শরৎকাল ও দুর্গাপুজো, এই দু’টি বিষয়কে যদি কোনও একটা শব্দ দিয়ে বোঝাতে হয়, তা হলে সেটা শিউলি ফুল। আমাদের রাজ্য ফুল বা স্টেট ফ্লাওয়ার শিউলির মিষ্টি গন্ধ ভাল লাগে না এমন মানুষ পাওয়া ভার। রাতে শিউলি ফোটে আর ভোর হলেই ঝরে পড়ে বৃন্ত থেকে। এর পাতাও খাদ্যগুণে ভরপুর।
শিউলি গুল্ম জাতীয় গাছ, তাই যাঁদের বাগান করার জন্য ছাদ বা বারান্দা সম্বল, তাঁরা টবে এই গাছ লাগাতে পারেন। তবে তার জন্য প্রয়োজন ধৈর্য! কারণ ঠিকঠাক যত্ন নিলে গাছ লাগানোর এক-দেড় বছর পরে ফুল আসতে শুরু করে, তবে তা পরিমাণে অল্প। তিন-চার বছর পরে ফুল হয় মনমতো। শিউলি ফুল অগস্টের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে, প্রায় মধ্য জানুয়ারি অবধি ফোটে। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ফুল হয়। কোনও কোনও গাছে তো সারা বছরই ফুল হয়! শিউলি লাগানোর উপযুক্ত সময় এপ্রিল। বীজ থেকে চারা তৈরি করে বা নার্সারি থেকে গুটিকলমের গাছ এনে, দু’ভাবেই টবে গাছ করা যায়। তবে টবের জন্য কলমের গাছই সেরা। এতে গাছের বৃদ্ধি ও ফুল দুই দ্রুত হয়।
• টব বদলের মতো শিকড়ও ছাঁটতে হয়: শিউলির শিকড় দ্রুত বাড়ে। তাই গাছ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেয়াল করে টব বদল করা জরুরি। নার্সারি থেকে আনা কলমের গাছ প্রথমে চার বা ছ’ ইঞ্চির টবে বসাতে পারেন। তার পর বাড়বাড়ন্ত দেখে আট ইঞ্চির টবে বসাতে হবে। গোড়া শক্ত হলে এবং ভালমতো ফুল হওয়া শুরু হলে ১২ ইঞ্চির টবে স্থানান্তরিত করলে গাছ বহুদিন বাঁচবে। মনে রাখবেন, সময় মতো শিকড়ও ছাঁটা দরকার। শিকড় যখন গোড়ার কাছে উঁকি দেবে বুঝবেন, এ বার ছাঁটার পালা।
•গোড়ায় জল জমলেই গাছ নষ্ট: তাই টবের ড্রেনেজ সিস্টেম ভাল হওয়া জরুরি। এর জন্য গাছ বসানোর আগে টবের ফুটোগুলো প্রথমে খোলামকুচি দিয়ে ঢেকে দিয়ে কিছুটা ইটের টুকরো বা নুড়িপাথর বা স্টোনচিপস দিতে হবে। তার উপর কিছুটা বালি দিয়ে টুকরোগুলো ঢেকে দিতে হবে। বালির স্তরের উপর মাটি দিয়ে গাছ বসাতে হবে। বালি থাকার জন্য মাটি, বালি ভেদ করে নীচে যেতে পারবে না, ফলে জল আটকাবে না। টবে মাটি দেওয়ার আগে, সাধারণ বাগানের মাটির সঙ্গে গোবর সার, হাড়গুঁড়ো, শিংয়ের কুচি, কিছুটা পুরনো সরষের খোল ভাল করে মিশিয়ে মাটি তৈরি করে নিতে হয়। গাছ বসানোর যেমন একটা নিয়ম আছে, তেমনই পুরনো টব থেকে গাছ বার করারও একটা নিয়ম আছে। গাছ বার করার সময় এক হাত দিয়ে টব উল্টো করে ধরতে হবে, টবের মাটি যেন শুকনো থাকে। অন্য হাত থাকবে গাছের গোড়ায়। উল্টোনো টব ধীরে ধীরে ঘুরিয়ে সাবধানে শক্ত কোনও উঁচু জিনিসে ঠুকতে হবে। অল্প ঠুকতেই মাটিসুদ্ধ গাছ টব থেকে আলাদা হয়ে যায়। নতুন টবে গাছ বসিয়ে চারপাশে ভাল ভাবে চেপে চেপে মাটি দিলে হাওয়া ঢুকে ফাংগাস তৈরি হওয়ার ভয় থাকে না। গাছ বসানোর পরপরই পর্যাপ্ত পরিমাণে জল দেবেন।
• সূর্যালোকের তারতম্যে সমস্যা নেই: শিউলি গাছ বেশি রোদেও হয়, আবার একটু আলোছায়াতে থাকলেও অসুবিধে নেই। সারা দিন ঘণ্টা তিনেক রোদ পেলেই ভাল ফুল হয়। যেহেতু অগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে ফুল ধরে তাই গ্রীষ্মের শুরুতে এক-দেড় ইঞ্চি করে গাছের মাথা ছেঁটে দিলে ফুল যেমন বেশি হয়, তেমন গাছ ঝোপের আকার নেয়, যা দেখতেও বেশ লাগে।
•রাসায়নিকের চেয়ে জৈব সারই ভাল: গাছ যখন ছোট অবস্থায় থাকে, সেই সময় মাসে একবার তিন-চার দিনের পুরনো খোল (সরষে) পচা জল সার হিসেবে দিতে পারলে ভাল। সার দেওয়ার আগের দিন গাছে জল না দিলে, মাটি শুকনো থাকায় শিকড় দ্রুত সার শুষে নিতে পারে। গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য ১০:২৬:২৬ অনুপাতে এনপিকে (নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম)দেওয়া যেতে পারে। তবে গাছের দীর্ঘায়ুর জন্য রাসায়নিক সারের চেয়ে জৈব সারই সেরা। চার-পাঁচ বছরের গাছের ক্ষেত্রে বছরে দু’বার, ফুল ফোটার আগে এবং মার্চ মাসের শুরুতে নতুন পাতা গজানোর
সময়ে সরষের খোল ও গোবর
সারের সঙ্গে দু’চামচ হাড়গুঁড়ো মিশিয়ে দিলেই যথেষ্ট।
মনে রাখবেন, শিউলি গাছে বেশ পোকামাকড় হয়। বিশেষ করে শুঁয়োপোকা, যা গাছের পাতা খেয়ে ফেলে। সাধারণ পোকামাকড়ের জন্য কয়েক দিন পরপর নিমতেল বা নিম পাতা সিদ্ধ জল ঠান্ডা করে গাছের উপর স্প্রে করে নিলেই হবে। কিন্তু এতে শুঁয়োপোকা যাবে না। রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার না করে, এদের বিদায় করার জন্য সহজ পন্থা হল, যে পাতার তলায় প্রজাপতি ডিম পাড়বে সেটা ছিঁড়ে ফেলে দেওয়া! এর জন্য চাই স্রেফ একটু নজরদারি।
ঊর্মি নাথ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy