পঞ্চাশ বছর আগে বাড়ির বারান্দায় হার্বাল সালঁ শুরু করেছিলেন শেহনাজ় হুসেন। ইউরোপ থেকে রূপচর্চায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সে দিনের তরুণী প্রসাধনীতে রাসায়নিক ব্যবহারের কুফল দেখে বিরক্ত। তখনকার জনপ্রিয় রূপচর্চা পদ্ধতির বদলে ভেষজ ও প্রাকৃতিক উপকরণের সাহায্যে সৌন্দর্য চর্চা শুরু করলেন। অর্ধশতাব্দী পরে, এখনও শেহনাজ় হুসেনকে তামাম দুনিয়া ভারতের ‘বিউটি অ্যাম্বাসাডর’ বলে চেনে। কলকাতার সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ নিবিড়। এই অতিমারিধ্বস্ত সময়ে যখন রূপচর্চা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান, তখন তিনি জানালেন ত্বক-চুলে জৌলুস ফেরানোর উপায়।
• ছোট থেকেই কি সৌন্দর্যশিল্পে আগ্রহী ছিলেন?
আমাদের পরিবারটি রক্ষণশীল হলেও বাবার অনুপ্রেরণায় বড় হয়েছি প্রগতিশীল আবহাওয়ায়। আইরিশ কনভেন্টে পড়ার সময় থেকেই সাহিত্য, কবিতা, প্রকৃতি ও ভারতীয় সংস্কৃতি আমাকে টানত। নন্দনতত্ত্ব বিষয়টা ভীষণ প্রিয় ছিল। নিজে সাজতে আর অন্যকে সাজাতে ভালবাসতাম। সেখান থেকেই হার্বাল ইন্ডাস্ট্রিতে আসার স্বপ্ন দেখা। লন্ডনে হেলেনা রুবিনস্টাইন, আমেরিকায় ক্রিস্টিন ভালমি, জার্মানিতে সওয়ার্জ়কোফ-এ কসমেটোলজির প্রশিক্ষণ নিই। তাঁদের প্রক্রিয়াগুলির দোষ-গুণ ভাল করে শিখে, দেশে ফিরি। অস্ত্র করলাম আয়ুর্বেদের রূপশাস্ত্রকে। তাতেই বিশ্বজয়!
• আয়ুর্বেদে এত ভরসার কারণ?
গাছ-গাছড়ার রোগ উপশমের ক্ষমতার কথা কে না জানে! ভেষজ, খনিজ আর রত্নের স্পর্শে শরীরের রোগ সারে, জেল্লাও বাড়ে। এ রকম প্রায় ৩৭৫টি ‘স্কিন ফর্মুলা’ বা সুন্দর থাকার উপায় আবিষ্কার করেছি। ফলের রস, ফুলের নির্যাস, অক্সিজেন ক্রিম, উদ্ভিদের স্টেম সেল নিয়েও বহু পরীক্ষানিরীক্ষা করেছি। রোজ আয়ুর্বেদিক উপায়ে রূপচর্চা করলে সৌন্দর্য বহু বছর অক্ষুণ্ণ থাকবে। কিছু অসুখে ও তার চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় অনেক সময়ই ত্বক ও চুল নষ্ট হয়ে যায়। আয়ুর্বেদিক প্রডাক্ট সে ক্ষেত্রেও ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
• হাতে সাবান-স্যানিটাইজ়ার দেওয়া, মাস্ক পরা, বাড়িতে থাকা— অতিমারির প্রকোপে ত্বক-চুল আগের চেয়ে বেশি সংবেদনশীল। রূপচর্চার ট্রেন্ডও কি বদলেছে?
নিশ্চয়ই। বহু ব্র্যান্ডই ভেষজ ব্যবহার করে বিশেষ স্যানিটাইজ়ার, সাবান, ফেসওয়াশ, শ্যাম্পু, লোশন তৈরি করছে। এগুলি জীবাণুনাশের পাশাপাশি ত্বক ও চুল সুরক্ষিত ও সুন্দর রাখবে। মাস্কের ভিতর দূষিত শ্বাসবায়ু, স্যালাইভা, মিউকাস, ঘাম, তেল আটকে যায়। ফলে র্যাশ, অ্যালার্জি, অ্যাকনে, চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। এ বিষয়ে খুব বেশি সমস্যায় পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ভাল সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। না হলে মাস্ক পরা অংশের চেয়ে মুখের অন্য অংশ বেশি ট্যানড হয়ে যাবে। মুখ ভাল করে পরিষ্কার করাও মাস্ট। স্যান্ডলউড কভার ক্রিমের সঙ্গে ময়শ্চারাইজ়ার মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে তবে মাস্ক পরুন।
• ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে না দেওয়ার রহস্যটা কী?
সব ঘরোয়া টোটকার সুফল। রোজ এক গ্লাস আমলকীর রস খাওয়া, হেনার সঙ্গে আমলকী গুঁড়ো করে চুলে লাগানো আর সঙ্গে ঠিকঠাক খাবার আর যথাযথ পুষ্টি— এটুকু মানলেই চুল পেকে যাওয়া আটকানো যায়। ক্লেনজ়িং, টোনিং, ময়শ্চারাইজ়িং এবং নারিশিং ক্রিম ব্যবহারের রুটিন রাখলে ত্বক ভীষণ ভাল থাকে। অ্যালো ভেরা, লেমন ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার ত্বকের জন্য খুব সহায়ক। তার পর টোনার। আমি অবশ্য রোজই ফেসিয়াল মাস্ক ব্যবহার করি। আর এখন তো বিয়ের সিজ়ন শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই নিয়মিত ফেসিয়াল করুন, ত্বকের যত্ন নিন। এ সময়ে চুলের পরিচর্যাও খুব জরুরি। সপ্তাহে দু’বার খাঁটি নারকেল তেল (শুষ্ক চুলে) বা জলপাই তেল (তৈলাক্ত চুলে) গরম করে স্ক্যাল্প ও চুলে লাগান। তার পর গরম জলে ভেজানো তোয়ালে মাথায় পাঁচ মিনিট জড়িয়ে রাখুন। ঠান্ডা হয়ে গেলে আবার করুন। চার-পাঁচ বার এই টাওয়েল ট্রিটমেন্ট করুন। চুল তেলের পুষ্টি পাবে। সপ্তাহে এক বার ডিম বা দই দিয়ে হেনা করুন চুলে। শ্যাম্পুর পর চায়ের লিকারে লেবুর রস মিশিয়ে চুল ধুয়ে নিন। নিমেষে চুল ফুরফুরে, চিকন হবে।
• এটুকু যত্নেই সুন্দর থাকা যায়?
সৌন্দর্য একটি সামগ্রিক ধারণা। শারীরিক সৌন্দর্যের সঙ্গে হৃদয়ের নির্মলতা ও মস্তিষ্কের দ্যুতি মিললে তবেই সেই সৌন্দর্য সম্পূর্ণ হয়। আমি তো প্রকৃতির নানা উপকরণ মিশিয়ে বহিরঙ্গে সুন্দর হয়ে ওঠার পথটা দেখিয়ে দিলাম। এ বার নিজের মধ্যে মিশিয়ে নিন গুণের দ্যুতি।
মডেল: উষসী রায়,
মেকআপ: সুমন গঙ্গোপাধ্যায়, ছবি: শুভদীপ সামন্ত
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy