প্রতীকী চিত্র।
এখনও সপ্তক সঙ্গীত সম্মেলন চলছে আমদাবাদে। কিন্তু কী করে যে চলছে, তা ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না কৌশিকী চক্রবর্তী। “ছবিতে দেখছি, পারস্পরিক দূরত্ব রেখে বসার বন্দোবস্ত হলেও ভয়ের গুমোট আবহ। এই পরিবেশে কী সঙ্গীত হয়”— মঙ্গলবার বলছিলেন কৌশিকী। তাঁর কথায়, “অনেক শিল্পী, কলাকুশলী, উদ্যোক্তা যে কী দুঃসহ সময় কাটিয়েছে, কাটাচ্ছে— তা আমার থেকে ভাল ক’জন জানে! তবু বলছি, এটা গানবাজনার আসরের সময় নয়। মানবিক কারণেই অনুষ্ঠান বন্ধ করা উচিত। গাজোয়ারি নয়, এটা সতর্কতার সময়।”
অথচ এ বারই দু’বছর বাদে সুরে-সুরে শীত তার চিরাচরিত মেজাজে ফেরার উপক্রম করছিল। ডোভার লেনের সাংবাদিক সম্মেলন উপলক্ষে গোটা দেশে মার্গসঙ্গীতের খ্যাতনামাদের কী উৎসাহ, মুম্বই, ভুবনেশ্বর থেকে শিল্পীরা কলকাতায় চলেও এসেছিলেন। সেই পরিবেশ ও রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষার প্রহর গোনাই বদলে গিয়েছে। ডোভার লেনে এ বারই প্রথম গাইবার কথা ছিল রাশিদ খান পুত্র আরমানের। আর বার্ষিক সম্মান রাশিদই পাবেন বলে ঠিক হয়েছিল। সে সব ভেস্তে গিয়েছে। মুম্বইয়ে কিছু জরুরি কাজ সেরে গত ২৯ ডিসেম্বর কলকাতায় ফিরেছেন রাশিদ। তিনি বলছেন, “ডোভার লেন ছাড়াও আমার মুম্বইয়ে অনুষ্ঠান, সিনেমার গানের রেকর্ডিং ছিল। সে-সব এখন বাতিল। কিছু করার নেই, এ মাসটা মনে হয় কলকাতাতেই কাটবে। ছেলের সঙ্গে গানের চর্চাতেই মনে হয় সময়টা কাটবে।”
ডোভার লেন শুরুর আগে তা-ও দিন কুড়ি হাতে ছিল। কিন্তু একেবারে তীরে এসে তরী ডুবেছে বেহালা ক্লাসিক্যাল ফেস্টিভ্যালের। ১০ জানুয়ারি অনুষ্ঠান শুরুর কথা। মাঠে প্যান্ডেলের বাঁশ বাঁধা হচ্ছিল। কোভিড-ঝড়ে সরকারি বিধিনিষেধ জারির পরে আসর ভেস্তে দেওয়া ছাড়া গতি নেই। বাঁশির হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া বা বেহালার এন রাজমের মতো মধ্য আশির প্রবীণ শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করারও এখন প্রশ্ন নেই। মুম্বই, দিল্লির সঙ্গে শহরের উড়ান যোগও এখন নামমাত্র। তা ছাড়া ৫০ জন দর্শক নিয়ে ধ্রুপদী সঙ্গীতের আসর অসম্ভব বলেই অভিমত উদ্যোক্তাদের। তাই তিন-চার লক্ষ টাকার ক্ষতি হলেও তাঁরা অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন। আগামী ২২ জানুয়ারি নাগাদ উত্তরপাড়ার সঙ্গীত সম্মেলনও বাতিল হয়েছে। ডোভার লেনের শিল্পীদের কারও কারও উত্তরপাড়ার সম্মেলনেও গাইবার কথা ছিল। এই সময়ে অজয় চক্রবর্তীর গান গাওয়ার কথা ছিল বেহালায় তো বটেই, আমদাবাদের সপ্তকেও। সে সবই বাতিল। অজয় বলছেন, “পরিবারের ঘোর আপত্তি। ওঁদের চটিয়ে কী করে আসরে গাইব। মানুষের সঙ্কট কাটুক! পরে ঠিক অনুষ্ঠান হবে।”
অক্টোবর-নভেম্বর থেকেই কিন্তু অতিমারির মেঘ কেটে জীবন ছন্দে ফিরছিল। সঙ্গীতের আসরও বসছিল। অজয়কন্যা কৌশিকী বলছিলেন, ‘‘ডিজিটাল কনসার্ট আর দর্শক, শ্রোতার মুখোমুখি বসে গান গাওয়ার বিরাট ফারাক। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখছিলাম, মানুষ সঙ্গীতকে কতটা ভালবাসে! কিন্তু এত লোকের মধ্যে মাস্ক খুলে গাওয়া এখন ঝুঁকির হয়ে যাচ্ছে। আমার ১২ বছরের ছেলে এখন প্রতিষেধক পায়নি, বাড়িতে বয়স্করাও রয়েছেন। সুতরাং এখন অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতেই হচ্ছে।’’ কৌশিকীর কথায়, “২০২১ সালটাকে ভুলতে পারব না। কোভিডে শুভঙ্করকাকা (তবলাশিল্পী শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়) চলে গেলেন। অপূরণীয় ক্ষতি। ২০২২-এ আর কোনও বিপর্যয় চাই না। সংক্রমণ ভয়ানক বাড়লেও কোভিডের লক্ষণ এখন অনেক মৃদু, এটাই সৌভাগ্যের।” তবে একটি টিভি শোয়ের জন্য কৌশিকীকে এখনও শুটিং সারতে হচ্ছে।
শহরে, জেলায় মেলার জলসা থেকে কর্পোরেট অনুষ্ঠান— সব কিছুই আপাতত বাতিলের তালিকায়। পর পর অনুষ্ঠান বাতিলের কথা শোনাচ্ছেন লোপামুদ্রা মিত্র বা রূপঙ্করের মতো আধুনিক গানের জনপ্রিয় শিল্পীরাও। দু’জনেই চুটিয়ে অনুষ্ঠান করছিলেন। লোপামুদ্রার কথায়, “মানুষের উৎসাহ, কাছে চলে আসার প্রবণতা সব আগের মতো। সেই সঙ্গে মাস্ক পরতে অনীহা। যা মনে হচ্ছে, অনুষ্ঠানের এই জোয়ার আর ছন্দপতন দুটোই পালা করে চলবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy