পাতলা ঘুমের মধ্যে কাজ করে মস্তিষ্কের সিংহভাগ। ছবি: সংগৃহীত
‘বুরুন তুমি অঙ্কে ১৩’। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’-এর বুরুনকে মনে আছে? অঙ্কে ১৩ পাওয়ার স্মৃতি তার দুঃস্বপ্নে ফিরে ফিরে আসত। বাস্তবেও এমন ঘটতে পারে। তবে শুধু অঙ্ক পরীক্ষার স্মৃতি নয়, গোটা একটা অঙ্কই মানুষ কষে ফেলতে পারে স্বপ্নের মধ্যে। চালাতে পারে হালকা কথোপকথনও। হালে আমেরিকার ‘নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’-র গবেষকরা এমনটাই বলেছেন তাঁদের এক গবেষণাপত্রে।
ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস এবং আমেরিকার ৩৬ জন মানুষের ঘুম নিয়ে পরীক্ষা করেছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। দেখা গিয়েছে, স্বপ্ন দেখার একটা বিশেষ পর্যায়ে মানুষ ঘুমের বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যেতে পারে। বিজ্ঞানীদের ভাষায় স্বপ্ন দেখার এই অবস্থার নাম ‘লুসিড ড্রিম’। প্রত্যেকে মানুষই ঘুমের মধ্যে এই অবস্থার মধ্যে দিয়ে যায়। এই পর্যায়ে মানুষ স্বপ্ন দেখে, আবার বুঝতেও পারে, তারা স্বপ্ন দেখছে। ঘুমের যতগুলো পর্যায় আছে, তার মধ্যে একটি পর্যায়কে বলা হয় ‘র্যাপিড আই মুভমেন্ট’ বা ‘আরইএম’। এই সময় চোখের পাতা দ্রুত কাঁপতে থাকে, আর ঘুমও বেশ কিছুটা পাতলা হয়ে আসে। তখনই এই ‘লুসিড ড্রিম’-এর মধ্যে ঢুকে পড়ে মানুষ।
১৯ বছর বয়সি এক মার্কিন নাগরিকের উপর পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ‘লুসিড ড্রিম’-এর মধ্যে অঙ্ক কষে ফেলছেন তিনি। দিনের বেলায় দেড় ঘণ্টা ঘুমানোর সুযোগ দেওয়া হয় তাঁকে। এক ঘণ্টা পরে তিনি ‘আরইএম’ পর্যায়ে ঢুকে যান। সেই সময় তাঁকে বলা হয়, ৮ থেকে ৬ বিয়োগ করতে। বন্ধ চোখের পাতার তলায়, তিনি ডাইনে-বাঁয়ে ২ বার চোখের মণি এদিক ওদিক করেন। কিছু ক্ষণ পরে তাঁকে একই প্রশ্ন আবার করা হয়। তাতেও ঠিক একই রকমের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। এ ভাবে ৩ বার তাঁকে ঘুমের মধ্যে অঙ্ক কষতে দেন গবেষকরা। প্রতি বারই তিনি সঠিক উত্তর দেন।
ঘুম ভাঙার পর তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ওই সময়টায় তিনি কী স্বপ্ন দেখছিলেন? সেই ব্যক্তি জানান, তিনি তাঁর প্রিয় ভিডিয়ো গেমের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলেন। ‘‘অনুভব করলাম, স্বপ্ন দেখছি। তার পরে কী হল বুঝতে পারলাম না। সব পেশির উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললাম। কানে জলস্রোতের মতো গর্জন হতে থাকল’’, বলেছেন তিনি। তবে ঘুম ভাঙার পরেও তৃতীয় বারের অঙ্কটা তার মনে হাল্কা করে থেকে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন ওই ব্যাক্তি। যাঁদের উপর গবেষণা চালানো হয়েছে, তাঁদের অনেকেই বলেছেন, স্বপ্নের মধ্যেই অঙ্কগুলো তাঁরা শুনতে পেয়েছেন। একজন যেমন বলেছেন, স্বপ্নে তিনি একটা গাড়ির মধ্যে বসেছিলেন। গাড়ির রেডিয়ো থেকে অঙ্কটা শুনতে পেয়েছেন তিনি।
গবেষক দলের অন্যতম প্রধান কেন প্যালার জানিয়েছেন, তাঁদের গবেষণা থেকে পরিষ্কার, মানুষ যখন এই ‘লুসিড ড্রিম’-এর মধ্যে থাকে, তখন গাণিতিক সমস্যাই শুধু নয়, ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’তে প্রশ্নের উত্তর, হাল্কা কথোপকথনও চালাতে পারে তারা।
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও অভিনীত ‘ইনসেপশন’ ছবিতেও এ ভাবেই একটি দল ঢুকে পড়ত মানুষের স্বপ্নের মধ্যে। অবচেতন থেকে চুরি করে আনত গোপন তথ্য। সেই কল্পবিজ্ঞানের কাহিনিও এখনও বাস্তবের অনেকটা কাছাকাছি এসে গিয়েছে। ঘুমের অচেনা জগতের উপর থেকে রহস্যের পর্দা আরও অনেকটা সরানোর সম্ভাবনা দেখাচ্ছে এই গবেষণা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy