কম ঘুমে বাড়ে ওজন।—ছবি : শাটারস্টক
তার মানে এই নয় যে, যত বেশি ঘুমবেন তত ওজন কমবে। আবার এমনিই যাঁদের ঘুম কম, তাঁদেরও কম ঘুমের কারণে অন্তত ওজন বাড়ে না। কিন্তু ঘুমতে চেয়েও যদি না পারেন ও তার ফলে গ্রাস করে ক্লান্তি ও ঝিমুনি, তবে সমস্যা আছে। সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গেছে, দিনে ৫ ঘন্টার কম বা ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমলে শরীরে এমন সব পরিবর্তন হয় যে তার জেরে ওজন বাড়ে অনেক সময়। কেন? ভেবে দেখুন, রাতে ঘুম হয়নি অথচ হাতে প্রচুর কাজ, এ রকম অবস্থায় আমরা কফি বা কোল্ড ড্রিঙ্ক খেয়ে চাঙ্গা থাকার চেষ্টা করি তো? ফাস্টফুড–জাঙ্কফুড বেশি খাই। বিভিন্ন স্টাডি থেকে জানা গেছে, নিয়মিত কম ঘুম হলে হাই ক্যালোরি খাবারের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে। ফলে বাড়ে ওজন। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এর মূলে রয়েছে ব্রেনের কিছু কারসাজি।
যত দোষ ব্রেনের
যত কম ঘুম, তত ভুল সিদ্ধান্ত। স্বাভাবিক অবস্থায় হয়তো একটা মিষ্টিতেই সামলে নিতে পারেন, কিন্তু ঘুমের অভাব হলে তা হয় না অনেক সময়। কারণ ক্লান্ত ব্রেন এমন কিছু চায়, যা তাকে তৃপ্তি দেবে। আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন-এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ঘুম কম হলে গভীর রাতে টুকটাক খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। সে খাবারও আবার সচরাচর কার্বোহাইড্রেটে ভরপুর থাকে। ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর বিজ্ঞানীরা আবার দেখেছেন যে, যাঁরা দৈনিক ৮ ঘণ্টা ভাল ভাবে ঘুমন, তাঁদের তুলনায় যাঁরা কম ঘুমন তাঁদের খাবারে চর্বির পরিমাণ থাকে প্রায় দ্বিগুণ। মোদ্দা কথা, কম ঘুমলে চর্বি ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ হাই–ক্যালোরি খাবার খাওয়ার চাহিদা বাড়ে। তার পাশাপাশি বিপদ বাধায় হরমোনও।
হরমোনের কারসাজি
"কম ঘুমলে খিদের হরমোন ঘ্রেলিনের পরিমাণ বাড়ে। খিদে বেড়ে যায়। কমে লেপটিনের পরিমাণ, যার কাজ ব্রেনকে পেট ভরে যাওয়ার সংকেত দেওয়া। ফলে খাওয়া বাড়ে। আবার কম ঘুমের ফলে শারীরিক–মানসিক চাপ বাড়লে ক্ষরিত হয় স্ট্রেস হরমোন কর্টিজোল। ক্যালোরি খরচ কমে যায়। ওজন বাড়ার এও এক কারণ", জানালেন হরমোন বিশেষজ্ঞ সতীনাথ মুখোপাধ্যায়। শিকাগোর বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মাত্র ৪ দিন কম ঘুমলেই ইনসুলিনের কার্যকারিতা প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যায়। ফলে ডায়াবিটিস ও মেদবাহুল্যের আশঙ্কা বাড়ে। কাজেই ঘুমের সঙ্গে কোনও সমঝোতা নয়।
ভাল ঘুমের জন্য
• বিছানায় যাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে কম্পিউটার, মোবাইল ও টিভি বন্ধ করুন।
• কাজের দুশ্চিন্তা মাথা থেকে বার করে তবে শুতে যান।
• ঘুমনোর ঠিক আগে উষ্ণ জলে স্নান করা, বই পড়া, গান শোনা বা মেডিটেশনের মতো কোনও একটা অভ্যাস করে ফেলতে পারলে ভাল।
• ঘুমতে যাওয়া ও সকালে ওঠার সময় মোটামুটি ঠিক রাখুন।
• শোওয়ার দেড়–দু'ঘণ্টা আগে হালকা খাবার খান। বেশি খেলে ঘুমের সমস্যা হবে।
• ঘুমনোর ঠিক আগে মদ্যপান করবেন না। অম্বল হলে ঘুম আসতে অসুবিধে হবে।
• বেলা দুটোর পর থেকে চা–কফি–কোলা–চকোলেট খাবেন না। ক্যাফেইনের রেশ ৫–৬ ঘণ্টা পর্যন্ত শরীরে থেকে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
• অন্ধকারে ঘুমের হরমোন মেলাটোনিনের ক্ষরিত হয়। কাজেই আলো নিভিয়ে দিন।
• কম ঘুমের ক্লান্তি কমাতে ক্যাফেইন কাজ করে ম্যাজিকের মতো। সে সময় কফি বা কোলা–র বদলে স্বাস্থ্যকর ক্যাফেইনের উৎস কালো চা বা ডার্ক চকোলেট খেলে সব দিক রক্ষা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy