Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Corona virus

রেমডেসি‌ভির থেকে ফ্যাভিপিরাভির, করোনা চিকিৎসায় দিশা দেখাচ্ছে এ সব ওষুধ

কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসায় কিছু ওষুধ ব্যবহার করে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভাল ফল মিলেছ।

অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির সার্স কোভ ২ ভাইরাসের বংশ বৃদ্ধি থামিয়ে দিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিচ্ছে। ফাইল ছবি।

অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির সার্স কোভ ২ ভাইরাসের বংশ বৃদ্ধি থামিয়ে দিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিচ্ছে। ফাইল ছবি।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২০ ১৩:০০
Share: Save:

আক্রান্তের গ্রাফটা তরতর করে উপরের দিকে উঠছে। এদিকে রাজ্যে কোভিড পজিটিভের সংখ্যা একদিনে দু’হাজার পেরিয়ে গিয়েছে, বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। বাদ যাচ্ছেন না করোনার প্রথম সারির যোদ্ধারা। বিজ্ঞানীরা লড়ে যাচ্ছেন নভেল করোনা ভাইরাসের ওষুধ আর টিকার খোঁজে। ট্রায়াল চলছে একের পর এক, কিন্তু সুনির্দিষ্ট ওষুধ বা ভ্যাকসিনের খোঁজ পাওয়া যায়নি এখনও।

বিশেষজ্ঞদের মত, বিশ্বজুড়ে অতিমারি সৃষ্টিকারী ভাইরাস ধ্বংস করার ওষুধ বা আটকে দেওয়ার টিকার গবেষণা এখনও প্রাথমিক স্তরে। তবে কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসায় কিছু ওষুধ ব্যবহার করে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভাল ফল পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু সেই ওষুধগুলির বৈধতা পাবার জন্য আরও ট্রায়াল দরকার বলে বিশেষজ্ঞদের মত। কোভিড-১৯ নির্ণয় করার পর চিকিৎসকদের প্রথমেই ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেন।

জিলিড সায়েন্সেস নামে আমেরিকান বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির তৈরি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির সার্স কোভ ২ ভাইরাসের বংশ বৃদ্ধি থামিয়ে দিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। ওষুধটির এই কার্যকারিতার কথা জেনে এফডিএ জরুরি ভিত্তিতে এই ওষুধ প্রয়োগে সম্মতি দিয়েছে। বেশ কিছু কোভিড রোগীর উপর রেমডেসিভির প্রয়োগ করে দেখা গেছে এর ফলে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।

অক্সিজেন লেভেল কমতে শুরু করলে ডেক্সামেথাসন দেওয়া হয়। ফাইল ছবি

নভেল করোনা ভাইরাসের রোগীর সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরতে কম বেশি ১৫ দিন সময় লাগে। কিন্তু অ্যান্টিভাইরাল ওষুধটি ট্রায়ালভিত্তিক ভাবে প্রয়োগের পর রোগী ১১ দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের দাবি, রেমডেসিভির প্রয়োগে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করে হাসপাতালে থাকার মেয়াদ কমানোর পাশাপাশি এই অ্যান্টিভাইরাল মৃত্যুর হারও কমাতে সফল।

আরও পড়ুন: কোন মাস্ক পরবেন? ক’দিন পরবেন? কী ভাবে ব্যবহার করবেন?

যদিও মৃত্যুর হার কমিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটি প্রতিষ্ঠিত হয়নি, কিন্তু বিজ্ঞানীদের আশা আরও কিছুদিন এই ওষুধটি গুরুতর অসুস্থ রোগীদের উপর প্রয়োগ করে মৃত্যুহার কমাতে এর কার্যকারিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির আবিষ্কৃত হয়েছিল ইবোলা ভাইরাস ও হেপাটাইটিস – সি- রোগীদের জন্য।

আরও পড়ুন: যক্ষ্মার টিকায় কি জব্দ হতে পারে করোনা? কী বলছেন বিজ্ঞানী ও ডাক্তাররা?

বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায় এই প্রসঙ্গে জানালেন, কোভিড ১৯ এর উপসর্গ নিয়ে রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে প্রয়োজনীয় টেস্ট করিয়ে নিয়ে ট্রিটমেন্ট প্রোটোকল তৈরি করা হয়। শরীরে অক্সিজেনের চাহিদা কমে গেলে অ্যান্টিকোয়াগুলেন্ট দেবার সঙ্গে সঙ্গে প্রোন পজিশনে অক্সিজেন দেওয়ার পাশাপাশি অ্যান্টিভাইরাল রেমডেসিভির দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে রোগীদের বেশিরভাগই সেরে উঠছেন ঠিকই বললেন যোগীরাজ রায়, কিন্তু মৃত্যু হার কমছে না। শরীরের অক্সিজেন লেভেল কমে গিয়ে সাইটোকাইন স্টর্ম শুরু হতে চলেছে আন্দাজ করতে পারলে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রোগীকে ওষুধ দিয়ে সামলে দেবার চেষ্টা করতে হয়। এক্ষেত্রে দেরি হলে রোগীর প্রাণ সংশয়ের ঝুঁকি থেকেই যায়।

ফ্যাভিপিরাভির নামে আর একটি অ্যান্টিভাইরালও কোভিড-১৯ এর রোগীদের দেওয়া হচ্ছে। এটি মূলত ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের ওষুধ। সমীক্ষায় জানা গেছে এই অ্যান্টিভাইরাল ওষুধটিও নভেল করোনা ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে। ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিস্ট জ্যোতিষ্ক পাল জানালেন, কোভিড ১৯ পজিটিভ হলে এবং অক্সিজেন লেভেল কমতে শুরু করলে ডেক্সামেথাসন দেওয়া হয়। মডারেট থেকে সিভিয়ার রোগীর শারীরিক অবস্থা বুঝে নির্দিষ্ট মাত্রায় রেমডেসিভির অ্যান্টিভাইরাল দেওয়া হয়। অনেকে ফ্যাভিপিরাভির দিলেও কলকাতার বেশ কিছু চিকিৎসক এটি ব্যবহার করেন না। এছাড়া যখন ক্লিনিকাল আই ও পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে সন্দেহ হয় যে রোগীর অবস্থা সিভিয়ার হতে চলেছে তখন প্লাজমা দিলে ভাল কাজ হয়, বললেন জ্যোতিষ্ক বাবু।

প্রোন পজিশনে অক্সিজেন দেওয়ার পাশাপাশি অ্যান্টিভাইরাল রেমডেসিভির ব্যবহার হচ্ছে। ফাইল ছবি

কলকাতার সব হাসপাতালে এখনও পর্যন্ত কোভিড ১৯ থেকে সেরে ওঠা মানুষের প্লাজমা দেওয়া চালু হয়নি। প্রথমত কোভিড ১৯ এর প্লাজমা ব্যাঙ্ক পর্যাপ্ত নয়, দ্বিতীয়ত প্লাজমা দেওয়ার মত মানুষের সংখ্যাও খুব বেশি নেই। জ্যোতিষ্ক পাল জানালেন যে কোভিড পজিটিভ হলে তো বটেই রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্যে ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি এবং জিঙ্ক সাপ্লিমেন্ট ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী জানালেন উত্তরবঙ্গ সহ জেলার কোভিড হাসপাতালগুলিতেও নির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনে স্টেরয়েড ওষুধ, ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট ও অ্যান্টিভাইরাল দিয়ে রোগীর চিকিৎসা করে উল্লেখযোগ্য ভাল ফল পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে আলিপুরদুয়ারের কোভিড হাসপাতালে নভেল করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের এই সব ওষুধ দিয়ে সুস্থ করার হার যথেষ্ট ভাল।

আরও পড়ুন: হাঁপানি বা ফুসফুসের ক্রনিক অসুখ থাকলে জ্বর হলে সাবধান

ক্রিটিকাল কেয়ারের চিকিৎসক দীপঙ্কর সরকার বললেন কোন রোগীর কী ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন তা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকই বোঝেন। অঙ্কের নিয়মে গাইডলাইন মেনে চিকিৎসা করলেই যে সংকটাপন্ন রোগী দ্রুত সেরে উঠবেন এমনটা নয়। রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী কিছু ওষুধের হেরফের করতে হতে পারে। চার জন চিকিৎসক একটা বিষয়ে একমত, যে হারে রোগ ছড়িয়ে পড়ছে তাতে সাবধানতা মেনে চলা সবার আগে দরকার।

থ্রি লেয়ার মাস্ক পরে বাড়ির বাইরে যেতে হবে। বাজার দোকান সহ ভিড় জায়গা এড়িয়ে চলার পাশাপাশি বদ্ধ জায়গায় একাধিক মানুষ একসঙ্গে থাকা এড়িয়ে চলতে হবে। বাড়িতে তৈরি পুষ্টিকর ও হাই প্রোটিন ডায়েট খেতে হবে। কোনও সমস্যা না থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি এবং জিঙ্ক সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যেতে পারে। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে জল ও ফল খেলে ভাল হয়।বাইরে থেকে ফিরে ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই নুন জলে গার্গল করতে হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy