Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

সীমানা বাড়াচ্ছে মারণজ্বর, উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী

এতদিন ধারণা ছিল জাপানি এনসেফ্যালাইটিস ভাইরাস বা জলবাহিত এন্টেরো ভাইরাসই এনসেফ্যালাইটিস রোগের কারণ। কিন্তু মালদহ ও বিহারের মুজফফ্রপুরে এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত বেশ কিছু রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যারা সম্পূর্ণ অন্য কারণে এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়েছেন। এই নতুন ধরনের এনসেফ্যালাইটিস টি পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে বলে মনে করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৪ ০২:৪১
Share: Save:

এতদিন ধারণা ছিল জাপানি এনসেফ্যালাইটিস ভাইরাস বা জলবাহিত এন্টেরো ভাইরাসই এনসেফ্যালাইটিস রোগের কারণ। কিন্তু মালদহ ও বিহারের মুজফফ্রপুরে এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত বেশ কিছু রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যারা সম্পূর্ণ অন্য কারণে এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়েছেন। এই নতুন ধরনের এনসেফ্যালাইটিস টি পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে বলে মনে করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।

সোমবার সংসদে এনসেফ্যালাইটিস প্রসঙ্গে আলোচনায় নতুন প্রজাতির ওই এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণের কথা জানান কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হষর্বর্ধন। মন্ত্রীর এদিনের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার এনসেফ্যালাইটিস এখন শুধু মাত্র পশ্চিমবঙ্গ কিংবা অসমের সমস্যা নয়, গোটা পূর্ব ভারতের সমস্যা। রোগ ছড়িয়েছে বিহার এবং পূর্ব উত্তর প্রদেশেও। যে ভাবে ওই রোগ নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে তাতে তাতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক উদ্বিগ্ন। ওই রোগ প্রতিরোধে নতুন পরিকল্পনা না নিতে পারলে যে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন মন্ত্রকের অনেকেই। এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে তাঁর সেই উদ্বেগের কথাই এদিন সংসদে দাঁড়িয়ে জানালেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

জাপানি এনসেপ্যালাইটিস রুখতে নির্দিষ্ট টিকা রয়েছে। সেই টিকা সাধারনত দেওয়া হয় ১ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের। কিন্তু এবার মৃতদের তালিকায় বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি থাকাতেই কেন্দ্রীয় সরকারের চিন্তা অনেক বেড়ে গিয়েছে। হর্ষবর্ধন এদিন বলেন, “গত কয়েক বছরের এপিডেমিওলজিক্যাল তথ্য বলছে, এই রোগে প্রাপ্তবয়স্কদেরও প্রাণহানি হচ্ছে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ ও অসমে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের কারণে একাধিক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি মারা গিয়েছেন।” রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে পশ্চিমবঙ্গ সফরেও যাবেন বলে এদিন জানিয়েছেন হর্ষবর্ধন। এর পরেই তিনি এনসেফ্যালাইটিসের নতুন প্রজাতির প্রসঙ্গ তোলেন। মন্ত্রী বলেন, “সম্প্রতি মালদহ ও বিহারের মুজফফ্রপুরে এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত বেশ কিছু রোগীর সন্ধান পাওয়া যারা সম্পূর্ণ অন্য কারণে এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়েছেন।” সেই সংক্রমণের কারণ ঠিক কী তা জানার চেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বাস্ত্য মন্ত্রক।

এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ নিয়ে লোকসভায় হওয়া বিতর্কে কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রকে সম্পূর্ণ অসম্পূর্ণ তথ্য পাঠাচ্ছে। আমি তাই স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে পশ্চিমবঙ্গ সফর করার অনুরোধ করেছি। ওই রোগের আঁতুড়ঘর হল জলপাইগুড়ি। কিন্তু সেখানকার মেডিক্যাল কলেজের সার্বিক পরিকাঠামোর যে কী ভয়াবহ দুরবস্থা তা খোদ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গিয়ে দেখে আসুক। রাজ্য ও কেন্দ্র এখনই সতর্ক না হলে পড়ে এই রোগ রোখা মুশকিল হয়ে পড়বে।”

পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষিতে হর্ষবর্ধন জানান, “উত্তরবঙ্গে এনসেফ্যালাইটিস ছড়িয়ে পড়ার খবর আসতেই পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দলকে সেখানে পাঠানো হয়। পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সাহায্য করতে রাম মনোহর লোহিয়া হাসাপাতালের চিকিৎসক ও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের সদস্যদেরও পাঠানো হয়েছে। এছাড়া আমি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে সব ধরনের সাহায্যেরও আশ্বাস দিয়েছি।” তাঁর দাবি, ইতিমধ্যেই বাঁকুড়া ও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে শিশুদের চিকিৎসার জন্য ইনসেন্টিভ কেয়ার ইউনিট গড়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সাহায্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভেক্টর কন্ট্রোল ও সার্ভিল্যান্স-র জন্য রাজ্য সরকারকে পাঁচ কোটি টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে বলে জাবি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

জীবাণুবিজ্ঞানী বা পতঙ্গবিদদের মতেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এই রোগ রুখতে সচেতনার উপর জোর দিতে চাইছে। মন্ত্রক মনে করছে, একা তাদের পক্ষে এই রোগ রোখা অসম্ভব। স্বাস্থ্য ছাড়াও পরিশ্রুত পানীয় জল, যথাযথ শৌচাগারের ব্যবস্থা কিংবা স্বচ্ছ বাসস্থান না হলে এই রোগের প্রকোপ থামানো কঠিন। দরকার রোগ সম্বন্ধে সচতেনা বৃদ্ধি। এর জন্য অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের আরও বেশি কাজে লাগানোর জন্য রাজ্যগুলিকে পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। হর্ষবর্ধনের কথায়, “পরিশ্রুত পানীয় জল ব্যবহার করলে এন্টেরো ভাইরাস রোখা যায়। তেমনি উন্নত পদ্ধতিতে শূয়োর প্রতিপালন বা শৌচগারের ব্যবহার ও সঠিক নিকাশিব্যবস্থা থাকলে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসকে রোখা সম্ভব হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

encephalitis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy