কম উচ্চতার আসবাবে ছিমছাম বৈঠকখানা
খোলামেলা ঘরে আলো-বাতাস খেলবে, একটু হাত-পা ছড়িয়ে থাকা যাবে, এই সামান্য স্বপ্ন আজ অনেকের কাছেই অধরা। অনেক সময়েই পরিস্থিতির কারণে বড় বাড়ির পরিবর্তে মানিয়েগুছিয়ে থাকতে হয় ছোট্ট ফ্ল্যাট-বাড়িতে। প্রয়োজনীয় আসবাব রাখতে রাখতেই ঘরের ভিতর চলাফেরার জায়গা থাকে না। আসবাবগুলো যেন আলো-বাতাস চলাচলের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, ঘরের ভিতর থাকতে যেন হাঁফ ধরে যায়। অথচ প্রয়োজনীয় জিনিস রাখার জন্য আসবাব চাই। এমন পরিস্থিতিতে আদর্শ কম উচ্চতার আসবাব বা লো-হাইট ফার্নিচার। ছোট আয়তনের ঘরে বিশেষ করে নিচু সিলিং হলে কম উচ্চতার আসবাবে ঘর খোলামেলা ও বড় দেখায়। সে কারণেই লো-হাইট ফার্নিচার এখন ট্রেন্ড। জনপ্রিয় হচ্ছে কম উচ্চতার আসবাব দিয়ে জাপানি কায়দায় ঘর সাজানো। কাঠ, বাঁশ, বেত, রট আয়রন ইত্যাদি প্রায় সব ধরনের মেটিরিয়ালেরই কম উচ্চতার আসবাব পাওয়া যায়। উপকরণের পাশাপাশি ডিজ়াইনেও বৈচিত্র অঢেল।
বসার ঘরের অন্দরসজ্জায় আমরা সবচেয়ে বেশি নজর দিই। ছোট ঘরে পরিমিত জায়গায় অনেকেই ফরাশ পাতেন। ফরাশের উপরে বিছিয়ে দিতে পারেন খেসের বেডকভার বা শীতলপাটি। সঙ্গে অবশ্যই থাকবে কুশন। ফরাশের পাশে রাখতে পারেন মেঝের লেভেলের কাঠের টি-টেবল। ফরাশ পাতার পরে আরও কিছুটা জায়গা বাঁচলে সেখানে রাখতে পারেন চৌকো, ত্রিভুজ, গোল নানা আকারের হাতলহীন নিচু কাউচ গোছের ওটোম্যান। শুধু বসার জন্য নয়, এর ফাঁপা পেটে প্রয়োজনীয় জিনিসও রাখা যায়। যাঁরা কম উচ্চতার সোফা বা চেয়ার রাখবেন, তাঁরা চিরাচরিত সেন্টার টেবল বা টি-টেবলের পরিবর্তে রাখতে পারেন মাল্টিপারপাস টেবল। এগুলো সাধারণত কম উচ্চতার হয়, যার ভিতরে থাকে একাধিক ড্রয়ার। আবার এমন টেবলও পাওয়া যায়, ভাঁজ খুলে ভিতরের চেয়ার বার করে নেওয়া যায়। এতে জায়গা কম লাগে, আবার এর উচ্চতাও কম। একই কায়দার ডাইনিং টেবলও হয়। এ ক্ষেত্রে টেবলের নীচে র্যাক থাকে জিনিস রাখার জন্য। টেবলের মধ্যেই যে চেয়ার রয়েছে, তা বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই। পুরনো ট্রাঙ্ক থাকলে তা বাতিল না করে ঝেরেঝুরে পছন্দমতো রং করে টেবল হিসেবে দিব্যি ব্যবহার করা যায়। ভিতরে লেপ-তোশক, জামাকাপড়, বাসন ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিস রেখে দিন। ট্রাঙ্ক যেমন টি-টেবল হিসেবে ব্যবহার করা যায় তেমনই ছোটদের স্টাডি টেবল হিসেবেও দারুণ কাজের। তাদের বইখাতা, খেলনা যাবতীয় জিনিস ট্রাঙ্কের ভিতরেই রাখতে পারে। ছোটদের ঘরের জন্য লো-হাইট ডিভানের কথাও ভাবতে পারেন।
লো-হাইট বেড বা কম উচ্চতার খাট সাধারণ উচ্চতার খাটের চেয়ে নিচু এবং আরামদায়ক। শোয়ার ঘর আয়তনে ছোট হলে লো হাইট বেড রাখলে নিঃসন্দেহে ঘর বড় দেখতে লাগবে। তবে এই উচ্চতার খাটের পাশে কাবার্ড বা ল্যাম্পশেড রাখতে হলে সেটাও কম উচ্চতার হতে হবে, যেমন ফ্লোর ল্যাম্পশেড। কম উচ্চতার আসবাব দিয়ে অন্দরসজ্জা করলে শু-র্যাকের জন্য ওটোম্যান শু-র্যাক পারফেক্ট।
বাজারচলতি রেডিমেড আসবাব আপনার পছন্দ না-ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অর্ডার দিয়ে আসবাব তৈরি করার আগে ঘরের আয়তন, দেওয়াল ও পর্দার রং মাথায় রাখুন, যা আসবাবের সঙ্গে মানানসই হওয়া জরুরি। কম উচ্চতার আসবাবে খুব বেশি কারুকাজ করা থাকলে দেখতে ভাল দেখায় না, আর ডিজ়াইন যত সাদামাঠা হবে পরিষ্কার করতেও তত সুবিধে। এই ধরনের আসবাব থাকলে ঘর সাজানোর সময়ে আলোর ব্যবহার খেলিয়ে করা যায়। সাধারণ টিউব বা বাল্বের পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের ল্যাম্পশেড, সোলার প্যানেল করা বটললাইট, লন্ঠন ব্যবহার করতে পারেন। এতে আলো-ছায়ার মায়াবি আবহ চোখ ও মনের পক্ষে বেশ আরামদায়ক। যে ঘরে কম উচ্চতার আসবাব থাকবে সেখানে বড়সড় শো-পিস বেমানান। অবশ্য ঘরের কোণে লম্বা বাহারি ফুলদানি বা দু’-তিনটে র্যাকের বাঁশের সরু কর্নার তাক ভালই দেখায়। তাতে রাখতে পারেন ছোট শো-পিস বা ইন্ডোর প্লান্ট। কম উচ্চতার আসবাবের
সঙ্গে ইন্ডোর প্লান্ট সুন্দর দেখতে লাগে। মাটি, সেরামিক, কাঠ, বেত ইত্যাদি নানা ধরনের বাহারি টবে মানি প্লান্ট, কয়েন প্লান্ট, স্নেক
প্লান্ট, ব্রোকেনহার্ট ইত্যাদি জাতীয় ইন্ডোর গাছ রাখতে পারেন, যাদের পরিচর্যা নামমাত্র।
কম উচ্চতার আসবাব দিয়ে ঘর সাজানোর সময়ে মাথায় রাখবেন বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের কথা। তাঁদের হয়তো নিচু জায়গায় বসতে অসুবিধে হতে পারে। শুধু বাড়ির সদস্য নয়, বাড়িতে আসা অতিথিদেরও সমস্যা হতে পারে। তাই কখনওই বাড়ির সব ঘর কম উচ্চতার আসবাব দিয়ে সাজাবেন না। স্বাভাবিক উচ্চতার আসবাবও যেন থাকে। এ ক্ষেত্রে জায়গা বাঁচাতে ফোল্ডিং চেয়ার ও খাটের কথাও ভাবতে পারেন, যা ব্যবহারের পরে ভাঁজ করে তুলে রাখা যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy