নিজেদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বহু প্রতিভাই লকডাউনে আবিষ্কার করে ফেলেছি আমরা। কেউ রেস্তরাঁকে হার মানিয়ে বিরিয়ানি রাঁধছেন, আবার কেউ তাঁর সঙ্গীর মধ্যেই হেয়ার স্টাইলিস্ট পেয়ে গিয়েছেন। তবে বাড়িতে যতই হেয়ার কালার, বডি স্পা করি না কেন, খুঁতখুতানি থেকেই যায়। পেশাদার বিউটিশিয়ানের ‘টাচ’টা-র জন্য মন কেমন করে। আর সত্যিই কিছু কিছু যত্ন আর ফিনিশিং পার্লারে যেমনটা হয়, বাড়িতে ঠিক তেমনটা সম্ভব হয় না।
সালঁ খুলে গিয়েছে। ‘বিউটি ইন্ডাস্ট্রি’-তে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সমস্যার কথা। ফেসিয়াল, স্পা, পেডিকিয়োর, ম্যানিকিয়োর, থ্রেডিং সব কিছুতেই বিউটিশিয়ানের সংস্পর্শে আসতেই হয়। সেই সুযোগটি ভাইরাস যাতে নিতে না পারে, তার জন্য অনেক পার্লারই কিছু স্বাস্থ্যবিধি মানছে, ক্লায়েন্টদের জন্যও কিছু নিয়ম রেখেছে। পার্লার যাওয়ার কথা ভাবলে, এই নির্দেশাবলিতে নজর বুলিয়ে নেওয়া জরুরি।
নিউ নর্মাল সালঁ
• ভিড় এড়াতে এবং গ্রাহক ও কর্মীদের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট’-এর ভিত্তিতে পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে কিছু সালঁয়। সালঁ যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে ২৪ ঘণ্টা আগে ফোন করে কত ক্ষণের ও কী কাজ করাবেন— কথা বলে নিন। সকালে ফোন করলে সাধারণত বিকেলের ‘বুকিং’ পাওয়া যাচ্ছে।
• সালঁয় ঢোকার মুখে দরজা খুলে দিচ্ছেন কর্মীরাই। শরীরের তাপমাত্রা মাপা, স্যানিটাইজ়ার স্প্রে করা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে ডিসপোজ়েবল শু কভার। কিছু সালঁর তরফে জানা গেল, স্বাস্থ্য অ্যাপে নথিবদ্ধ করা গত কয়েক দিনের শারীরিক অবস্থা ও ট্রাভেল হিস্ট্রি দেখে বুকিং কনফার্ম করছেন।
• রূপবিশেষজ্ঞরা জানালেন, রোজ সালঁর কর্মীদের তাপমাত্রাও পরীক্ষা করা হচ্ছে, তাঁদের সুস্থতার দিকে ক্রমাগত দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। পিপিই কিট, গ্লাভস, মাস্ক ও ফেসশিল্ড পরছেন কর্মীরা।
• প্রতিটি গ্রাহকের ব্যবহারের পর চেয়ার, বেড ও মেশিনগুলি, হেয়ার কাটের কাঁচি ও চিরুনিগুলি সাবান অথবা স্যানিটাইজ়ারে পরিষ্কার করা হচ্ছে। গ্লাভস পাল্টানো চলছে। ব্যবহারের পর স্ক্রাবার, ওয়াক্সিং স্প্যাচুলা ফেলে দেওয়া হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে ডিসপোজ়েবল রোব।
• আইব্রো বা ফেসিয়াল হেয়ার থ্রেড করার সময়ে মুখে সুতো ধরেন সালঁর কর্মীরা। এখন মুখের বদলে তারা গলায় সুতো জড়িয়ে রাখছেন।
• প্রতিটি গ্রাহকের জন্য লোশন, ক্রিম বা তেলের আলাদা পাউচের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক প্রবীণ রূপবিশেষজ্ঞ জানালেন, নামী সংস্থাগুলি এই ক্রিম বা লোশন ছোট প্যাকেটে ইনডিভিজুয়াল ফেসিয়াল বা স্পা কিট হিসেবেই বিক্রি শুরু করেছে। তা যদি না-ও হয়, কর্মীরা নিজেরা বড় বোতল থেকে নিয়ে ছোট ছোট পাউচে আলাদা করছেন প্রডাক্টগুলি। ব্যবহারের পর সেগুলি ফেলে দেওয়া হচ্ছে। কর্মীরা সকলেই স্বাস্থ্যবিধি যাতে মানা হয়, সে দিকটায় খেয়াল রাখছেন। এটাও এখন পার্লারের কাজেরই অংশ।
• অধিকাংশ সালঁয় এসি চললেও কিছুক্ষণ অন্তর দরজা বা জানালা খুলে রাখা হচ্ছে। বদ্ধ পরিবেশ যাতে না থাকে, তার জন্য সরকারের তরফে দেওয়া নির্দেশিকা মেনেই কাজ চলছে।
• পার্টি বা বিয়েবাড়ির মেকআপ বা হেয়ার স্টাইল চাইলে, পার্লারকে জিজ্ঞেস করুন তাঁরা প্রত্যেকের জন্য নতুন কসমেটিকস ব্যবহার করছেন কি না। নিজের প্রসাধনী নিয়ে গিয়েও সাজতে পারেন। কিছু সালঁ দাম ধরে নিয়ে, নতুন কসমেটিকস সেট কিনে, সাজানোর পর তা গ্রাহককে দিয়ে দিচ্ছে।
খেয়াল রাখবেন
• বাইরের পরিবেশের সংস্পর্শে কম আসছেন। অনেক ক্ষণ মাস্ক পরতেও হচ্ছে। অনেক দিন সে ভাবে চর্চাও হয়নি। ফলে অনেকেরই ত্বকের সংবেদনশীলতা বেড়েছে। ফেসিয়াল বা ওয়াক্সিং-এর ক্ষেত্রে আগে যে প্রডাক্টগুলি ব্যবহার করতেন, সেগুলি এখন সহ্য না-ও হতে পারে। চেনা প্রডাক্টেও ত্বকে র্যাশ, খোসা ওঠার সমস্যা হচ্ছে। পরিষেবা শুরুর আগে রূপবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন
যা করণীয়
• সুস্থ থাকলে তবেই সালঁ যাবেন।
• পার্লারে স্পা বা ফেসিয়াল করতে গেলে অনেক সময়েই ঠান্ডা লেগে যায়। সাবধান হন সে ব্যাপারেও।
• মাস্ক, হেড কভার, সাবান, স্যানিটাইজ়ারের প্রস্তুতি নিয়ে পার্লারে যান। ফেস শিল্ড বা প্রোটেক্টিভ গগলসও পরতে পারেন। পরিষেবার সময় সেগুলি খুলে রাখলে, আবার পরার আগে দস্তুর মতো স্যানিটাইজ় করুন। গগলস, শিল্ড ধুয়ে নিন।
• কোনও সঙ্গী বা বাচ্চাদের সালঁয় নিয়ে যাবেন না। সঙ্গে শুধু অত্যাবশ্যক জিনিস রাখবেন।
• মোবাইল, পার্সের সঙ্গে নিজের তোয়ালে ও চিরুনিও নিতে পারেন।
• ম্যানিকিয়োর, পেডিকিয়োরের ক্ষেত্রে নেলপলিশ নিয়ে যান।
• যে সালঁয় জায়গা বেশি, সেখানে গেলেই ভাল। ডিজিটাল পেমেন্ট করতে চেষ্টা করুন।
বাড়ি ফিরে যত্ন
বাড়ি ফেরার পর নিয়ম মেনে সব জিনিসপত্র, কাপড় ধুয়ে নিন। যেগুলি ধোয়া যাবে না, সেগুলি স্যানিটাইজ় করে নিন। শ্যাম্পু-সাবানে স্নান মাস্ট।
কয়েক ধরনের স্পা-এ দু’দিনের আগে শ্যাম্পু করতে বা কিছু ফেসিয়ালের পর কয়েক ঘণ্টা ফেসওয়াশে নিষেধ থাকে। করোনা-আবহে এই সব নিয়মে মন দিলে চলবে না। রূপ বিশেষজ্ঞের কথায়, এই সব ক্ষেত্রে ৯৫% কাজ শেষ হওয়ার পর, হোম-কেয়ার কিট দেওয়া হচ্ছে। শেষ ধাপের যত্নটা বাড়িতে নিজেই করতে পারবেন। ফেসিয়ালের ক্ষেত্রে লোশন দেওয়া হচ্ছে, স্পা-এর ক্ষেত্রে বিশেষ জেল। বাড়িতে গিয়ে নতুন নিয়মে ভাল করে সাবান মেখে স্নানের পর এই লোশন লাগাতে বলছেন তাঁরা। বাড়ি ফিরে এই জেলে চুল ধুলে স্পা-এর প্রভাব কমবে না বলেই ভরসা দিচ্ছেন রূপ বিশেষজ্ঞরা।
সেপ্টেম্বর আসতে চলল। পুজোর রোদটাও কিন্তু এসে পড়েছে বারান্দায়। নতুন নিয়ম জেনেবুঝে সালঁর যত্নআত্তিটাও নবোৎসাহে শুরু করার এই তো সময়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy