দাউদাউ: আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হল হাওড়ার সলপের পাকুরিয়া মোড়ের কাছে নারকেল দড়ির এই কারখানাটি। দমকলের ছ’টি ইঞ্জিন পৌঁছে প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভায়। —নিজস্ব চিত্র।
কখনও একটি ঘরের ভিতর থেকে একই পরিবারের তিন জনের পচা-গলা মৃতদেহ উদ্ধারের পরে দেখা যায়, সেই ঘরের সমস্ত দরজা-জানলাই বন্ধ ছিল। ভিতরে জ্বলছিল জেনারেটর, মশার ধূপ। কখনও একই পরিবারের চার জনের মৃত্যুর পরে দেখা যায়, বন্ধ ঘরে জ্বালানো ছিল ‘গ্যাস হিটার’। আবার কখনও জঙ্গলে বাঘের হিসাব করতে যাওয়া পুলিশ ভ্যানের দরজা-জানলা বন্ধ রেখে ভিতরে জেনারেটর চালিয়ে আলো জ্বালানোয় দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয় খোদ পুলিশকর্মীরই। ঘটনাগুলির সব ক্ষেত্রেই মৃত্যুর জন্য দায়ী বিষাক্ত গ্যাস কার্বন মনোক্সাইড। বদ্ধ পরিবেশে এই গ্যাসই কেড়ে নিচ্ছে একের পর এক প্রাণ!
বার বার এমন ঘটনা সামনে এলেও তেমন সতর্কতাই তৈরি হয় না বলে অভিযোগ। শীতের রাতে এমন ঘটনায় মৃত্যু তাই বাড়ে। যেমন, শনিবার সকালেই বেলেঘাটা রোডের একটি ঘর থেকে তিন জনের সংজ্ঞাহীন দেহ উদ্ধার হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে তাঁদের এক জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। জানা যায়, শীতের রাতে ঘর গরম করতে উনুন জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তাঁরা।
এই পরিস্থিতিতে ২০১৯ সালের বন্দর এলাকার কার্ল মার্ক্স সরণির একটি ঘটনার কথা জানাচ্ছেন লালবাজারের পুলিশ কর্তারা। দক্ষিণ বন্দর থানার পুলিশ বন্ধ ঘরের দরজা ভেঙে উদ্ধার করে তিন ভাইবোনকে। দুই ভাইয়ের দেহে পচন ধরে গিয়েছিল। প্রৌঢ়া বোনের দেহে তখনও প্রাণ ছিল। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মৃত্যু হয় তাঁর। প্রতিবেশীরা জানান, প্রায় ৪০ ঘণ্টা আগে তাঁদের শেষ বার দেখা গিয়েছিল। ওই দিন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ চলে গিয়েছিল। ঘরে মশার ধূপ জ্বেলে আর জেনারেটর চালিয়ে ঘুমিয়েছিলেন তাঁরা।
কাশ্মীরে দীর্ঘদিন কাটানো এক পুলিশ কর্তা আবার বললেন, ‘‘বেশ কয়েক দিন বরফে আটকে থাকা গাড়িতে করে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কাশ্মীরে বেড়াতে বেরোচ্ছিলেন এক মহিলা। গরম থাকবে ভেবে গাড়ির ইঞ্জিন চালু করে ছেলে-মেয়েকে ভিতরে বসিয়ে নিজে গাড়ির আশপাশের বরফ সাফ করতে শুরু করেন। কিন্তু গাড়ির ধোঁয়া বেরোনোর জায়গা যে বরফে চাপা পড়ে আছে, দেখেননি। ইঞ্জিন চালু থাকায় ধোঁয়া তৈরি হতে থাকে। তবে তা বেরোনোর জায়গা না পেয়ে গাড়ির ভিতরেই ছড়িয়ে যায়। সেন্ট্রাল লকিং সিস্টেমে লক করা গাড়িটির কাচও নামাতে পারেনি ওই মহিলার ছেলে আর মেয়ে!’’
বক্ষরোগ চিকিৎসক ধীমান গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘অক্সিজেন পুড়ে আগুন জ্বলে আর কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি হয়। কিন্তু অক্সিজেনের যোগান নেই, অথচ কিছু পুড়ছে বা জ্বলছে— এই পরিস্থিতিতে কার্বন মনোক্সাইড তৈরি হয়। এই বিষাক্ত গ্যাস নীরব ঘাতকের মতো কাজ করে।’’ কী ভাবে? ধীমান জানান, শরীরের মধ্যে অক্সিজেন বহন করে হিমোগ্লোবিন। অক্সিজেনের বদলে কার্বন মনোক্সাইড শরীরে ঢুকলে হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে মিশে কার্বোক্সিহিমোগ্লোবিন (সিওএইচবি) তৈরি হয়। কার্বোক্সিহিমোগ্লোবিন অক্সিজেন বহন করতে পারে না। সুস্থ মানুষের ১০০ মিলিলিটার রক্তে ১৪-১৫ গ্রাম হিমোগ্লোবিন থাকে। কিন্তু এর অর্ধেক যদি কার্বোক্সিহিমোগ্লোবিন হয়ে যায়, তা হলেই শরীর তার কার্যক্ষমতা হারাবে। বাকি হিমোগ্লোবিন তখন আর অক্সিজেন বহন করতে পারবে না। শরীরে অক্সিজেন কমে গেলে মৃত্যু হবে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বদ্ধ জায়গায় কয়লার উনুন জ্বালানো হলে কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রেজেন অক্সাইড ও সালফার ডাই অক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হতে পারে। শুধু উনুন নয়, দীর্ঘক্ষণ ধরে রুম হিটার, ব্লোয়ার ব্যবহার করাটাও ঠিক নয় বলে মত চিকিৎসকদের।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই পরিস্থিতিতে মাথা ঝিমঝিম, বমি ভাব, ঝিমুনি, শ্বাসকষ্ট দেখা দিলেই দ্রুত সতর্ক হতে হবে। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘বদ্ধ জায়গায় রান্নার ক্ষেত্রেও একই বিপদ রয়েছে। রান্নার জ্বালানি থেকে ছড়ানো দূষণে প্রতি বছর বিশ্বে ৪৩ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটে। কলকাতায় যে সব ঝুপড়িতে এমন জ্বালানি ব্যবহার করে রান্না হয়, সেখানেও কার্বন মনোক্সাইড নিঃসরণের মাত্রা ‘ইউনাইটেড স্টেটস এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সির’ (ইউএসইপিএ) নির্ধারিত মাত্রা ৯ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন) থেকে কয়েক গুণ বেশি। এ নিয়ে সচেতনতার প্রচার চালানো হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy