে না। তিরিশ-চল্লিশের কোঠায় হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর খবর প্রায়শই শোনা যাচ্ছে। নিঃশব্দে শরীরের ভিতরে যে ক্ষয় হচ্ছে, আর্টারি ব্লক হচ্ছে, তা টের পাওয়া যাচ্ছে না। তবে হার্ট কাবু হওয়ার আগে একেবারেই যে জানান দেয় না, তা কিন্তু নয়। অধিকাংশ সময় সেই সঙ্কেত ধরতে পারা যায় না। আবার কখনও বুঝতে পেরেও ঘরোয়া চিকিৎসা করে ক্ষান্ত থাকি আমরা। তাতে সাময়িক ভাবে স্বস্তি পাওয়া গেলেও ‘গোকুলে’ বাড়তে থাকে বিপদ।

কী করে বুঝবেন হার্টে সমস্যা শুরু হয়েছে

প্রায়ই কি বুকের মাঝখানে ও বাঁ দিকে ব্যথা হয়, যে ব্যথা বাঁ হাত, গলা, চোয়াল অবধি ছড়িয়ে যায়? অনেক সময় পেটের উপরের অংশে ব্যথা হয়? বুকের ব্যথাকে গ্যাস-অম্বলের ব্যথা মনে করে অবজ্ঞা করেন অনেকেই। এ ছাড়া শরীরে হঠাৎ করে অস্বস্তি, অতিরিক্ত ঘাম, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত সচেতন হতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আগে এই সঙ্কেতগুলোর মাধ্যমে শরীর আপনাকে জানান দেবে। তখন দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। তিনি ইসিজি, ইকোকার্ডিয়োগ্রাফি, ট্রেডমিল টেস্ট, অ্যাঞ্জিয়োগ্রাফি ইত্যাদি পরীক্ষা করে দেখেন। তার পরে হার্ট ব্লকেজ কতটা আছে, তা দেখে সিদ্ধান্ত নেন ওষুধের মাধ্যমে নাকি বাইপাস সার্জারি করে বা অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করে স্টেন্ট বসিয়ে রোগীকে সুস্থ করে তোলা হবে। ওবেসিটি, ডায়াবিটিস, হাই কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ, কম ঘুম, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, শারীরচর্চার অভাব, অতিরিক্ত মদ্যপান, ধূমপান এবং অনিয়মিত ও অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। তাই এই ধরনের অসুখ বা অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস থাকলে তিরিশের পর থেকে বছরে অন্তত একবার চেকআপ করানো প্রয়োজন।

স্টেন্ট নাকি বাইপাস সার্জারি

হার্টের সমস্যায় বা হার্ট অ্যাটাকের পরে অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করে স্টেন্ট বসানো হবে, নাকি বাইপাস সার্জারি করা হবে, তা নির্ভর করে কতগুলো আর্টারির কত শতাংশ ব্লক হয়েছে এবং রোগীর বয়স ও তাঁর শারীরিক অবস্থার উপর। ‘‘হার্টের অসুখে এখন ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রেই অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করে স্টেন্ট বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কুড়ি বছর আগের চেয়ে এখন বাইপাস সার্জারি অনেক কমে গিয়েছে। কারণ, স্টেন্ট বসানোর রেজ়াল্ট বেশ ভাল, অ্যাজ় গুড অ্যাজ় বাইপাস সার্জারি। বাইপাস করতে যে পরিমাণ খরচ ও সময় লাগে, তা স্টেন্ট বসানোয় লাগে না। এ ছাড়া বাইপাস সার্জারির পরে পোস্ট অপারেটিভ পিরিয়ডে কাটা জায়গায় ব্যথা হওয়া, ইচিং ইত্যাদি বেশ কিছু সমস্যা হতে পারে। মোট কথা, বাইপাসের চেয়ে স্টেন্ট বসালে ঝুঁকি অনেক কম, তা ছাড়া একবার স্টেন্ট বসানোর কয়েক বছর পরে সমস্যা হলে আবার অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করে স্টেন্ট বসানো যায়। কিন্তু বাইপাস সার্জারি দ্বিতীয় বার করা অনেকটাই ঝুঁকির। তবে আর্টারির বিভিন্ন জায়গায় একাধিক ব্লক থাকলে এবং ব্লকগুলি লম্বা লম্বা হলে সে ক্ষেত্রে বাইপাস করতেই হয়,’’ বললেন কার্ডিয়োলজিস্ট ডা. সুনীলবরণ রায়। মনে রাখা দরকার, একবার স্টেন্ট বসানো মানেই চিরতরে বিপন্মুক্ত হওয়া নয়। স্টেন্ট বসানোর পরে প্রয়োজন মতো ওষুধ খাওয়া ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা মেনে চলা জরুরি। অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করে স্টেন্ট বসানোয় খরচ যেমন কম, তেমনই দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফেরা যায়। তা ছাড়া দ্বিতীয় বার সমস্যা হলে সমাধানের রাস্তাও কিন্তু খোলা থাকে।

স্টেন্ট আসলে কী?

হার্টের করোনারি আর্টারিতে চর্বি, ক্যালশিয়াম, রক্তকণিকা ইত্যাদি জমে ব্লকেজ তৈরি করে। এর ফলে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। যেখান থেকে শুরু হয় হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা। এই সমস্যায় অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টির মাধ্যমে বেলুন ঢুকিয়ে সরু আর্টারির লুমেনটাকে বড় করে রাস্তা তৈরি করে নেওয়া হয়। বেলুন বার করে নিলে আর্টারি কুঁচকে যায়। তার জন্যই স্টেন্ট বসিয়ে দেওয়া হয়, যাতে আর্টারি স্বাভাবিক থাকে এবং তার মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে রক্ত প্রবাহিত হয়। ‘‘স্টেন্ট বসানোর সবচেয়ে বড় সুবিধে এর জন্য কোনও অপারেশন করতে হয় না। রোগীর হাতে বা কুঁচকির কাছে আর্টারিতে সুচ ঢুকিয়ে তার মধ্য দিয়ে ২ মিলিমিটার ব্যাসার্ধের ক্যানুলা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এই ক্যানুলার মধ্য দিয়ে সরু সরু নল নিয়ে যাওয়া হয় হার্টের পেশির রক্তবাহী নালিকা পর্যন্ত। এই নলের মধ্য দিয়ে বেলুন পাঠিয়ে ব্লকেজ পরিষ্কার করে, তার পর স্টেন্ট পাঠানো হয়। স্টেন্ট একটি স্লটেড, মেডিকেটেড, মেটালিক সূক্ষ্ম জালিকাটা টিউব, যেটি একটি বেলুনের উপরে লাগানো থাকে। এই বেলুন কিন্তু আলাদা। যা দিয়ে অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করা হয়, সেটি নয়। একে বলে স্টেন্ট বেলুন। উপযুক্ত জায়গায় নিয়ে গিয়ে বেলুন ফোলালেই তার উপরে থাকা স্টেন্ট আর্টারির দেওয়ালে আটকে যায়। তার পর আবার প্রেশার কমিয়ে খালি বেলুন বার করে আনা হয়,’’ বললেন ডা. রায়। স্টেন্ট বসানোর আগে যদি দেখা যায় অতিরিক্ত ক্যালশিয়ামের জন্য আর্টারিতে ব্লকেজ হয়েছে, তা হলে শক্ত ক্যালশিয়ামের দেওয়াল কাটার জন্য ক্যানুলার মধ্য দিয়ে হাই স্পিড রোটেশনাল মেশিন প্রবেশ করিয়ে ক্যালশিয়াম কেটে পরিষ্কার করে ফেলা হয়। ঠিক যে ভাবে হিরে দিয়ে কাচ কাটা হয়। এই পদ্ধতিকে বলা হয় অ্যাথেরেক্টমি। ডা. রায় জানালেন, ১৫-২০ জনের মধ্যে হয়তো একজনের এখন অ্যাথেরেক্টমির প্রয়োজন হয়। এর বিকল্প হিসেবে হাই-প্রেশার বেলুন দিয়ে ব্লক পরিষ্কার করা যায়। অ্যাথেরেক্টমির লং টার্ম রেজ়াল্ট অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টির মতোই।

স্টেন্ট বসানোর পরে...

স্টেন্ট বসানোর পরে মাত্র দু’-তিনদিনের মধ্যেই রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে যান। কার্যক্ষমতাও ফিরে আসে দ্রুত। তবে স্টেন্ট বসানোর পরে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুয়ায়ী বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। তার পরে ফিরে যাওয়া যায় স্বাভাবিক জীবনে। নিয়মিত ওষুধ খাওয়া, শারীরচর্চা, চিকিৎসকের নির্দেশ মতো ডায়েট অনুসরণ ও নিয়মিত মেডিকাল চেকআপ করালে দীর্ঘ দিন সুস্থ জীবনযাপন করা যায়। ‘‘যে কারণগুলির জন্য স্টেন্ট বসাতে হয়েছে, সেই সব সমস্যা যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে,’’ বললেন ডা. রায়। অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টির পরে খেলোয়াড়দের মাঠে পুরোদস্তুর ফেরার আগে বা খুব বেশি উচ্চতায় ট্রেকিংয়ে যাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

stent operation good health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy