হাসপাতাল সুপারের কাছে অভিযোগ জানাচ্ছেন মিঠুদেবী। — নিজস্ব চিত্র ।
সাতসকালে হাসপাতালে ঢুকে রীতিমতো তাণ্ডব চালাল দু’জন দুষ্কৃতী। তাদের মারে জখম হলেন কর্তব্যরত এক নার্স। শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ জানানো হলেও এ দিন রাত পর্যন্ত পুলিশ অভিযুক্তদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এ দিনের ওই ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে নিরাপত্তারক্ষীদের ভূমিকা নিয়েও। অভিযোগ, মিনিট পাঁচ-সাতেক ধরে হাসপাতালে দুই দুষ্কৃতী তাণ্ডব চালালেও কোনও নিরাপত্তারক্ষীকে ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি। এমনকী হাসপাতাল ছেড়ে পালানোর সময়েও দুষ্কৃতীদের ধরার জন্য কোনও চেষ্টাই করেননি তাঁরা!
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে হাসপাতাল ভবনের দোতলায় মহিলা মেডিক্যাল ওয়ার্ডে ডিউটি করছিলেন নার্স মিঠু চৌধুরী দে। সকাল সাতটা নাগাদ দু’জন যুবক ওয়ার্ডে ঢুকে মিঠুদেবীর কাছে বগুলা থেকে আসা রোগীর মৃতদেহ কোথায় রাখা আছে তা জানতে চায়। কিন্তু তারা রোগীর নামধাম কিছুই বলতে পারেনি। মিঠুদেবীও তাদের প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। অভিযোগ, তারপরই মিঠুদেবীকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করে ওই দুই যুবক। চিৎকার শুনে পাশের ওয়ার্ড থেকে অন্যান্য কর্মীরাও ছুটে আসেন। ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে। আচমকা দুই দুই দুষ্কৃতী মিঠুদেবীর বাঁ হাতে সজোরে আঘাত করে।
মিঠুদেবী বলেন, ‘‘হাতের শাঁখা ভেঙে কেটে গিয়ে রক্ত বেরোতে শুরু করে। তাই দেখে হাসপাতালের কর্মীরা তাড়া করলে ওরা ছুটে পালায়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওই দুই যুবক মদ্যপ ছিল। কোনও কথা শুনতে চাইছিল না। চিৎকার করে আমাকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করছিল।’’এ দিকে, দুই দুষ্কৃতীকে পালাতে দেখে মিঠুদেবী, নার্স গৌরী মালো-সহ হাসপাতালের অন্যান্য কর্মীরা তাদের তাড়া করেন। এক তলায় এক দুষ্কৃতীকে ধরে ফেলেন কর্মীরা। বাকি এক জনকে হাসপাতালের মূল ফটকের কাছে ধরে ফেলেন মিঠুদেবী। কিন্তু তাঁর হাত ছাড়িয়ে পালায় ওই দুষ্কৃতী। ধস্তাধস্তি করে কর্মীদের হাতে ধরা পড়া আর এক দুষ্কৃতীও নিজেকে ছাড়িয়ে হাসপাতালের পিছনের গেট দিয়ে পালায়। খবর পেয়ে ছুটে আসেন হাসপাতালের সুপার হিমাদ্রিবাবুও।
এমন ঘটনার পরে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন হাসপাতালের কর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘হাসপাতালের গেট খোলে সকাল ৭টায়। তার আগেই কী ভাবে ওই দু’জন মদ্যপ যুবক ভিতরে ঢুকে একেবারে মহিলা ওয়ার্ড পর্যন্ত চলে এল? এ ভাবে চললে কোন ভরসায় আমরা রাতে ডিউটি করব?’’ হাসপাতালের এক কর্মী জানান, সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়েছে এক দুষ্কৃতী নিরাপত্তা রক্ষীর সঙ্গে কথা বলার সময় আরও একজন ভিতরে ঢুকে পড়ে। পরে অন্য জন ঢোকে। আবার বেরিয়ে যাওয়ার সময়েও দেখা যায়, মিঠুদেবীরা একজনকে ধরে ফেললেও কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের সাহায্য করেনি। গৌরীদেবী বলেন, ‘‘আমরা ওই দুষ্কৃতীকে ধরে ফেলেছিলাম। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা কেউ এগিয়ে এল না। শেষে আমাদের হাত ছাড়িয়ে পালিয়ে যায় ওই দুষ্কৃতী।’’
এর আগেও একাধিক বার নিরাপত্তারক্ষীদের ভূমিকা নিয়ে বিব্রত হয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি রাতের অন্ধকারে তাদের চোখ এড়িয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান এক রোগী। পরে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় দুর্ঘটনায় জখম হয়ে রাস্তায় পড়েছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা হাসপাতালে নিয়ে এলেও মারা যান সেই ব্যক্তি। ওই ঘটনার আগে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর দৃষ্টিহীন আত্মীয়কে বেধড়ক মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও রোগীর বাড়ির লোকেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, টাকা নিয়ে অসময়ে হাসপাতাল চত্বরে লোক ঢোকানোর মতো অভিযোগ উঠেছে বারবার।
তবে ওই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। সম্প্রতি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ওই বেসরকারি সংস্থাটি যথোপযুক্ত নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে ‘সৈনিক বোর্ড’-কে দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। তারপরেও কেন এই সংস্থাটিকে সরিয়ে সৈনিক বোর্ডকে নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা সৈনিক বোর্ডের হাতে নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি পরবর্তী রোগী কল্যাণ সমিতির সভায় আলোচনা করব।’’
নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংস্থার মালিক রতন দেবনাথ বলেন, ‘‘কোনও কর্মীর গাফিলতি ধরা পড়লে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy