Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Eye Care

Retina: রেটিনার ক্ষয়ে অবহেলা নয়

বয়স হলেই যে সকলেই রেটিনাল ডিজেনারেশনের সমস্যায় জজর্রিত হবেন তা নয়, তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

ঊর্মি নাথ 
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২২ ০৭:২১
Share: Save:

বার্ধক্যের সঙ্গে-সঙ্গেই সমস্যা বাড়তে থাকে। তবে কম বয়সেও অনেকে এ রোগের শিকার হন। জেনে নিন

একটা বয়সের পর থেকে শরীরের সব অঙ্গই ধীরে-ধীরে দুর্বল হয়। যত বয়স বাড়ে তত ক্ষয় বাড়ে। যেমন দাঁত পড়ে যায়, ত্বক কুঁচকে যায়, চুল পাতলা হতে থাকে ইত্যাদি। ঠিক একই ভাবে দুর্বল হয় দৃষ্টিশক্তি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের বিভিন্ন সমস্যা বাড়তে থাকে যা অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় স্বচ্ছদৃষ্টিতে। এমনই একটি সমস্যা রেটিনাল ডিজেনারেশন। এই সমস্যায় ভুগছেন পৃথিবীর বহু মানুষ। এ ব্যাপারে পিছিয়ে নেই আমাদের দেশ তথা রাজ্যের মানুষও। অনেকেরই ধারণা রেটিনাল ডিজেনারেশন জন্ম দেয় অন্ধত্বের! ‘‘ডিজেনারেশন মানে ক্ষয়। এখন মানুষের আয়ু বেড়েছে। তাই শরীরের ক্ষয়জনিত সমস্যাও বেশি। যত বেশি বাঁচবে তত ক্ষয় হবে। রেটিনাল ডিজেনারেশন সেরকমই একটা সমস্যা। যার সম্ভাবনা বেড়ে যায় বার্ধক্যের সঙ্গে সঙ্গে। তবে এই ক্ষয় হলেই যে অন্ধ হয়ে যায় তা কিন্তু নয়। ঠিক সময়ে ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকটা সারিয়ে তোলা যায়,’’ বললেন চক্ষুবিশেষজ্ঞ ডা. শান্তনু মণ্ডল।

রেটিনাল ডিজেনারেশন দু’রকমের, এক, এজ রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজেনারেশন (এএমডি) দুই, পেরিফেরাল রেটিনাল ডিজেনারেশন (পিআরডি)।এই মুহূর্তে বিশ্বে পেরিফেরাল রেটিনাল ডিজেনারেশনের চেয়ে এজ রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজেনারেশন সমস্যার সংখ্যা বেশি।এজ রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজেনারেশন: রেটিনার একদম কেন্দ্রে ছোট বিন্দু ম্যাকুলা, যে-কোনও বস্তুকে সোজাসুজি ও স্পষ্ট দেখতে সাহায্য করে। ম্যাকুলা ক্ষতিগ্রস্ত হলে দৃষ্টি অস্বচ্ছ হয়। ম্যাকুলার যে সমস্যা হচ্ছে, তা বোঝা যায় বেশ কয়েকটি লক্ষণ দেখে। বই-কাগজ পড়তে গেলে বা কোনও কিছু দেখার সময়ে গোল কালো ছায়া বা কালো পর্দা এসে পড়ে চোখের সামনে। সোজা লাইন এঁকেবেঁকে যায়, টিভির পর্দার ছবি রংহীন মনে হয়। দিনে-দিনে দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে, এমনকী হঠাৎ করে দৃষ্টিশক্তি চলে যেতে পারে। ‘‘এই সমস্যাগুলো শুরু হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিন্তু মুশকিল হল, অধিকাংশ রোগীই প্রথমে সমস্যাটা ধরতে পারেন না! সাধারণত দুটো চোখে একসঙ্গে সমস্যা শুরু হয় না। তাই এক চোখে ঠিক দেখেন বলে অন্য চোখটি যে দুর্বল হচ্ছে তা টের পান না। এই জন্য পঞ্চাশের পর থেকে বছরে অন্তত একবার চোখের চেকআপ করান। সমস্যা না থাকলেও মাঝে-মাঝে নিজেই একটি চোখ বন্ধ করে দেখে নিন অন্য চোখটি দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন কিনা,’’ পরামর্শ দিলেন ডা. মণ্ডল।

এই সমস্যার কারণ

ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের অন্যতম প্রধান কারণ ধূমপান। অতিরিক্ত সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মির জন্যও রেটিনায় এই ধরনের ক্ষতি হয়। এটা তাঁদের হয়, যাঁরা অনেকটা সময়ে সরাসরি রোদের মধ্যে খালি চোখে কাজ করেন। এ ছাড়া জিনবাহিত সমস্যা তো বটেই!

এই সমস্যা সাধারণত শুরু হয় পঞ্চাশের পর থেকে। এরও দুটো ভাগ আছে। ড্রাই টাইপ, ওয়েট টাইপ অর্থাৎ শুকনো ও আর্দ্র। রেটিনার দশটি স্তর। দশ নম্বর স্তরের তলায় হলুদ রঙের ডিপোজ়িট তৈরি হয়, যাকে ড্রুসেন বলে। সমস্যা তৈরি হয় ড্রুসেনের মাত্রা বেড়ে গেলে। ম্যাকুলার মধ্যে যে লাইট সেনসেটিভ কোষগুলি থাকে, তা পাতলা হতে থাকে। বিশেষ করে বই-কাগজ পড়তে গেলে বেশ সমস্যা হয়। এই অবস্থায় চিকিৎসা শুরু না হলে দৃষ্টিশক্তি কমে যাবে। ওয়েট টাইপের ক্ষেত্রে ম্যাকুলার তলায় নতুন শিরা তৈরি হতে শুরু করে এবং তা থেকে রক্তক্ষরণ হয়। যার জন্য রেটিনার কেন্দ্রে কালো অস্বচ্ছতা তৈরি হয়, সরলরেখা আঁকাবাঁকা দেখায়। যদিও দেখা গিয়েছে আর্দ্রর চেয়ে শুষ্ক এএমডি-র সংখ্যাই বেশি। ‘‘ড্রাই এএমডি শনাক্ত করা গেলে বেশি করে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টযুক্ত খাবার যেমন শাকপাতা, বিভিন্ন ফল, লিকার চা বা কফি ইত্যাদি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি কিছু ওষুধও দেওয়া হয়। কিন্তু ওষুধের চেয়ে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টযুক্ত ডায়েটই বেশি কার্যকর, তাই খাওয়াদাওয়ার উপরে জোর দেওয়া হয়। ওয়েট টাইপের ক্ষেত্রে অবস্থা বুঝে ইনজেকশন দেওয়া হয়,’’ বললেন ডা. মণ্ডল।

পেরিফেরাল রেটিনাল ডিজেনারেশন

কমবয়সিদের হয় পেরিফেরাল রেটিনাল ডিজেনারেশন। ঠিক সময়ে রেটিনার চেকআপ হয় না বলে ধরা পড়ে না। সমস্যা বাড়তে বাড়তে বেশি বয়সে গিয়ে ধরা পড়ে। দেখা গিয়েছে, যাঁদের হয়, তাঁদের মধ্যে ৪০ শতাংশের মাইনাস পাওয়ার। আবার পাওয়ার নেই, কিন্তু পেরিফেরাল রেটিনাল ডিজেনারেশন হয়েছে এরকম উদাহরণ বিস্তর। এই সমস্যা কেন হয় তা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। তবে এই ডিজিটালাইজেশনের যুগে শিশু থেকে বয়স্ক সকলের মধ্যেই মোবাইল, কম্পিউটার ব্যবহার অনেক বেড়ে গিয়েছে। বিশেষ করে লকডাউনের সময় থেকে। ফলে এই ডিজেনারেশন ত্বরান্বিত হচ্ছে। পেরিফেরালের ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা লেজ়ার করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

বয়স হলেই যে সকলেই রেটিনাল ডিজেনারেশনের সমস্যায় জজর্রিত হবেন তা নয়, তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই রোজকার ডায়েটে অ্যান্টি অক্সিড্যান্টযুক্ত খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। রোদচশমা ব্যবহার করলে ভাল এবং চোখে বেশি কম যেমনই পাওয়ার থাকুক না কেন চশমা সবসময় ব্যবহার করতেই হবে। ছোট-ছোট এই নিয়মগুলো মেনে চললে চোখের সমস্যা অনেকটাই এড়িয়ে চলা যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Eye Care Eye Care Tips
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy