Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৪
Durga Puja 2024

আনন্দের সঙ্গে থাকুক সতর্কতা

পুজোর ক’দিনের আনন্দ যেন নিরানন্দের কারণ না হয়ে ওঠে। যে সব সমস্যা হতে পারে, তা নিয়ে আগেই সতর্ক হোন।

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কোয়েনা দাশগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৪৯
Share: Save:

দেবীপক্ষ শুরু হয়ে গিয়েছে। ভিড়ে ঠাসা গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট, হাতিবাগানে চলছে শেষ মুহূর্তের শপিং। ভিড় জমছে কিছু প্যান্ডেলেও। পুজো মানে যেমন প্যান্ডেল হপিং, তেমনই দেদার খাওয়াদাওয়াও। ফলস্বরূপ ডায়রিয়া, পেটের সমস্যা ইত্যাদি হওয়া স্বাভাবিক। সঙ্গে শরতের হিম মাথায় নিয়ে ঠাকুর দেখতে গেলে হতে পারে সর্দিকাশি, জ্বরও। রাত জেগে ঠাকুর দেখা, ঘড়ির কাঁটার তোয়াক্কা না করে অনিয়মে খাওয়াদাওয়া, বেহিসেবি আনন্দ... ইত্যাদি হয়ে উঠতে পারে নিরানন্দের কারণও। তাই মেনে চলুন কিছু নিয়ম।

খাবারে নজরদারি দরকার

ফিশ ফ্রাইয়ের পরেই কফি, তার পরেই বিরিয়ানি, পুজোর প্রসাদের কাটা ফল, মাঝরাতে রাস্তার ধারের ফুচকা... পুজোর ক’দিন বেহিসেবি খাওয়াদাওয়া থেকে হতে পারে পেটের সমস্যা, গ্যাস, অম্বল। তা থেকে ডায়রিয়া, বুকে ব্যথা, বমি ভাব, পেটে ব্যথার সম্ভাবনা থাকে। কখনও কখনও তা গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। ডা. অরুণাংশু তালুকদার বলছেন, “পুজোর কয়েকটা দিন ভাজাভুজি, তেলমশলা দেওয়া খাবার খাওয়া হবেই। তবে পরিমাণের দিকে নজর রাখুন। অসময়ে অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলুন।”

  • ডা. তালুকদার বলছেন, “অনেকেই পুজোর ক’দিন উপোস করেন। ফলে নিয়ম মেনে ওষুধ খান না। সুস্থ থাকতে হলে তা একেবারেই করা চলবে না।” উপোসের পরেই অবেলায় লুচি, মিষ্টি কিংবা ভোগের খিচুড়ি চলবে না। বরং ডাবের জল, ড্রাই ফ্রুটস ইত্যাদি খান।
  • অপরিশোধিত জলে তৈরি খাবার, শরবত, রাস্তার খোলা খাবার, কাটা ফল ইত্যাদি থেকে সহজেই সংক্রমণ হতে পারে। তাই রাস্তার খাবার বুঝেশুনে খাবেন। সঙ্গে রাখুন জলের বোতল। প্রয়োজনে প্যাকেজড জল কিনে খান।

চিকিৎসকদের কথায়, পেট খারাপে অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়াই ভাল। বরং প্রোবায়োটিক খান। জল, ওআরএস খেয়ে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখুন। তবে ব্যাক্টিরিয়াল ইনফেকশন হলে কিংবা মলের সঙ্গে রক্ত পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ভাইরাসের চোখরাঙানি

ভাইরাল ফিভার, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ম্যালেরিয়ার দাপট এখন চার দিকে। ডা. সুবীর মণ্ডল বলছেন, “এই আবহাওয়া ভাইরাস, মশার দাপট বাড়ানোর পক্ষে আদর্শ। রাস্তাঘাটে এখন ভিড় বেশি। ফলে আশপাশে কেউ হাঁচলে বা কাশলে ভাইরাস ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। তাই সতর্ক থাকুন।” শপিং হোক কিংবা প্যান্ডেল হপিং, ভিড় জায়গায় মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। তবে মাস্ক পরে বেশি হাঁটাহাঁটি করবেন না। বাচ্চা ও বয়স্ক, যাঁরা কিডনি বা হার্টের অসুখে ভুগছেন, ক্যানসার রোগী, যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম— তাঁরা যতটা সম্ভব মাস্ক ব্যবহার করুন। রাস্তাঘাটে শৌচাগারে গেলে স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করুন। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খেতে পারেন। তবে দু’-তিন দিনের মধ্যে জ্বর না কমলে, খিঁচুনি, অজ্ঞান হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ভিড়ে সাবধান

প্যান্ডেলের ভিড়, গরমে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাথা ঘোরে, চোখে অন্ধকার লাগে, শ্বাসকষ্ট হয়। ক্লস্ট্রফোবিক যাঁরা, তাঁদেরও সমস্যা হতে পারে। চিকিৎসকেরা বলছেন, ভিড়ে সমস্যা হওয়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে, তেমন জায়গা এড়িয়ে চলুন। শরীর খারাপ লাগলে খোলা জায়গায় বসে ঘাড়ে-মাথায় জল দিন। অল্প জল খান। ডা. তালুকদারের পরামর্শ, “শরীর বেশি খারাপ লাগলে অসুস্থ ব্যক্তিকে মাটিতে শুইয়ে পা উপরের দিকে তুলে ধরুন। এতে মাথা ও হার্টের দিকে রক্ত চলাচল বাড়বে।” চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শর্ট অ্যাক্টিং ইনহেলারও ব্যবহার করতে পারেন। এতে শ্বাসকষ্ট তাড়াতাড়ি কমবে। প্রতিটি পুজো প্যান্ডেলেই থাকে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা। প্রয়োজনে সাহায্য নিন।

অতিরিক্ত হাঁটাহাঁটিতে সমস্যা

ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে কোমরে, পায়ে ব্যথা হয়েই থাকে। ডা. সুবীর মণ্ডল বলছেন, “অনেকেই বাড়ি ফিরে এসে ব্যথা কমানোর ওষুধ খান। এটা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।” বাড়ি ফিরে হালকা গরম জলে পা ডুবিয়ে বসতে পারেন। তাতে আরাম হবে। প্যান্ডেল হপিংয়ের প্ল্যান থাকলে স্নিকার্স বা আরামদায়ক জুতো পরুন।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী বলছেন, “পুজো পেরোলেই ফের শুরু হয়ে যাবে বাচ্চাদের স্কুল, পরীক্ষা। তাই পুজোর কয়েক দিনে বড়দের দেদার আনন্দের মাঝে বাচ্চাদের যেন অবহেলা না হয়, সে দিকে নজর রাখুন।” স্যানিটাইজ়ার সব সময়ে যথেষ্ট নয়, খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই সাবান-জলে হাত ধুয়ে নিন। বাচ্চা-বড় কেউই গরম থেকে হুট করে এসিতে ঢুকবেন না। বাড়ি ফিরে হালকা গরম জলে স্নান করতে পারেন। এতে ধুলোবালি, জীবাণু যেমন দূর হবে, তেমনই অতিরিক্ত হাঁটাহাঁটি, পরিশ্রমে গায়ে-হাতে-পায়ে হওয়া ব্যথাও কমবে।

নজরে থাকুক আবহাওয়া

এই রোদ, তো এই বৃষ্টি... আবহাওয়া ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছে। তাই বাইরে বেরোনোর আগে অবশ্যই ছাতা সঙ্গে রাখুন। আকাশের খামখেয়ালিপনার কথা মাথায় রেখে হালকা পোশাক বাছুন। অতিরিক্ত আঁটসাঁট পোশাক পরলে অস্থির লাগতে পারে। আবার ঘামে বা বৃষ্টিতে ভিজে গিয়ে পোশাক না শুকোলে ঠান্ডাও লেগে যেতে পারে। পারলে বাড়ির বাচ্চাটির জন্য এক সেট অতিরিক্ত পোশাক নিয়ে বেরোন।


মডেল: ভারতী লাহা;

ছবি: সর্বজিৎ সেন, অয়ন নন্দী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE