Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

সত্যজিতের ভাবনাই কি ফলছে নেটের ‘বুড়োমি’তে

সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু ব্যবহৃত একটি অ্যাপের সৌজন্যে জনে-জনে বুড়ো হওয়ার হিড়িক দেখে আমবাঙালির কিন্তু মনে পড়ছে সত্যজিৎ রায় আর গণেশ মুৎসুদ্দি দু’জনকেই।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে এই মিমটি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে এই মিমটি।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৯ ০৩:১৪
Share: Save:

গণেশ মুৎসুদ্দির সঙ্গে দেখা হয়নি মার্ক জু়কেরবার্গের। তবে সত্যজিৎ রায়ের কথা তিনি শুনেছেন, ভাবাটা অস্বাভাবিক নয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু ব্যবহৃত একটি অ্যাপের সৌজন্যে জনে-জনে বুড়ো হওয়ার হিড়িক দেখে আমবাঙালির কিন্তু মনে পড়ছে সত্যজিৎ রায় আর গণেশ মুৎসুদ্দি দু’জনকেই। কারও দাবি, সত্যজিতের কাহিনির গণেশ মুৎসুদ্দিকে এই অ্যাপের জনক ভাবা যেতেই পারে! অ্যাপে বুড়ো হওয়ার মাতামাতির মধ্যে আপাতত একটি বিশেষ মিম অনেকের ওয়ালে ঘুরপাক খাচ্ছে। শিল্পী মেহফুজ আলির তৈরি মিমটিতে মুখ্য চরিত্র সেই গণেশ। নতুন অ্যাপটির দলবলকে ডেকে প্রৌঢ় বলছেন, ‘‘আমি এসেছি। এমন ভাবনার কপিরাইটের দাবিতে।’’

শুনে হো-হো করে হাসছেন সত্যজিৎ-পুত্র, চিত্র পরিচালক সন্দীপ রায়। ‘‘সত্যিই তো বাবার তখনকার অনেক ভাবনাই এখন ফলে যাচ্ছে। এ সব দেখলে বাবা নিশ্চয়ই খুব মজা পেতেন।’’—বলছেন তিনি।

চিত্রনাট্য তৈরির সময়ে ছবির ‘স্টোরি বোর্ড’ আঁকা থেকে সন্দেশ-এর জন্য তুলি-কলম ধরে প্রতিকৃতি বা পোর্ট্রেট আঁকাটা সত্যজিতের কাছেও নেশার মতো ছিল। তাঁর একটি ছবির বইয়ের নামও ‘প্রতিকৃতি’। সম্ভবত এন্তার প্রতিকৃতি আঁকার অভিজ্ঞতা থেকেই ‘গণেশ মুৎসুদ্দির পোর্ট্রেট’-এর প্লট সত্যজিতের মাথায় খেলে। পোর্ট্রেট শিল্পী সুখময় সেন ও তাঁর মডেল গণেশ মুৎসুদ্দির জীবনের কথা। সুখময়ের সামনে গণেশবাবু চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন, তাঁর ২৫ বছর পরের চেহারাটা ফুটিয়ে তুলতে হবে, যা হুবহু মিলে গিয়েছিল। স্বাভাবিক নিয়মে বুড়ো হওয়া, চুল পাতলা হয়ে টাক পড়া আঁচ করা ছাড়াও গণেশবাবুর এক ধরনের সুখী-পরিতৃপ্ত জীবন কল্পনা করেছিলেন শিল্পী সুখময়। তাই মডেলের ভাবীকালের প্রতিকৃতির ঠোঁটে একটা হাসি ঝোলাতে ভুল করেননি। যা আদতে প্রতিকৃতি হয়েও ভিতরের মানুষটাকেই বার করে আনে।

বহুল ব্যবহৃত নয়া অ্যাপটিতে লোকের ছবি ধরে-ধরে তাঁদের বৃদ্ধ বানানোর প্রক্রিয়া নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে কিছু আশঙ্কাও কাজ করছে। ছবির সূত্র ধরে অ্যাপটি লোকজনের ব্যক্তিগত পরিসরে ঢুকে পড়ার মধ্যে রয়েছে এক ধরনের বিপদ-সঙ্কেত। তবে সত্যজিতের গল্প ও অ্যাপে ছবির মাধ্যমে বিভিন্ন চরিত্রের ভবিষ্যৎ দর্শনের মধ্যে ভাবনার মিলটুকু অনেকেই উপভোগ করছেন।

দেশের চিত্রকরদের মধ্যে প্রথম সারির প্রতিকৃতি-শিল্পী সঞ্জয় ভট্টাচার্যের আবার মনে পড়ছে বহু দিন আগের ছবিওয়ালা মার্কিন পত্রিকা ‘ম্যাড’-এর কথা। তাতে নামজাদাদের ভবিষ্যতের ছবি নিয়ে এমন মজা করা হত। ‘‘অ্যাপে প্রযুক্তির সাহায্যে একটি ছবিকে বিকৃত করে বলিরেখা বা পাকা চুল আনার থেকে বেশি সৃষ্টিশীলতা থাকত ওই ছবিগুলোয়।’’— বলছেন সঞ্জয়। তাঁর অভিজ্ঞতায়, ‘‘রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীদের প্রতিকৃতি আঁকার সময়ে সাধারণত তাঁদের একগুচ্ছ ছবির মধ্যে সবচেয়ে ভাল বা পছন্দসইটা ব্যবহার করা হয়। তবে অনেক সাধারণ মুখ, বাজারের আনাজবিক্রেতা থেকে পথচলতি গ্রাম্য মেয়ের প্রতিকৃতিও ছবির অনুপ্রেরণা জোগায়, তার ব্যঞ্জনা আলাদা।’’

প্রবীণ প্রতিকৃতি-বিশারদ সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় আবার মনে করেন, শুধু মুখের মিলই নয়, চাহনির ভঙ্গি, হাত-পায়ের মুদ্রা— সব কিছু দিয়েই একটি মানুষকে ক্যানভাসে জ্যান্ত করা সম্ভব। ‘‘কিন্তু অ্যাপে যেটা

হচ্ছে সেটা জ্যোতিষীগিরি! বিনোদ খন্না শেষ জীবনে রোগা হয়েছিলেন, শশী কপূর মোটা— তা হলে এ সব ছবিকে বিশ্বাস করাটা কিন্তু বোকামি।’’ — হাসছেন শিল্পী।

অন্য বিষয়গুলি:

Meme Social Media Face App Satyajit Ray
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy